উচ্ছাস কী বাঁধ মানবে। ফাইল চিত্র।
আশা ছিল, ‘দাদা জিতবে।’ কিন্তু করোনা তাঁকে হারিয়ে দিল!
কোভিড আক্রান্ত হয়ে ভোটের দিন কয়েক পরেই মৃত্যু হয়েছে খড়দহের তৃণমূল প্রার্থী কাজল সিংহের। আর তাই, করোনার শিকার যেন আর কেউ না হন, তার জন্য ‘দাদা’র অনুগামীদের কাছে ভাই তাপস সিংহ বারবার অনুরোধ করছেন, ‘‘আনন্দ-উচ্ছ্বাস যাই থাকুক, ২-মে কোভিড বিধি মেনে চলুন। অহেতুক ভিড়ে যাবেন না।’’ মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোনও বিজয় মিছিল করা যাবে না। কিন্তু প্রশ্ন হল, বঙ্গের ‘ভাগ্য-গণনা’য় শামিল হতে চেয়ে যে ভিড় গণনা কেন্দ্রের সামনে উপচে পড়ে, কিংবা পাড়ার মোড়ে জটলা করে প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের মার্কশিট যে ভাবে কাটা-ছেঁড়া করা হয় এবং রাতে দলীয় কার্যালয়ে মাংস-ভাতের যে আয়োজন হয় তাতে বেড়ি পরাবে কে?
চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ‘‘সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। বিজয় মিছিল হবে না, খুব ভাল সিদ্ধান্ত। কিন্তু কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ পাবে, তা কিন্তু মারাত্মক হতে পারে।’’
চিকিৎসকরা এ-ও বলছেন, মনে রাখতে হবে, ভিড়-জমায়েত সংক্রমণ ছড়ানোর অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। করোনা আক্রান্তে রাজ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। তাই এ দিন নৈহাটি, জগদ্দল, বীজপুর-সহ বিভিন্ন এলাকার মধ্যে বৈঠক করে, সকলকে ২ মে অযথা গণনাকেন্দ্রের বাইরে ভিড় করতে বারণ করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন নৈহাটির তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক।
অনেকটা একই পথে হাঁটছে বিজেপিও। ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দল থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, গণনার পরে পাঁচ দিন কোনও মিছিল-জমায়েত করা যাবে না। সবাইকেই বলা হয়েছে, গণনাকেন্দ্রের বাইরে ভিড় না করতে। বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও বার্তা পাঠানো হচ্ছে।’’ জেলার আর এক বিজেপি প্রার্থী সব্যসাচী দত্ত স্পষ্ট জানিয়েছেন, অত্যুৎসাহ দেখিয়ে গণনাকেন্দ্রের বাইরে ভিড় করতে বারণ করা হয়েছে। যদি কেউ কথা না শোনেন, তাঁর দায়িত্ব তিনি নিজে নেবেন।
রাজ্যের কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের উপদেষ্টা চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, ‘‘ভোটের হোলি খেলতে গিয়ে আমরা করোনার হোলি খেললাম। নিজেরা করোনাকে ঘরের দরজায় ডেকে এনেছি। আগামী ১৫-মে নাগাদ রাজ্যে দৈনিক আক্রান্ত সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছবে।’’
সংক্রমণ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পরীক্ষা ও সংক্রমণের অনুপাতে ‘পজ়িটিভিটি রেট’ (নমুনা পরীক্ষা ও আক্রান্তের অনুপাত) লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোট ঘোষণার দিন রাজ্যে করোনার ‘পজ়িটিভিটি রেট’ ছিল ১.০৭ শতাংশ। সপ্তম দফার ভোট অর্থাৎ ২৬ এপ্রিল সেই হার ছিল ৩২.৯৩ শতাংশ। ফলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে পরিস্থিতি কত দ্রুত বদলাচ্ছে।
এখন পারতপক্ষে বাড়ি থেকে না বেরনোই ভাল বলে মন্তব্য করে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। শয্যা নেই, অক্সিজেন নেই। তাই প্রথম থেকে সতর্ক থাকলে বিপদে পড়তে হবে না।’’ গণনা শান্তিপূর্ণ করার জন্য নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিক, বলছেন সাংসদ সৌগত রায়। তিনি এটাও জানাচ্ছেন, করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করে কর্মীদেরও নির্দেশ দেওয়া হবে।
গত সোমবারই সংযুক্ত মোর্চার প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে লিখিত আবেদনে জানান, গণনা কেন্দ্রের বাইরে জমায়েত কড়াকড়ি ভাবে বন্ধ করা হোক। তাতে ছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেবও। এ দিন নির্বাচন কমিশনের বিজয় মিছিল বন্ধের ঘোষণার পরে তিনি বলেন, ‘‘সর্বত্র কোভিড বিধি মেনে চলার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। কর্মীদের বলেছি অহেতুক জমায়েত নয়, সকলে বাড়িতে থাকবেন। প্রয়োজনে আমরা যোগাযোগ করব। মনে রাখতে হবে দল জিতুক, করোনা না জেতে।’’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, যে কোনও জমায়েত অতিমারির ক্ষেত্রে বিপজ্জনক। কারণ, জমায়েতের কারণেই সংক্রমণ লাফিয়ে-লাফিয়ে বৃদ্ধি পায়। তিনি বলেন, ‘‘করোনাকে রুখতে গেলে ভোট বা বিয়ে-অনুষ্ঠান বাড়ি, যে কোনও জমায়েত বন্ধ হওয়া দরকার।’’
কিন্তু প্রশ্ন হল, ভোট-সৈনিকরা কথা শুনবেন তো? চিকিৎসকের একাংশ বলছেন, ‘‘তা না হলে কিন্তু আগামী সপ্তাহেই রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ২৫ হাজার ছুঁয়ে ফেললেও আশ্চর্যের কিছু থাকবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy