দেবজ্যোতি দাস, কাজল সিংহ ও শীলভদ্র দত্ত
টানা ৩৫ বছর ধরে যে কেন্দ্র রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের উপহার দিয়েছে, সেই কেন্দ্রের ভোট নিয়ে মানুষের আগ্রহ থাকবে স্বাভাবিক ভাবেই।
পাঁচ দফায় খড়দহ কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন বাম জমানার অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত। এর পরে দু’দফায় অসীমবাবুকে হারিয়ে বিধানসভায় যান তৃণমূলের অমিত মিত্র। এবং দু’বারই অর্থমন্ত্রী হন। তবে স্বাস্থ্যের কারণে অমিতবাবু এ বারের ভোটে লড়ছেন না। তাঁর বদলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী করেছেন খড়দহের ঘরের ছেলে কাজল সিংহকে। গত দশকের প্রথম থেকে খড়দহ বইমেলা থেকে শুরু করে করোনা-আক্রান্তদের জন্য সেফ হোম তৈরি— সব কিছুতেই অগ্রণী কাজলবাবু। স্থানীয় পুরসভার কাউন্সিলরও হয়েছেন। জেতার বিষয়ে তাই খুবই আত্মবিশ্বাসী তিনি। বললেন, ‘‘স্থানীয় কল্যাণনগর বিদ্যাপীঠ থেকে পড়াশোনা করেছি। সত্তরের দশকের শেষের দিকে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি, কুমুদ ভট্টাচার্যকে দেখে কংগ্রেসের রাজনীতি করতে এসেছিলাম। তার পরে তো মমতাদিকে দেখেই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছি। এলাকায় আমাকে চেনেন না এমন মানুষ নেই।’’
ইতিমধ্যেই এলাকার বিভিন্ন বিশিষ্টজন কাজলবাবুকে জেতানোর জন্য ভোটারদের কাছে আবেদন করে লিফলেট বিলিও শুরু করেছেন। তবে খড়দহে গিয়ে এমন কথাও শোনা গেল, ‘তৃণমূলের প্রার্থী আদৌ ভবিষ্যতে তৃণমূলে থাকে নাকি তাই দেখুন। এখানকার বিজেপি প্রার্থী তো তৃণমূল ঘুরে আসা।’
এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত কিছু দিন আগেও ছিলেন পাশের ব্যারাকপুর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক। বহু টানাপড়েনের পরে গত ডিসেম্বরে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেই বিজেপিতে চলে গিয়েছেন তিনি। বিজেপি প্রার্থীর কথায়, ‘‘তৃণমূলে কাজ করতে পারিনি। পলিটিক্যাল লোক আমি। কাজ করতে চেয়েছি। পারিনি।’’ এ বার? ‘‘প্রচারে বেরিয়ে লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৃণমূলের দুর্নীতির কথাই বলছি। এক বার পাতুলিয়া, বন্দিপুর— এ সব এলাকায় যান। দেখবেন, এখনও পানীয় জল নেই, রাস্তা নেই। বছরের পর বছর এই কেন্দ্র থেকে জিতে প্রার্থীরা রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হয়েছেন। তাতে এখানে কী পরিবর্তন হয়েছে?’’ শীলভদ্রের দাবি, ‘‘যদি মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, তা হলে তৃণমূলের এখানে চিন্তা রয়েছে।’’
একদা এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস এ বার এই কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী। সিপিএম যে এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীকে এ বারের নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে, দেবজ্যোতি তাঁদেরই এক জন।
দেবজ্যোতিকে নিয়ে তাঁর বিরোধী দুই প্রার্থীর ব্যক্তিগত ভাবে কোনও কিছুই বলার নেই বলে জানালেন। শীলভদ্রবাবু বললেন, ‘‘ছাত্র রাজনীতি থেকে যারা উঠে আসে, তারাই তো ভবিষ্যতের হাল ধরবে। কিন্তু সিপিএম সমর্থকেরা কি আদৌ নিজেদের প্রার্থীকে ভোট দেবেন? আইএসএফ -এর সঙ্গে জোট বাম অনেক সমর্থকই ভাল চোখে দেখছেন না।’’ গত লোকসভা ভোটের হিসেবে এই কেন্দ্রে বিজেপির উত্থান চোখে পড়ার মতো। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে এখানে বিজেপি প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন ১৬ হাজারের সামান্য বেশি। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৭২ হাজার ৪৯৯। তৃণমূল পেয়েছিল তার থেকে মাত্র ১ হাজার ২৬৮ বেশি ভোট। আর সিপিএম পেয়েছিল ২০ হাজার ৬৯। সেই আবহেই পদ্ম আর ঘাসফুলের সঙ্গে লড়াই করে খড়দহে লাল গোলাপ ফোটানোর স্বপ্ন নিয়ে ছুটে চলছেন দেবজ্যোতি। তাঁর মোবাইলে ফোন করলেও রিংটোন— ‘আমার সকল কাঁটা ধন্য করে ফুটবে ফুল ফুটবে। আমার সকল ব্যথা রঙিন হয়ে গোলাপ হয়ে উঠবে।’
এই কেন্দ্রের গ্রামীণ অঞ্চলে ১০০-র বেশি বুথ। কিন্তু এ সব অঞ্চলের কিছু হয়নি বলে শীলভদ্রবাবুও যেমন দাবি করেছেন, দেবজ্যোতির অভিযোগও তাই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অসীমবাবু যা করে গিয়েছেন, তার পরে এই কেন্দ্রের আর উন্নয়ন হয়নি। অমিত মিত্র এলাকায় আসতেনই না। দীর্ঘদিন ধরে একটি হাসপাতালের দাবি করে আসছেন কেন্দ্রের মানুষ। তা-ও তৈরি হয়নি। এর সঙ্গে রয়েছে সিন্ডিকেট চক্র।’’
বিরোধী দুই প্রার্থী নিয়ে কিছু বলতে রাজি নন দেবজ্যোতিও। শুধু বললেন, ‘‘জনগণকে নির্ভয়ে, সুষ্ঠু ভাবে ভোট দিতে দেওয়া হোক। তা হলেই বোঝা যাবে রায় কার দিকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy