চৈত্র মাসেও এ ভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে জল। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ।
দুপুর-রোদে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে রুমালে ঘাম মুছছিলেন প্রৌঢ়। ‘ভোটঋতু’তে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন যেন তাঁকে আরও তাতিয়ে দিল! সপাটে বললেন, ‘‘কোথায় থাকা হয়? বৃষ্টি হলে একটু আসবেন। দেখবেন, কেমন সুখে আমরা আছি। রাস্তা থাকে জলের তলায়। পারলে সাঁতার কেটে বাড়ি ঢুকতে হয়।’’
প্রত্যন্ত গ্রাম নয়, এই বাক্যালাপ হচ্ছিল বৈদ্যবাটী পুরসভার কাজিপাড়ায় দাঁড়িয়ে। সম্বৎসর এই শহরের খোঁজ যাঁরা রাখেন, তাঁরা জানেন, ভদ্রলোক ভুল বলেননি। শুধু বৈদ্যবাটী নয়, পাশের চাঁপদানি পুর-এলাকাতেও নিকাশি নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা নিয়েও ক্ষোভ আছে। কারণ, এই বিধানসভায় কলেজ নেই। নেই হাসপাতাল। এই আবহেই আরও এক ভোটের মুখে চাঁপদানি বিধানসভা কেন্দ্র।
তৃণমূল প্রার্থী, যুবনেতা অরিন্দম গুঁইন গত পাঁচ বছর বৈদ্যবাটীর পুরপ্রধান ছিলেন। স্বভাবতই এই এলাকায় তিনি কী করেছেন, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। তৃণমূলের দাবি, এই সময়ে শহরের রাস্তা, জল, আলোর ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। নিকাশি সমস্যার কথা অবশ্য অরিন্দম মানছেন। তবে, তাঁর দাবি, দিল্লি রোড লাগোয়া কয়েকটি ওয়ার্ডেই এই সমস্যা রয়েছে। কিছু জায়গায় নিকাশি-নালা করে দেওয়ায় সমস্যা আগের থেকে অনেক কমেছে। জল দ্রুত নেমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘বৈদ্যবাটী মাতৃসদন চালু রাখা যায়নি, এটা ঠিক। তবে দু’জায়গায় আউটডোর চলে। রাজ্য সরকার গোটা বিধানসভা কেন্দ্রেই অনেক উন্নয়ন করেছে। কিন্তু এখানকার বিধায়ককে মানুষ পাননি। তিনি এলাকার জন্য কিছু করেনওনি।’’
বিধায়ক হলে এলাকায় কলেজ তৈরির চেষ্টার প্রতিশ্রুতি দেন অরিন্দম। এই কাজ বিধায়ক করেননি কেন, সেই প্রশ্নও তোলেন। পাশ থেকে পার্ষদরা বলে ওঠেন, ‘‘করোনার সময় দিন-রাত দাদা-ই মানুষকে পরিষেবা দিয়েছেন, বিধায়ক নন।’’ নানা ক্ষেত্রে প্রশ্ন থাকলেও প্লাস্টিক-ক্যারিব্যাগের দূষণ রোধে অরিন্দমের নেতৃত্বে বৈদ্যবাটী পুরসভা সচেষ্ট হয়েছিল। এই নিয়ে রীতিমতো অভিযান চালানো হয়। এই কাজ পরিবেশকর্মীদের কাছে প্রশংসিত হয়। যদিও একশো ভাগ সাফল্য আসেনি।
বিজেপি স্বভাবতই তৃণমূলের অনুন্নয়ন নিয়ে গলা ফাটাচ্ছে। তাদের অভিযোগ, কলেজ-হাসপাতাল দূরঅস্ত, সর্বত্র রাস্তার সমস্যাই মেটেনি। বিজেপির প্রার্থী দিলীপ সিংহ একসময় তৃণমূলে ছিলেন। পরে মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন। পোশাক ব্যবসায়ী দিলীপ বলছেন, এখানে শিল্পের অবস্থা বেহাল। তিনি জিতলে এলাকার শিল্প গতি পাবে। নিজের ব্যবসার সূত্রেও লোককে কাজ দেবেন।
বিদায়ী বিধায়ক আব্দুল মান্নান পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ। সংযুক্ত মোর্চা গঠনের অন্যতম চরিত্র তিনি। অভিজ্ঞ এই কংগ্রেস নেতা ফুৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছেন বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ। তিনি বলছেন, এক জন বিধায়ক এলাকা উন্নয়নের জন্য বছরে ৬০ লক্ষ টাকা পান। অর্থাৎ পাঁচ বছরে ৩ কোটি টাকা। পুরো টাকাই তিনি খরচ করেছেন তো বটেই, রাজ্যসভার একাধিক সাংসদের তহবিলেরও প্রায় সমপরিমাণ টাকায় চাঁপদানি বিধানসভা কেন্দ্রের উন্নয়নের কাজে লাগিয়েছেন।
মান্নানের বক্তব্য, তিনি কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি। মানুষের প্রয়োজনের ভিত্তিতে উন্নয়নের কাজ করেছেন। স্কুলের উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরি, টিউবওয়েল, জলের পাম্প বসানো-সহ নানা কাজ তিনি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, তাঁর বিধায়ক উন্নয়ন তহবিলের টাকায় টিউবওয়েল বসানোর ক্ষেত্রেও তৃণমূল ‘কাটমানি’ খেয়েছে। তাঁর উদ্যোগে তৈরি একটি রাস্তার কৃতিত্ব নিয়েছে তৃণমূল। মান্নানের কথায়, ‘‘করোনার সময়ে নিজের উদ্যোগে চাল-ডাল বিলি করেছি। বিধায়ক হিসেবে আমি কী করেছি, মানুষ জানেন। প্রতিদিন মানুষের সঙ্গে দেখা করি। মানুষকে ভরসা করি। ওদের মতো ছবি তুলে স্যোসাল মিডিয়ায় পোস্ট করি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy