যোগাযোগ: পুলিশকর্মীদের সঙ্গে টহলদারিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর মহিলা জওয়ানেরা। বৃহস্পতিবার, নরেন্দ্রপুরে। —নিজস্ব চিত্র
মহিলা ভোটদাতারা যদি নিজেদের অসুরক্ষিত বলে মনে করেন, তা হলে তাঁদের বুথে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নেবেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর মহিলা জওয়ানেরা।
এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় টহলদারি শুরু করেছে ১২৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। কয়েক দিনের মধ্যে আরও ১৭০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে আসছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর।
প্রথম দফায় বারুইপুর পুলিশ জেলায় দুই কোম্পানি এবং হাওড়া জেলার সাঁকরাইল থানা এলাকায় এক কোম্পানি মহিলা জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্তারা। দিন চারেক আগেই সিআরপিএফের ওই তিন কোম্পানি মহিলা জওয়ান এসে পৌঁছেছেন। বুধবার রাত থেকে বিভিন্ন এলাকায় টহলদারি শুরু করেছেন তাঁরা।
নির্বাচন কমিশনের কর্তারা জানিয়েছেন, গত লোকসভা ভোটে এ রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে ভোটারদের আটকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। পরে সেই সমস্ত ঘটনার তদন্তে নেমে দেখা যায়, অভিযোগ মিথ্যে নয়। কমিশনের কর্তাদের মতে, সাধারণত মহিলাদের ভয় দেখানো খুব সহজ। আর মহিলারাও কেন্দ্রীয় বাহিনীর পুরুষ জওয়ানদের কাছে নিজেদের অভিযোগ জানাতে অস্বস্তি বোধ করেন। সেই কারণেই এ বার কেন্দ্রীয় বাহিনীর মহিলা জওয়ানেরা এলাকায় টহল দেবেন এবং ভীত ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করবেন। প্রয়োজনে ভোটের দিন তাঁদের নিরাপত্তা দিয়ে বুথেও নিয়ে আসবেন ওই জওয়ানেরা। নির্বাচনের আগেই যে সব এলাকা থেকে ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠছে, সেখানে গিয়েও টহলদারি চালানোর পাশাপাশি মহিলা ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন তাঁরা।
নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, গত লোকসভা ভোটে বহু জেলা থেকেই ভোটারদের আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল। সেই সঙ্গে ভোটের আগের দিন বিভিন্ন বাড়ি থেকে আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল শাসকদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। সেই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। ওই সমস্ত ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকার রাজ্য পুলিশের কর্মীদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, ভোটদাতারা অনেকেই ভয়ে পুলিশে অভিযোগ জানাতে পারেননি। তাঁরা ভোটদান থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন।
কমিশন জানিয়েছে, ভোটদাতাদের কেউ যাতে আতঙ্কের কারণে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বঞ্চিত না হন, সেটা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য। সেই কারণেই ভীত মহিলা ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর মহিলা জওয়ানদের মাঠে নামানো হয়েছে।
অনেক সময়েই আবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর পুরুষ জওয়ানদের বিরুদ্ধে নানা ভাবে মহিলাদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ ওঠে। সেই সব অভিযোগের পিছনে বহু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অভিসন্ধিও কাজ করে। কখনও সখনও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয় স্তরে ক্ষোভ তৈরির জন্যও এই ধরনের অভিযোগ তোলা হয়। তবে এ বার পুরুষ জওয়ানদের সঙ্গে মহিলা জওয়ানেরাও টহল দিলে এলাকার মেয়েরা অনেকটা নিশ্চিন্ত বোধ করবেন।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বারের নির্বাচনে মোট বুথের ৩০ শতাংশ মহিলা পরিচালিত। ওই সব বুথেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর মহিলা জওয়ানদের মোতায়েন করা হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে বুধবার থেকে রাজ্য পুলিশের বিভিন্ন থানার কর্মীরা ওই জওয়ানদের এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন এবং এলাকার মানুষের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় করাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর মহিলা জওয়ানেরা সরাসরি ভোটারদের সঙ্গেও কথা বলছেন। নির্বাচনের আগে কোনও হুমকি বা শাসানি তাঁরা পাচ্ছেন কি না বা ভয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের বক্তব্য, সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের মাধ্যমে এলাকার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা সরাসরি ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। তাঁদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করবেন। ভোটের দিন ওই সমস্ত ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের বুথে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হবে। নির্বাচনের প্রতিটি দফাতেই বিভিন্ন জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর মহিলা জওয়ানেরা পৌঁছে যাবেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy