হুমকির কথা শোনাচ্ছেন বুথ এজেন্ট। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
একেবারে জামাকাপড় খুলে নিলামে চড়ানোর হুমকি!
ভয়ে কাঁপছিলেন মহিলা। বুথে থাকতে সাহস করেননি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের থেকেও কোনও সাহায্য মেলেনি বলে তাঁর অভিযোগ।
কে ওই মহিলা?
কেশপুরের একটি বুথের সিপিএম এজেন্ট। তাঁর অভিযোগ, শাসক দলের লোকজন তাঁকে গালিগালাজ করে বুথ থেকে বের করে দিল। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বুথ থেকে বেরোতে চাইছিলাম না। পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সামনেই ওরা জোর করে বের করে দেয়। প্রতিবাদ করায় হুমকি দেয়, জামাকাপড় খুলে নিয়ে নিলামে চড়াবে।’’ একটু দম নিয়ে তাঁর ক্ষোভ, ‘‘ওদের নেত্রী একজন মহিলা ভাবতেই কষ্ট হয়!”
সোমবার কেশপুরের ভোটে এ ছবি দুপুর সাড়ে ১২টার। তবে, এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সকাল থেকে ভোট শেষ হওয়া ইস্তক একের পর এক বুথ ঘুরে বিরোধীদের মুখে শোনা গিয়েছে তৃণমূলের খবরদারির নানা অভিযোগ। এক সময়ে বামেদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ তুলত এই তৃণমূলই। দিনের শেষে তাই ভোট দিতে না পারা এক ভোটারকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘পরিবর্তন হয়েছে নামেই। কেশপুর রয়েছে কেশপুরেই। জোর যার, মুলুক তার। বছরের পর বছর দেখেই যাচ্ছি!’’
এমনিতে এই কেন্দ্রে ২৭৩টি বুথে সিপিএম এজেন্ট দিতে পেরেছিল মাত্র ১০০টির কিছু বেশি বুথে। ভোট শুরুর পরই খবর আসতে থাকে সিপিএমের বুথ এজেন্টের সংখ্যা আরও কমছে! কোনও বুথে তাদের এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কোথাও মেরে বের করে দেওয়া হয়েছে!
সকাল ১০টা। কেশপুরে সিপিএমের জোনাল কার্যালয় জামশেদ ভবনের সামনের বারান্দায় বসে রয়েছেন প্রার্থী রামেশ্বর দোলুই, এন্তাজ আলি, মানিক সেনগুপ্তরা। ভোটের ‘হাওয়া’ বুঝে কেশপুরের নির্বাচনী আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে ফোন করেন রামেশ্বরবাবু। বলেন, “এ রকম ভোটের মানে কী! পুলিশ নেই, কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই, পর্যবেক্ষকও নেই! একটা কাজ করুন। সরুইতে আমাদের যে এজেন্ট রয়েছেন, তাঁকে জামশেদ ভবনে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।”
সাড়ে ১০টা। দোগাছিয়া হাইমাদ্রাসার সামনে তৃণমূলের জটলা। বুথের ভিতরে কেন্দ্রীয় বাহিনী। জটলার দিকে তাদের নজর নেই। জটলায় মিশে থাকা তৃণমূল নেতা আলহাজউদ্দিন বলেন, “আমরা তো সব ভোট দিতে এসেছি।” পিপুড়দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পাওয়া গেল কেশপুরের তৃণমূল নেতা মহিউদ্দিন আহমেদকে। বুথের সামনে জটলা কেন? মহিউদ্দিন বলেন, “ভোট কেমন হচ্ছে দেখতে এসেছি।”
কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতা চোখে পড়েনি। সকালে ঝাটিয়ারার দু’টি বুথে সিপিএম এজেন্টদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বেলা একটু গড়াতেই তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষ বাধে গরগজপোতায়। জখম হন দু’পক্ষের তিনজন। এখানে বোমাবাজি হয় বলেও অভিযোগ। কিছু পরেই সংঘর্ষ বাধে চরকায়। জখম হন দু’পক্ষের চারজন। সিপিএম নেতা এন্তাজ আলি বলেন, “পঞ্চায়েত-লোকসভা ভোটের থেকেও খারাপ অবস্থা। ঘণ্টা তিনেক আগে ভোট শুরু হয়েছে। এখনই খবর পাচ্ছি, ৭৫টি বুথে অবাধে ছাপ্পা চলছে।”
বেলা যত গড়িয়েছে, বিরোধীদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, কেশপুর থেকে তাদের পাওয়ার কিছু নেই। দুপুরে তৃণমূল প্রার্থী শিউলি সাহাকে দেখা গিয়েছে হাসি মুখে। সিপিএমের মহিলা এজেন্টকে হুমকি দেওয়ার কথা তিনি মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘ওখানে তেমন কিছুই হয়নি। ওই মহিলা বুথ থেকে নিজেই বেরিয়ে যান।’’ বিরোধীদের অন্যান্য অভিযোগও উড়িয়ে তাঁর দাবি, ‘‘আমি নিজে প্রচুর বুথে ঘুরেছি। দেখেছি, মানুষ নিজের ভোট নিজে দিচ্ছেন! পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী— সকলেই খুব সক্রিয়। বারুদের গন্ধ নেই। গুলির আওয়াজ নেই। মানুষ সিপিএমের থেকে সরে গিয়েছে বলে ওরা কিছু বুথে এজেন্ট দিতে পারেনি।’’ প্রায় একই দাবি শোনা গিয়েছে ব্লক তৃণমূল সভাপতি সঞ্জয় পানের মুখেও।
বিরোধীদের অভিযোগ নিয়ে কী বলছে প্রশাসন?
রিটার্নিং অফিসার তথা জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা স্পিকটি নট!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy