মাহিওয়ে-হাইওয়ে: ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে একদিনের ম্যাচে শতরানের পরেও টানা ১৪ ম্যাচ বসে থাকতে হয়েছিল। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চলাকালীন নেটে সকলের শেষে ব্যাটিং দেওয়া হত। খোলাখুলিই বলেন, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি তাঁর কেরিয়ারের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। আরও বলেন, আত্মজীবনী লিখলে সব খোলাখুলি লিখে দেবেন!
পাম্প রুম থেকে ২২ গজে: বাবা শ্যামশঙ্কর তিওয়ারি ছিলেন রেলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে হাওড়ার রেলের আবাসনে বাস। নামেই আবাসন। আদতে ১৫ ফুট বাই ১০ ফুট পাম্প রুম। সেই ছোট্ট ঘর থেকেই শুরু হয়েছিল ক্রিকেটের পাঠ। সেখান থেকেই ২২ গজে প্রতিষ্ঠা। এখন হাওড়ার শিবপুরে বাড়ি। সেখানেই বাস পরিবারের।
পিন্টু থেকে মান্নি: ভারতীয় ক্রিকেট মহলে ‘মান্নি’ বলে পরিচিত। ভারত ‘এ’ দলে খেলার সময় রবিন উথাপ্পা ‘মান্নি’ নামে ডাকতে শুরু করেন। নামটা দ্রুত ছড়িয়ে যায়। মা বীণা তিওয়ারি ডাকতেন ‘পিন্টু’। পাড়াতেও সেই নামেই পরিচিত ছিলেন। মনোজ বলেন, “মা পিন্টু বলে না ডাকলে নামটা হয়তো ভুলেই যেতাম।” স্ত্রী সুস্মিতা ‘বাবু’ বলে ডাকেন। মনোজের কাছে আপাতত ওটাই সবচেয়ে প্রিয় নাম।
পাড়ারই ট্রফি: স্ত্রী সুস্মিতা একই পাড়ার বাসিন্দা। এক বন্ধুর মাধ্যমে ২০০৪ সালে আলাপ। ন’বছর ‘ডেট’ করার পর বিয়ে ২০১৩ সালে। প্রেমটা সকলে জানত। বিয়েটা কিন্তু হয়েছিল খানিক গোপনে। সাঁতরাগাছির একটি হোটেলে দুই পরিবার ও কয়েকজন কাছের বন্ধু সাক্ষী ছিলেন।
জুভান-ম্যাক্সের অভিভাবক: পুত্রের নাম জুভান। মনোজের ব্যাটে স্টেনসিল করে নামটা লেখাও আছে। বাড়িতে আছে ‘ম্যাক্স’। পোষ্য সারমেয়। নাম রেখেছেন সুস্মিতা।
ট্যাঁরায় কাঁটা: ইদানীং মনোজ শিবপুরের বাড়িতেই থাকছেন। ট্যাংরার ফ্ল্যাটে যাচ্ছেন না। কারণ, জুভান সবে আড়াই বছরের। বলছেন, “ছেলেটা একদম ছোট। ওকে এই সময়টা খুবই মিস করছি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির মধ্যে প্রচার করতে হচ্ছে। নিজে ঠিক মতো থাকলেও ছেলের কথাও ভাবতে হবে। তাই এখন হাওড়াতেই থাকছি।”
৮টা-১২টা: ভোট বড় বালাই। সকাল ৮টা বাজলেই প্রচার শুরু। তার পর দলীয় কর্মীদের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে বিশদে আলোচনা। ঘরে ফিরতে রোজই প্রায় মধ্যরাত।
পথে-প্রচারে: মাস্ক, স্যানিটাইজার প্রচারে সবসময় সঙ্গী। প্রচারের জন্য মাস্ক সব সময় পরা সম্ভব বচ্ছে না। জল, ওআরএস এবং বেশি করে ‘কাড়া’ (হাল্কা পানীয়) খাচ্ছেন।
দিদির নামে গুগলি: রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারটা কঠিন ছিল। মা এবং স্ত্রী শুরুতে একেবারেই রাজি ছিলেন না। দু’জনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা চলেছে। তার পর রাজি করাতে পেরেছেন। দিদি তাঁকে চেয়েছেন। ওঁর কথা ফেলতে পারেননি। সেই গুগলিতেই বীণা-সুস্মিতার উইকেট নিয়ে গেলেন পার্টটাইম বোলার মনোজ। তবে একইসঙ্গে বলছেন, রাজনীতির কঠিন উইকেটেও ব্যাট করতে তিনি তৈরি।
কাজের মেসো: ঘর সাফাই থেকে স্ত্রী-কে রান্নায় সাহায্য, ছেলেকে স্নান করিয়ে দেওয়া থেকে খাওয়ানো, ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া, ছেলের সঙ্গে খেলা— সব করেন। সেলিব্রিটি হলেও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে পাড়ার বাজারে থলি নিয়ে ঘুরে বেড়ান। সঙ্গে পরিবার নিয়ে প্রতি বছর বিদেশসফর। পছন্দ পাহাড় আর সমুদ্র।
জ্ঞানের প্রদীপ: ছোটবেলায় তিন ভাই মায়ের কাছে পড়তেন। টিউশন পড়ানোর সংস্থান ছিল না বাবার। ছেলের জন্য কোনও খামতি রাখতে চান না। জুভান একটু বড় না হওয়া পর্যন্ত সময় পেলেই ওর বই-খাতা নিয়ে বসে পড়বেন।
টি-টোটালার: কোনও নেশা নেই। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে কখনও সিগারেট বা পানীয়ে আসক্ত হননি। সেই ১২-১৩ বছর বয়স থেকেই। ক্রিকেটের জন্য। তবে একটা বদভ্যাস আছে। সবসময় ফোন ধরেন না। এটা দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে। এখনও বদলাতে পারেননি। তবে এবার বদলাতে হবে। কারণ, ঘনঘন ফোন আসা এবং ধরার ‘সময়’ আসছে।
ভক্তিমান: ঈশ্বরে বিশ্বাসী। রোজ ঘরে পুজো করেন। তবে বিশেষ কোনও দেবতার প্রতি আলাদা আকর্ষণ নেই। নির্বাচনী প্রচারে অবশ্য রোজই এলাকার কোনও না কোনও মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন।
গ্রহনক্ষত্র: দু’হাতের আঙুলে একাধিক আংটি। জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাসী নাকি? মনোজ বলছেন, “কিছুটা বিশ্বাস আছে। পুরোপুরি ভরসা করতে পারি না। তবে আমার মা ও বউয়ের জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর অগাধ আস্থা। ওদের কথা রাখতে গিয়ে আংটি পরেছি। যদিও আংটির পাথরের নামগুলোও জানি না।”
ক্যারম থেকে কিশোর: ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিক— দীর্ঘ যাত্রায় কোনও বদল আসেনি। এখনও আগের মতোই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারেন। দারুণ ক্যারম খেলেন। অবসরে সঙ্গী কিশোর কুমার।
তথ্য; সব্যসাচী বাগচী, রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy