প্রথম বামফ্রন্ট সরকার যে বার রাজ্যে প্রতিষ্ঠা হল, কাশীপুর আসন থেকে জিতেছিলেন যুব নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পাঁচ বছর পরে কাশীপুরে হেরে গিয়ে পরবর্তী কালে তিনি সরে গিয়েছিলেন যাদবপুরে। কিন্তু কাশীপুর থেকে লাল রং মুছে যায়নি। এ বার ভোটের দিন অভ্যাসবশত খবর নিতে গিয়ে সেই কাশীপুর সম্পর্কেই দলের অন্দরমহলে এলাকার প্রাক্তন বিধায়ককে আক্ষেপ করতে হল, পার্টিটা গেল কোথায়!
কাশীপুর-বেলগাছিয়া যে সন্ত্রাস-কবলিত এলাকা, সিপিএমের বিলক্ষণ জানা ছিল। ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনে নিয়মমাফিক দরবারও করা হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোটের দিন কী দেখল কাশীপুর? যেখানেই তৃণমূল গণ্ডগোল পাকাচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে, দৌড়ে যাচ্ছেন ওই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষ। বন্যার মতো অভিযোগ আসছে আর তাল রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রার্থী নিজে। ভোট শুরুর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় দলের সহযোদ্ধাদের কাছে তাঁর আবেদন ছিল, গোলমাল হলেও বুথ কামড়ে পড়ে থাকতে হবে। এক সময় তাঁর কন্যা পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় জানাতে বাধ্য হলেন, যেখানেই অভিযোগ আসছে, তাঁর মা সেখানেই যাচ্ছেন। সকলের সহযোগিতা কাম্য।
কিন্তু কোথায় সহযোগিতা! স্বপন চক্রবর্তী, আনোয়ার খানদের নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকল কমিশন এবং পুলিশ। কিন্তু জমি আঁকড়ে লড়াই করার জন্য সিপিএমের কর্মী বাহিনী উধাও! প্রবীণ নেতা রাজদেও গোয়ালা তবু অশক্ত শরীরে যা পেরেছেন, ছোটাছুটি করেছেন। সিপিএমের অন্দরের খবর, এলাকায় দলের একাংশের নাকি কাশীপুর-বেলগাছিয়ায় প্রার্থী পছন্দ ছিল না! কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টিতে তার জন্য ভোটের দিন ঘরে খিল দিয়ে ক্যাডার বাহিনী বসে থাকবে, ভাবতে পারেনি আলিমুদ্দিন!
শুধু কাশীপুরই বা কেন? এন্টালি কেন্দ্রের কিছু বুথে এজেন্টই বসাতে পারেনি সিপিএম। প্রশ্ন করলে ওই কেন্দ্রের প্রার্থী দেবেশ দাসকে অসহায় ভাবে বলতে হয়েছে, সন্ত্রাসের জন্য এই পরিস্থিতি। কিন্তু দলেরই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বিস্ময়, ‘‘নারদ থেকে উড়ালপুল বিপর্যয় তো আছেই। শহরের মানুষের মধ্যে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা সব চেয়ে বেশি। তার উপরে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব আছে। কোথাও কোনও কিছু ঘটলেই সারাক্ষণ মিডিয়ার নজর রয়েছে। এত কিছুর পরেও রাজধানী শহরে সব বুথে এজেন্ট যাবে না! মেরে বার করে দিলে দেবে!’’ শ্যামপুকুর বা মানিকতলায় তৃণমূল যেখানে নিজেদের গোলমালে জর্জরিত, সেখানেও সিপিএম কর্মীদের সে ভাবে পথে বেরোতে না দেখে ক্ষোভ আরও বেড়েছে আলিমুদ্দিনের।
কলকাতা জেলা সিপিএমের জন্য চার্জশিট আছে আরও। জেলায় জেলায় বামফ্রন্ট বা বাম-কংগ্রেসের যৌথ প্রচার নিয়ে যেখানে তুমুল উৎসাহ, কলকাতা শহর সেখানে প্রচারে পিছিয়ে বলে দলেরই একাংশের অভিমত। দলের দুই কেন্দ্রীয় নেতা কলকাতায় এসে কোথায় কখন প্রচারে যাবেন, সংবাদমাধ্যমের লোকজন তাঁদের কাছেই জানতে চেয়েছিলেন। কলকাতায় সভা-সমাবেশের প্রচার যে অন্য জেলার মতো হচ্ছে না, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তখনই ধরা পড়েছিল। প্রথম পর্বের ভোটের দিনের ছবি তাঁদের চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল পরের দফায় কলকাতার যে সব আসনে ভোট, তার মধ্যে কয়েকটিতে কংগ্রেসের প্রার্থী আছে। দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, বাম প্রার্থীদের যেখানে ভোটের দিন নিজেদের দায়িত্বে দৌড়তে হয়, জোট-সঙ্গীদের জন্য তা হলে কী হবে! রাজ্য সিপিএমের কাছেই রিপোর্ট এসেছে, টালিগঞ্জে অরূপ বিশ্বাসকে হারানো যাবে না ধরে নিয়ে এলাকায় দলের একাংশ গা-ই ঘামাচ্ছে না! অথচ মধুজা সেন রায়ের জন্য সীমিত শক্তি নিয়ে কংগ্রেস ঝাঁপিয়েছে!
প্রকাশ্যে নেতারা রাজধানীর নেতা-কর্মীদের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন। দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘বুথের বাইরে ক্যাম্প অফিস করার উপরে জোর দিইনি। বিশেষ কাজ হয় না। তাই হয়তো সে ভাবে চোখে পড়েনি। কিন্তু পাড়ায় পাড়ায় প্রতিরোধের জন্য কর্মীরা ছিলেন।’’ বাস্তব যদিও সে কথা বলছে না। কিছু ক্ষেত্রে তাঁদের ঘাটতি ছিল মেনে নিয়েও সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমরা কি রাস্তায় পাল্টা মারামারি করতাম? যেখানে যেখানে সম্ভব এই হুমকি-শাসানির মধ্যেও ভোটারদের বুথে নিয়ে আসার চেষ্টা আমরা করেছি। বুথ থেকে বেরোনোর সময়ে এজেন্টদের আটকানো হয়েছে, মারধর করেছে। আমরা পালাইনি। সেই জন্যই তৃণমূল লোকসভা বা পুরসভার মতো ভোট এ বার করতে পারেনি।’’
আলিমুদ্দিনের সংশয় অবশ্য যাচ্ছে না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy