রাজ্যে নির্বাচন হচ্ছে কিন্তু কোথায় বুদ্ধিজীবীরা? তাঁরা কোথায় গেলেন? প্রশ্ন দিলীপের। নিজস্ব চিত্র
দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বিতর্ক যেন ছায়ার মতো চলে। এ বার শিল্পীরা রাজনীতি করতে এলে ‘রগড়ে’ দেওয়ার ‘হুমকি’। নববিতর্কের রেশ মেলানোর আগেই রাজ্য বিজেপি সভাপতির ভোট প্রচারে দিনভরের সঙ্গী হল আনন্দবাজার ডিজিটাল। দমদম থেকে হেলিকপ্টারে চুঁচুড়া, তার পর বহু আলোচিত সেই গাড়ি, যা ‘দিলীপ ঘোষের রথ’ বলেই প্রচারিত, তাতে চুঁচুড়া থেকে সপ্তগ্রাম হয়ে পাণ্ডুয়া, তার পর একে একে বলাগড়, চন্দননগর, শ্রীরামপুর। চলতে চলতেই প্রশ্ন করে ফেলা গেল তাঁর ‘বুদ্ধিজীবী-বিদ্বেষ’ নিয়ে।
প্রশ্ন: আপনি কি শুধুই পরিশ্রম করেন, নাকি বুদ্ধিও প্রয়োগ করেন?
দিলীপ: রাজনীতি শুধু পরিশ্রম দিয়ে হয় না, বুদ্ধিও লাগে। আমি রাজনীতিতে এসেছিলাম ৫-৬ বছর আগে। আমি আমার মতো করে রাজনীতি শুরু করলাম। বাংলায় বিজেপি ছোট পার্টি ছিল। জনাধার ছিল না, নির্বাচনে জিততে পারতাম না, লোকে ভোট দিত না। আজকে যে পার্টি সফল হয়েছে, লোকসভায় ১৮টা আসন জিতেছে, এখন রাজ্যে ক্ষমতায় আসছে এর জন্য বুদ্ধিও লাগাতে হয়। রাজনীতি তো বুদ্ধিরও খেলা। কিন্তু বিনা পরিশ্রমেও সাফল্য পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন: আপনি বুদ্ধির কথা বলছেন। মানে বুদ্ধিকেও রাজনীতির জন্য ব্যবহার করছেন। তার পরেও বিশিষ্টজন বা বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে এত রাগ কেন?
দিলীপ: রাগ এই জন্যই যে, গত ৪০ বছর ধরে, আমি যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, খালি গালাগালি খেয়ে আসছি বিনা কারণে। যেহেতু আমি আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ) করি। এখানে যখন বিজেপি ছিল না তখন থেকেই বিজেপি-কে ওঁরা গালাগালি দিতেন। আর এটাই ওঁদের জীবিকা ছিল। আর যে পার্টিগুলোর জন্য ওঁরা প্রচার করতেন, আজ সেই পার্টিগুলো উঠে গিয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি ক্ষমতায় আসছে এত বিরোধিতা সত্ত্বেও। কেউ কোনও পার্টির বিরোধিতা করতেই পারেন গণতন্ত্রে, কিন্তু সেটা দেশদ্রোহিতার পর্যায়ে চলে গিয়েছে। দেশের বিরোধিতা করা, দেশের সংস্কৃতি, ধর্মের বিরোধিতা করা, আর আমাদের যা-নয়-তাই ভাষায় বিরোধিতা করা। কিন্তু সমাজ কী পেল তাঁদের কাছ থেকে? আমার প্রশ্ন এটাই। তাঁরা সমাজকে ধোঁকা দিয়েছেন, সমাজকে বিভ্রান্ত করেছেন রাজনৈতিক স্বার্থে, নিজের হিতে। আর সেই জিনিসটারই আমি বিরোধিতা করেছি।
প্রশ্ন: কিন্তু ক্ষমতায় এলে এই বিশিষ্টজনদের দরকার হবে। সরকারকে তো বিভিন্ন সংস্থা চালাতে হবে। তাতে তো বিশিষ্টজন বা বুদ্ধিজীবীদের দরকার হবে!
দিলীপ: বুদ্ধিজীবী কারা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। হঠাৎ ঝাঁকে ঝাঁকে বুদ্ধিজীবী রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। বুদ্ধিজীবী রাতারাতি তৈরিও হয়ে যায় আবার গায়েবও হয়ে যায়। আপনি দেখুন, রাজ্যে নির্বাচন হচ্ছে কিন্তু কোথায় বুদ্ধিজীবীরা? তাঁরা কোথায় গেলেন? তাঁদের কোনও ভূমিকা নেই সমাজের সামনে। নাকি যাঁদের জন্য, যাঁদের হয়ে গাইতেন তাঁরা অন্যের হয়ে গিয়েছেন বলে আর রাস্তায় বেরচ্ছেন না! সঙ্কোচ হচ্ছে? আমি মনে করি, সব সময় সমাজের সামনে সঙ্কট হলে লোকে বুদ্ধিজীবীদের দিকে তাকায়. তাঁরা কী বলছেন, কী করছেন সে দিকে তাকান। মহাজনে যেন গতঃ স পন্থা। তাঁদের তো রাস্তা দেখানোর কথা। আজ ওঁরাই তো রাস্তা হারিয়ে ফেলেছেন। এই যে দুরবস্থা হয়েছে, আমি প্রথম থেকে এটাই বলে এসেছি, এঁরাই আমাদের ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা প্রমাণ করলেন তাঁরা ভুল। সমাজ তাঁদের সেই ভুলটা দেখিয়ে দিয়েছে চোখে আঙুল দিয়ে। আজকে তাঁরা গৌণ হয়ে গিয়েছেন। তাঁরা অপ্রয়োজনীয় হয়ে গিয়েছেন। তাই কোনও ভূমিকা নেই আজকে আর।
প্রশ্ন: আপনি বিশিষ্টজনদের ভুলের কথা বলছেন। কিন্তু আপনার দলের অনেকেই তো মনে করে এই সব কথা বলে আপনিও ভুল করে চলেছেন।
দিলীপ: আমার যদি ভুল হয়, আমার কথার মধ্যে যদি সত্য না থাকে সমাজ আমাকে সাজা দিক। যে সমাজকে তাঁরা বিভ্রান্ত করেছেন সেই সমাজের বক্তব্য আমি তুলে ধরছি। তার জন্য সৎ সাহস লাগে, তার জন্য হিম্মত লাগে। গরিব মানুষ, সাধারণ মানুষের জন্য কথা বলি আমি। কিন্তু এই বুদ্ধিজীবীরা সমাজের জন্য কিছু করেননি, তাঁরা সমাজকে বিভ্রান্ত করছেন। সেটার আমি প্রতিবাদ করেছি। যদি ভুল করে থাকি তার জন্য আমি সাজা নেব। সবারই একটা নিজস্ব মতামত থাকে। তাতে আপত্তির কিছু নেই। আমি যেটা দেখেছি, যেটা আমার মনে হয়েছে, আমি বলেছি। আমাকে ভুল প্রমাণ করুক।
প্রশ্ন: আপনার দলে লকেট চট্টোপাধ্যায়, বাবুল সুপ্রিয় রয়েছেন। তাঁরা সাংসদ হয়েছেন, এই বিধানসভা নির্বাচনেও লড়াই করছেন। পদ্মভূষণ স্বপন দাশগুপ্ত আপনাদের প্রার্থী। এঁরাও তো বিশিষ্টজন? তৃণমূলের সঙ্গে যাঁরা ছিলেন এবং রয়েছেন আর যাঁরা আপনাদের সঙ্গে আছেন তাঁদের মধ্যে কি কোনও ফারাক করছেন?
দিলীপ: ওঁরা তো কারও সঙ্গে রাজনীতির রুটি সেঁকতে যাননি। সেই সময়ে বিজেপি-তে এসেছেন যখন বিজেপি-র নামে লোকে গালাগালি দিত। আমি সেই জন্য তাঁদের স্যালুট করি। এঁরা হিম্মত দেখিয়েছেন। ওই বুদ্ধিজীবীদের ছেড়ে এসে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সাধারণ মানুষ তাঁদের আশীর্বাদ দিয়েছেন। আমিও বলছি, হ্যাঁ আপনার আদর্শ আলাদা হতে পারে কিন্তু আপনি দেখান সমাজের জন্য কী করেছেন। কেন সমাজ আপনাকে ভুলে গেল আজকে? কেন স্বীকৃতি দিচ্ছে না? এঁরা স্রোতের বিরুদ্ধে লড়াই করে, আমাদের সঙ্গে থেকে, আজ নিজেদের সৎ প্রমাণ করেছেন। মানুষ তাঁদের স্বীকৃতি দিয়েছে। এটাই আমি বলতে চেয়েছি।
প্রশ্ন: এর আগে অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়দের সমালোচনা করে আপনি বিতর্কে জড়িয়েছেন। আপনার কাছে কেন্দ্রীয় নেতাদের 'ধমক ফোন' এসেছে শোনা গিয়েছে।
দিলীপ: দেখুন, অনেকেই কাউকে ভগবান বানিয়ে, তাঁকে পুজো দিয়ে কাম-ধান্দা করে। শনি ঠাকুরের মূর্তি রেখে দিয়ে রাস্তার ধারে মন্দির নির্মাণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এ রকম ভগবান অনেককে বানানো হয়েছে। আমার ওটাই প্রশ্ন, আপনাদের তো সমাজ অনেক কিছু দিয়েছে। আপনি সমাজকে কী দিলেন? কন্ট্রিবিউশন কী? আপনি আমার সমালোচনা করছেন করুন, যে পার্টিগুলোর হয়ে কথা বলেছেন তারা কী দিয়েছে সমাজকে? আজ সেই পার্টিগুলো শেষ হয়ে গেল কেন? আমি ঠিক ছিলাম। আমার বক্তব্য ঠিক ছিল। মানুষ আমার কথা শুনেছে। আমি ঠিক তা প্রমাণ হয়েছে। যাঁরা আমাকে ছোট বলছেন, বিতর্কিত বলছেন, তাঁরা ভুল প্রমাণিত হয়েছেন।
প্রশ্ন: গোপীবল্লভপুরের ‘নাড়ু’ আজ অনেক উপরে। আকাশ-প্রচারেও অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু আপনার কাছের কে? উপরতলার মানুষ নাকি হেলিকপ্টার থেকে নীচে যাঁদের দেখা যাচ্ছে তাঁরা?
দিলীপ: কত উপরে কে উঠল, পাঁচতলা, ছ’তলা, দশতলায় কে থাকছে বা হেলিকপ্টারে ঘুরছে এটা বড় কথা নয়, সে সমাজের জন্য কী করতে পারল, তাঁর জীবনের যে নীতি-নৈতিকতা সেটা কোন দিকে যাচ্ছে, মানুষ তাঁকে স্বীকার করেছে কিনা সেটাই বড় কথা। আমি সেটাই করার চেষ্টা করছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy