বিধানসভা কেন্দ্র: নাম শুনলেই রসিকজনের আশা ভোঁসলের বিখ্যাত গানের পরের লাইন মনে পড়ে যায়— (ময়না) ‘বলো তুমি কৃষ্ণ-রাধে’। বলতে গেলে, এ-ও এক ঘরে ফেরাই তো। ছোটবেলায় বাবা গ্রামের বাড়ি থেকে বেরিয়েবিভিন্ন পাড়ায় ঘুরে ঘুরে খোল নিয়ে কৃষ্ণনাম জপ করতেন। সঙ্গী হতেন ছোট্ট অশোক— ‘বলো তুমি কৃষ্ণ-রাধে’।
পরিবার পরায়ণে: জীবনের সব পরিস্থিতিতে পাশে থেকেছে পরিবার। তাইমায়ের কথা শুনে মনোনয়ন জমা দেওয়া একদিন পিছিয়ে দিয়েছিলেন। ওয়ালেটে স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে মায়ের ছবি। সঙ্গে ড্রাইভিং লাইসেন্স, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং কিছু টাকা। মোবাইলের লক্ড স্ক্রিনে কন্যার ছবি। আর আনলক্ড থাকলে মেয়ে জন্মানোর পর প্রথমবার তাকে দেখার সুখ-ছবি।
বাড়ির ডাকনাম: কচি। একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। মা রয়েছেন।পাঁচ দাদা, বৌদি, ভাইপো, ভাইঝিদের নিয়ে ভরা সংসার। তাছাড়া পাঁচ কাকার সংসার তো আছেই। বাকিরা গ্রামের বাড়িতে থাকলেও ডিন্ডা স্ত্রী শ্রেয়সী ও একমাত্র কন্যাকে নিয়ে কলকাতায় থাকেন। তবে ভোটের আগে গ্রামের বাড়িতেই বেশি সময় কাটছে।
ক্রিকেটের ডাকনাম: নৈছনপুর এক্সপ্রেস। সম্ভবত শোয়েব আখতারের ক্রিকেটীয় নাম ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’-এর অনুরণনে। তাঁর ধাত্রীভূমি তো সেই নৈছনপুরই।
বউয়ের দেওয়া ডাকনাম: ভাই! ঠিকই পড়লেন— ‘ভাই’। ডিন্ডা বলছিলেন, “বউ আমাকে ভালবেসে ‘ভাই’ বলে ডাকে। ব্যাপারটা অনেকের কাছে অদ্ভুত। কিন্তু আমার কাছে বেশ মজার।” তা তো বটেই। দম্পতির জীবনের চালু রসিকতা হল, বহুদিন বিয়ের পর বর-বউ ‘ভাই-বোন’ হয়ে যায়। এখানে অবশ্য তেমন কোনও ফাঁকফোকর নেই। বরং রয়েছে নিশ্ছিদ্র আদর আর ভালবাসা।
অমর প্রেম: জীবনে অনেকবার প্রেম এসেছে। সব সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কিন্তু শ্রেয়সীর সঙ্গে দেখা হওয়া জীবন ঘুরিয়ে দিয়েছিল। পরিচিত বন্ধুদের মাধ্যমে পরিচয়। হুগলির রিষড়ার বাসিন্দা শ্রেয়সী একদা সল্টলেকের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করতেন। বিয়ের পর সংসার ও একমাত্র কন্যাকে সামলাচ্ছেন।
জীবে প্রেম: কলকাতায় অশোক-শ্রেয়সীর ফ্ল্যাটে আরও একজন সদস্য রয়েছে। নাম ‘ফ্লাফি’। ডিন্ডা দম্পতি বড় আদরের তাঁদের পোষ্যকে বড় করছেন।
জিভে প্রেম: খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ বাছবিচার নেই। সকালে ঘুগনি-মুড়ি, দুপুরে ডাল-ভাত-আলুসেদ্ধ-মাছভাজা হলেই চলে। শহরের বড় রেস্তরাঁ নয় বরং এখনও ইডেনের দিকে এলে স্টেডিয়ামের বাইরের ঝালমুড়ি বেশি প্রিয়। তবে মঙ্গলবার পুরো নিরামিষ।
জয় বজরংবলী: হনুমান’জির র অন্ধ ভক্ত। হোয়াটস্যাপ ডিপিতেও বজরংবলীর ছবি। সময় পেলে প্রতি মঙ্গলবার মন্দিরে পুজো দেন। ঈশ্বরে ভক্তি অবশ্য প্রয়াত বাবার কাছ থেকে পাওয়া। তবে ঠাকুরের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা থাকলেওজ্যোতিষে বিশ্বাসী নন। লড়াকু ক্রীড়াবিদ। তাই কর্মে বিশ্বাসী।
অন্য দাদার অনুগামী: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নন, তাঁর ‘দাদা’ শুভেন্দু অধিকারী। ‘গুরু’-ও বটে। সেই দাদাতথা গুরুর ডাকে সাড়া দিয়েই রাজনীতিতে। গত কয়েক মাস ধরেই রাজ্য রাজনীতির দিকে নজর রাখছিলেন। ‘দাদা’র সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নিয়মিত। ‘দাদা’ বিজেপি-তে যেতেই ক্রিকেটের ভাই কিটব্যাগ তুলে রাখেন। দাদার অনুগামী হয়েই পদ্মশিবিরে।বলছেন, “আমাদের এখানে অনেক সমস্যা। এত বছরেও মেটেনি। আমি গ্রামের ছেলে। স্থানীয়দের আবেগ-যন্ত্রণা বুঝি। তাই দাদার ডাকে সাড়া দিলাম। ভোটে জিতলে এলাকার সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করব।”
মোদীতে মন মজে: মোদী-ভক্ত। এখনও আলাদাভাবে কথা বলার সুযোগ হয়নি। তবে কোনওদিন সুযোগ পেলে জানতে চাইবেন, কীভাবে অগণিত মানুষকে কাছে টেনে নেন! এত মানুষের মন কীভাবে জিতে নেন! অর্থাৎ, ইনস্যুইং ডেলিভারিটা ঠিক কোন লেংথে রাখেন।
দিদিও বা কম কী: একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে ক্রীড়া ও বিনোদন জগতের অন্য তারকাদের সঙ্গে তাঁকেও দিদির পাশে দেখা গিয়েছিল। তবে সে ইনিংস টেলএন্ডারের মতোই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। তৃণমূলে ছোট স্পেলে বল করে বিজেপি-তে লম্বা বোলিং পাওয়ার আশায়। কিন্তু ‘দিদি’র জনমোহিনী শক্তিতে এখনও বুঁদ। সুযোগ পেলে তাঁকেও প্রশ্ন করবেন, তাঁর ডাকে কী ভাবে এত লোক আসে।
রোজনামচা: নৈছনপুরের বাড়ি থেকে রোজ সকাল ৬টায় বেরোচ্ছেন। দলের কাজ সেরে ঘরে ফিরে দেখছেন ঘড়িতে রাত ২টো! কিন্তু এই তো ভোটের জীবন, কালী’দা।
রং বদল: ক্রিকেটের পোশাক ছিল সাদা ফ্ল্যানেলের ট্রাউজার্স আর অ্যাক্রিলিকের শার্ট। ওয়ান-ডে এবং টি-টোয়েন্টিতে রঙিন জার্সি। কিন্তু এখন পরনে গেরুয়া কুর্তা আর সাদা পাজামা।
যাপন: একেবারেই সাধারণ। মধ্যবিত্তের মতো। সময় পেলে ব্যাঙ্কেও চলে যান। অন্য পাঁচজনের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যাঙ্কের কাজ মেটাতে অস্বস্তি হয় না। বরং ব্যাঙ্কে যাওয়াটাউপভোগ করেন।
বাজার সরকার: বাজারে যেতে বেজায় ভালবাসেন। এখন নেহাত প্রচারে সময় কেটে যাচ্ছে। নইলে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন তাঁর বাজারে যাওয়া চাই!সেখানে পাড়ার লোকজনের সঙ্গে চা সহযোগে আড্ডা দিয়ে গোটা বাজার ঘোরেন। মাছ, মাংস থেকে শুরু করে শাক,সব্জি— সমস্ত নিজে দেখে, পরীক্ষা করে কেনেন। যেমন বোলিং শুরুর আগে উইকেটটা জরিপ করে আসতেন।
বন্ধু চল: বাইশ গজের যুদ্ধে সচিন তেন্ডুলকর, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহলী, যুবরাজ সিংহ, বীরেন্দ্র সহবাগ তাঁর কাছের বন্ধু। সাজঘরে অনেক সময় কাটিয়েছেন। তবে শিয়ালদহের কোলে মার্কেটের মেসে অখ্যাত-অনামি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। যেখানে থাকতে থাকতে ক্রিকেটার হওয়ার লড়াই শুরু। সময় পেলে এখনও সেই মেসে চলে যান।
বাহন: বিএমডব্লিউ, স্করপিও-সহ একাধিক গাড়ি। অবশ্য প্রচারের হুডখোলা জিপই নিত্যসঙ্গী।
তথ্য: সব্যসাচী বাগচী, রেখাচিত্র: সুমন চৌধুরী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy