জোড়া ফুল বনাম পদ্মফুলের ‘পোস্টার’ লড়াই
‘দিদি’ থেকে ‘দুহিতা’। নীলবাড়ির লড়াইয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তৃণমূল প্রচারের নতুন ট্যাগলাইন বানিয়েছে— ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’। ক’দিন আগে সেই প্রচারাভিযান শুরু হলেও শুক্রবার নির্বাচন কমিশন ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরে পরেই নতুন করে সেই সুরে আক্রমণ শানিয়েছেন মমতা। সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছেন, ‘‘মিস্টার নরেন্দ্র মোদী, মিস্টার অমিত শাহ, আপনাদের বলে দিচ্ছি, বাংলার মানুষ এর জবাব দেবেন! সারা দেশে আমিই একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। এক মহিলাকে এত ভয়!’’ অর্থাৎ, লড়াই এক মহিলা বনাম বহিরাগত পুরুষ বাহিনীর।
ঘটনাচক্রে, তার আগে শুক্রবার সকালেই সক্রিয় হয়েছিল তৃণমূলের নেটমাধ্যম। যেখানে ঠারেঠোরে জানানো হয়েছিল, এক মহিলার মোকাবিলা করতে গোটা বিজেপি উঠেপড়ে লেগেছে। তৃণমূলের টুইটারে যে পোস্টার ব্যবহার করা হয়েছিল, তার এক পাশে হাতজোড় করা সৌম্যকান্তি মমতার ছবি। উপরে লেখা ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’। তার পাশে ৯টি খোপে ৯টি মুখ। তাঁরা ভিনরাজ্য থেকে বাংলায় ভোট সামলানো ও প্রচারে আসা ৯ জন পুরুষ। যাঁদের বরাবর ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়ে আক্রমণ করে থাকে তৃণমূল। উপরের সারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা। দ্বিতীয় সারিতে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, মধ্যপ্রদেশের নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। একেবারে নীচের সারিতে আরও তিনটি মুখ— সর্বভারতীয় যুব মোর্চা সভাপতি তেজস্বী সূর্য, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব এবং কেন্দ্রীয় আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। প্রসঙ্গত, এঁদের মধ্যে কৈলাস এবং অমিত বাংলায় পর্যবেক্ষক ও সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন। বাকি মোদী, শাহ, নড্ডা ঘনঘন আসছেন-যাচ্ছেন। ফড়নবিশ, তেজস্বী, বিপ্লব ইতিমধ্যেই বাংলায় ভোটের সফর সেরেছেন। আগামী মঙ্গলবার আসছেন যোগী।
শুক্রবার রাত কাটতে না কাটতেই পাল্টা পোস্টার-আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। দলের টুইটার হ্যান্ডলে প্রকাশিত হয়েছে পাল্টা পোস্টার। যার বক্তব্য— ‘বাংলা তার মেয়েকেই চায়, পিসিকে নয়’। তৃণমূল তথা বাংলা মমতাকে ‘দিদি’ হিসেবে চিনলেও বিজেপি তাঁকে কখনও ‘পিসি’, কখনও ‘ফুফা’ বলে আক্রমণ করে। সেটাই উঠে এসেছে রাজ্য বিজেপি-র টুইটের নিশানায়। সেখানে একদিকে মমতার একটি আক্রমণাত্মক মুখে ছবি রেখে অন্য দিকে রাজ্য বিজেপি-র ৯ মহিলা মুখকে রাখা হয়েছে। প্রথমেই রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। এর পর হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, রাজ্যসভার সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। বিজেপি মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল ছাড়াও ছবি রাখা হয়েছে রাজ্য কমিটির সদস্য ভারতী ঘোষ, মাফুজা খাতুন, শ্রীরূপা মিত্র, তনুজা চক্রবর্তী ও ফাল্গুনি পাত্রের মুখ। বিজেপি-র পোস্টারের নিহিত অর্থ, মহিলার মোকাবিলায় মহিলারাই।
ঘটনাচক্রে, দু’টি পোস্টারই আড়ে-বহরে-রঙে প্রায় একইরকম। তাদের অঙ্গসজ্জাও প্রায় এক। শুধু তৃণমূলের পোস্টারে বাংলা হরফে ইংরেজি লেখা হয়েছে। আর বিজেপি-র পোস্টারে বাংলা লেখা হয়েছে বাংলা হরফে। নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে থেকেই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে নেটমাধ্যমের দেওয়ালও জমে উঠছে জোড়া ফুল বনাম পদ্মফুলের লড়াইয়ে। শনিবার তারই এক নমুনা দেখল ভোটমুখী পশ্চিমবঙ্গ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy