সোনাচূড়ার একটি বুথে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের বছর চারেক আগে থেকেই বামেরা ‘ব্রাত্য’ হয়ে উঠেছিল নন্দীগ্রামে। সেটা ২০০৭ সাল। রাজ্যে দ্বিতীয় দফার ভোটের দিন বৃহস্পতিবার জমি আন্দোলনের সেই ধাত্রীভূমিতে প্রায় বাধাহীন ভাবে ঘুরলেন বামপ্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। পৌঁছলেন বেশির ভাগ বুথেই।
১৩ বছর আগের স্মৃতি এখনও দুঃসহ নন্দীগ্রামের কাছে। তাকে আগাপাশতলা জড়িয়ে আছে নানা হিংসার ঘটনা। যার জেরে এক সময় বামেদের ওই দুর্গ ধসে পড়েছিল। ঘরছাড়া হয়েছিলেন প্রচুর বাম কর্মী-সমর্থক। বৃহস্পতিবার ভোট দিল নন্দীগ্রাম। কিন্তু নন্দীগ্রামে বাম বিরোধিতার সেই উত্তাপ কি কমেছে? ২০০৭ সালের পর পিছু হঠতে হঠতে এক সময় বামেদের কাছে দুর্ভেদ্য হয়ে উঠেছিল নন্দীগ্রাম। বৃহস্পতিবার অবশ্য ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা হল বামপ্রার্থীর। ভোটের দিন ‘ভয়ডরহীন’ হয়েই নন্দীগ্রামে ঘুরে বেড়ালেন তিনি।
সকাল ১০টা নাগাদ নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ডের কাছে সিপিএমের যে দলীয় দফতর রয়েছে সেখান থেকে বেরোন মীনাক্ষী। চৌরঙ্গী, হাজরাকাটা, ভূতার মোড়, গড়চক্রবেড়িয়া হয়ে সোনাচূড়া পৌঁছন তিনি। ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন বুথে। এর পর সাময়িক বিরতি নিয়ে ফের বেরিয়ে পড়েন। পৌঁছন গোকুলনগরের তেখালিতে। বেলা ৩টে নাগাদ মীনাক্ষী ফেরেন নন্দীগ্রামে দলীয় দফতরে।
বয়ালে তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে যখন দ্বৈরথ তুঙ্গে তখন মীনাক্ষী পায়ে পায়ে পৌঁছে গিয়েছেন নন্দীগ্রাম এক নম্বর ব্লকের বিভিন্ন বুথে, যেখানে এক সময় বামেদের জন্য অপেক্ষা করে থাকত বিদ্বেষ-বাষ্প। অথচ বৃহস্পতিবার সেই সব এলাকাতেই মীনাক্ষী ঘুরে বেড়িয়েছেন অবাধে। তেমনই বিধানসভা কেন্দ্রের সব বুথে সিপিএম এজেন্ট দিতে পেরেছে বলেও জানিয়েছেন মীনাক্ষী। যা এক সময় আক্ষরিক অর্থেই ‘অসম্ভব’ ছিল বামেদের কাছে। আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে মীনাক্ষীর দাবি, ‘‘আগের তুলনায় মানুষ ভোট কিছুটা দিতে পেরেছেন। এখনই বলতে পারছি না যে, সব মানুষ ভোট দিয়েছেন। সব মানুষ নির্দ্বিধায়, বিনা আতঙ্কে, বিনা প্রভাবিত হয়ে ভোট দিতে পেরেছেন, তা-ও বলতে পারব না। কারণ বিগত ১০ বছরে যে ভাবে তৃণমূল এবং তৃণমূল থেকে গিয়ে যারা বিজেপি, তাদের যা সন্ত্রাস ছিল, সেই সন্ত্রাসের কারণে এখানে একটা দমবন্ধ করা পরিবেশ।’’ মমতা এবং শুভেন্দুকে বিঁধে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীর বক্তব্য, ‘‘যাঁদের এত দিন হেভিওয়েট বলা হচ্ছিল, তাঁরা আজ কোথাও যেন লাইটওয়েট হয়ে গেলেন। সারা নন্দীগ্রাম ঘুরলাম। ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও পাঁচ-ছশো-সাতশো জমায়েত করা এটাকে যদি শান্তিপূর্ণ ভোট বলেন, তা হলে শান্তিপূর্ণ ভোট।’’
পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের কুলটির চলবলপুর গ্রামের বাসিন্দা মীনাক্ষী। বৃহস্পতিবার দিন ভর যখন নন্দীগ্রাম চষে বেড়াচ্ছেন তিনি তখন তাঁর উৎকণ্ঠিত পরিবারের সদস্যদের চোখ টিভির পর্দায়। মেয়ে কোথায় কোথায দৌড়ে বেড়াচ্ছে সে দিকে ক়ড়া নজর রেখে দিয়েছিলেন মীনাক্ষীর বাবা মনোজ মুখোপাধ্যায়। তিনি সিপিএমের কুলটি এরিয়া কমিটির সম্পাদকও বটে। বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন মীনাক্ষীর আর এক সতীর্থ তথা সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী ঐশী ঘোষ। ঐশীর সঙ্গী হয়েছিলেন মনোজও। সেই মনোজই বললেন, ‘‘প্রতি দিন সকাল ৬টায় মীনাক্ষী ফোন করে। আজও করেছিল। টিভির পর্দায় যা দেখছি তাতে নিশ্চিত জয় মীনাক্ষীরই হবে।’’ মীনাক্ষীর খোঁজখবর নিচ্ছিলেন মা পারুলও। তিনিও সিপিএমের একনিষ্ঠ সদস্য। পারুল বললেন, ‘‘একটু ভয় পাচ্ছিলাম। যাই হোক ও জিতুক এটাই আমি চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy