পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তর্কাতর্কি জগন্নাথ সরকারের। শনিবার শান্তিপুরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
বঙ্গ বিধানসভার চতুর্থ দফার ভোটে শীতলখুচির গুলি-কাণ্ড ঘিরে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। তারা হিংসা ঠেকাতে ‘ব্যর্থ’ বলেও অভিযোগ তুলেছে রাজ্যের শাসক দল। শনিবার, পঞ্চম পর্বের ভোটেও আধাসেনার বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগে দিনভর সরগরম থাকল বাংলা। এ দিনেও বাহিনীর ‘অতি সক্রিয়তা’ চোখে পড়েছে বেশ কিছু জায়গায়। সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, ভোটের ময়দানে যারা পরস্পরের বিরুদ্ধে যুযুধান, সেই শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং মূল বিরোধী দল বিজেপি দু’পক্ষই এ বার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমস্বরে সরব।
বিশেষ করে নদিয়ায় বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজেপির অভিযোগের মাত্রা অধিকতর তীব্র। রানাঘাটের সাংসদ তথা নদিয়ার শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকারের অভিযোগ, পলাশির যুদ্ধের মতোই বাহিনী থাকা সত্ত্বেও তাদের এ দিন ঠিকঠাক ব্যবহার করা হয়নি। বিজেপির ভোটারদের বুথে ঢুকতে এবং পোলিং এজেন্ট বসতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ পেয়ে সকালেই হরিপুরে ৭১ নম্বর বুথে হাজির হন তিনি। পাশের চাঁদকুড়ি গ্রামে গিয়ে কিছু ভোটার এবং পোলিং এজেন্টকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। এর মধ্যে শান্তিপুর থানার ওসি সুমন দাসের সঙ্গে দেখা হলে তিনি জানতে চান, কেন এখনও মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হল না। ওই এলাকায় মোতায়েন বাহিনীর বিরুদ্ধেও পক্ষপাতের অভিযোগ তোলেন তিনি।
জগন্নাথের অভিযোগ, “শুক্রবার রাতে এই এলাকায় তৃণমূলের বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়িয়েছে। এ দিন ভোট দিতে দেয়নি। আমার পোলিং এজেন্টকে পর্যন্ত যেতে দেয়নি বুথে। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকতে কী করে হয় এ-সব? ওদের পুরো সেটিং হয়ে গিয়েছে তৃণমূলের সঙ্গে।” জওয়ানদের সঙ্গেও তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। খবর পেয়ে পুলিশ পর্যবেক্ষক নওয়াল বজাজ এলে উত্তেজিত ভাবে তাঁর কাছেও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জগন্নাথ। পুলিশ পর্যবেক্ষক বলেন, “চিন্তা নেই। প্রচুর বাহিনী আছে।” জগন্নাথ পাল্টা বলেন, “বাহিনী থেকে কী হবে? পলাশির যুদ্ধেও তো সিরাজের পক্ষে প্রচুর সেনা ছিল। কিন্তু তাদের ব্যবহার করা হয়নি। এখানেও তা-ই হচ্ছে!”
পূর্ব বর্ধমানের কয়েকটি কেন্দ্রের বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটারদের বাধা দেয়, প্রভাবিত করে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। মন্তেশ্বর কেন্দ্রের চারটি বুথে বিজেপি কর্মীরা বাহিনীকে নিয়ে ভোটারদের বাধা দিয়েছে বলেও অভিযোগ। এ ছাড়া জামালপুর ও বর্ধমান দক্ষিণের একটি করে বুথে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা, কালনার এক বুথে তৃণমূলের এজেন্টকে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে বাহিনীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, দুপুরে দেগঙ্গার ১৭০ নম্বর বুথ, যাদবপুর এলাকায় পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী-সহ কয়েক জন তৃণমূ কর্মীকে লাঠিপেটা করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
ডাবগ্রামের তৃণমূলের প্রার্থী গৌতম দেব, শিলিগুড়ির ওমপ্রকাশ মিশ্রের অভিযোগ, বিভিন্ন এলাকায় বিজেপির হয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছে বাহিনী। ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির পোড়াঝাড়ে তৃণমূলের এক বুথ সভাপতিকে ভোট দেওয়ার সময় বিজেপির লোকজনের কথায় লাঠিপেটা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। গৌতম পরে ওই নেতাকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যান। বাহিনী শিলিগুড়ির টিকিয়াপাড়া, নীলনলিনী হাইস্কুল এলাকায় বিজেপি প্রার্থী শঙ্কর ঘোষকে বুথে ঢোকার মুখে আটকে দেয় বলে অভিযোগ। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) আরিজ আফতাব অবশ্য বলেছেন, ‘‘প্রার্থীরা বুথে ঢুকতে পারবেন, এটা কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশকে বলা হয়েছে।’’
ময়নাগুড়ির দোমোহনি-১ পঞ্চায়েতের বর্মণপাড়া প্রাথমিক স্কুলের বুথে এক পোলিং এজেন্টকে লাঠিপেটা করার অভিযোগ ওঠে জওয়ানদের বিরুদ্ধে। এমনকি ময়নাগুড়ি হাইস্কুলের সামনে বাহিনীর কয়েক জন জওয়ানের মুখে ‘খেলা হবে’ স্লোগানও শোনা গিয়েছে বলে অভিযোগ। বাহিনী মালবাজারের ১৮৩ নম্বর বুথে বিজেপির হয়ে প্রচার করছিল বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। মালবাজারে পাশাপাশি ১৩৫ এবং ১৩৬ নম্বর বুথে বাহিনীর বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে। ধূপগুড়ির বারোঘোরিয়া অঞ্চলের বুথে বাহিনী এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে ভোট দিতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ তৃণমূলের। ওই দলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দুবরাজপুরে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী তো বিজেপি সরকারের।’’
তবে সল্টলেকের মতো কিছু এলাকায় অশান্তি না-হওয়ায় ভোটারদের একাংশের প্রশংসা পেয়েছে বাহিনী। বারাসতে ‘অসুস্থ’ ভোটারের প্রতি আধাসেনার মানবিক ব্যবহারের প্রশংসা করেছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy