সাংবাদিক বৈঠকে সূর্যকান্ত মিশ্র। মঙ্গলবার প্রেস ক্লাবে।-নিজস্ব চিত্র।
মাসখানেক আগেও প্রশ্ন ছিল, বিরোধীরা আদৌ তৃণমূলের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবে কি? জোট গড়ে বিরোধীরা কি কিছুটা লড়াই দেওয়ার জমি খুঁজে পাবে? আর এখন ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন উঠছে, ভোটের পরে সরকার গ়়ড়ার সুযোগ এলে সিপিএম কি কংগ্রেসকে সঙ্গে নেবে? জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রীই বা কে হবেন?
অল্প সময়ের ব্যবধানে এই উৎসাহই প্রমাণ করে দিচ্ছে, এ বারের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-বাম বোঝাপড়াই সুপারহিট! কলকাতা প্রেস ক্লাবে মঙ্গলবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানেও তার পরিষ্কার ইঙ্গিত মিলল। এবং প্রশ্নের জবাবে সূর্যবাবুও ধোঁয়াশা না রেখে জানিয়ে দিলেন, ভোটে জিতলে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গড়তে তাঁদের কোনও অসুবিধা হবে না। তাঁর আশ্বাস, ভোটের আগে বাম ও কংগ্রেস আলাদা আলাদা ইস্তাহার তৈরি করেছে ঠিকই। কিন্তু ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে দু’পক্ষের পৃথক ইস্তাহার অভিন্ন সরকার গড়ার পথে বাধা হবে না।
তৃণমূলকে হারানোর লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলির ঐক্য গড়ে তোলা হলেও সরকার গড়ার সুযোগ এলে কংগ্রেসের সঙ্গে যাওয়া উচিত কি না, সেই প্রশ্নে বামেদের একাংশের মধ্যে সংশয় আছে। কিন্তু সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, যৌথ সরকার গড়ার বিষয়টি তাঁরা খোলা মনেই ভেবে রেখেছেন। এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সূর্যবাবু বলেন, ‘‘অন্যান্য বার আমরা ভোটের সময় বামফ্রন্ট সরকার গড়ার ডাক দিতাম। এ বার কিন্তু আমরা অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গড়ার কথা বলিনি। আমরা বলেছি বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের কথা। ভোটের পরে পরিস্থিতি এলে কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলি আলোচনায় বসেই সরকার গঠন করবে।’’
বাম ও গণতান্ত্রিক সরকার কোন ১২টি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, বামেদের ইস্তাহারেই তা স্পষ্ট করে দেওয়া আছে। সূর্যবাবু এ দিন আরও সংযোজন করেছেন, ‘‘ইস্তাহারে আমরা আমাদের কথা বলেছি। কংগ্রেসও ইস্তাহার তৈরি করেছে। কিন্তু পরবর্তী আলোচনায় আলাদা ইস্তাহার কোনও বাধা হবে না।’’ একই বক্তব্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীরও। তাঁদেরও যুক্তি, কংগ্রেস তাদের নীতি-আদর্শ মোতাবেক ইস্তাহার তৈরি করছে। ভোটের পরে দু’পক্ষের ইস্তাহার মিলিয়ে অভিন্ন কর্মসূচি তৈরি করা হবে। যেমন হয়েছিল, ২০০৪ সালে কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারকে বামেরা সমর্থন করার সময়ে। অধীরের দাবি, ‘‘যে জোটকে তৃণমূল নেত্রী কটাক্ষ করেছিলেন, সেই জোটই ক্রমে তৃণমূলের গলার ফাঁস হয়ে চেপে বসছে! বাংলার মানুষের কাছে আজ তৃণমূলের বিকল্প বাম-কংগ্রেস জোটই।’’
বস্তুত, তৃণমূল ও বিজেপি-কে হারাতে বৃহত্তর ঐক্যের রাস্তায় কোনও কাঁটাই রাখতে চাইছেন না সূর্যবাবুরা। ইতিমধ্যে প্রথম দফার প্রচারে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে সরাসরি কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো, মানস ভুঁইয়া, জ্ঞানসিংহ সোহনপালদের (চাচা) নাম করে তাঁদের জেতানোর ডাক দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। প্রেস ক্লাবেও এ দিন তিনি সে আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করেছেন। পাশাপাশি জানিয়েছেন, যেখানে যেমন প্রয়োজন, সেখানে কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ প্রচারে যেতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সিপিএমের জেলা নেতৃত্বকে তা দেখতে বলা হয়েছে। আর এক ধাপ এগিয়ে অধীর বলেছেন, ‘‘আমরা কোনও কিছু নাটক করে করছি না! অধীর-সূর্যকান্তকেও একসঙ্গে দেখা যেতে পারে খুব শীঘ্রই।’’ কংগ্রেসের একটি সূত্রের ইঙ্গিত, সূর্যবাবুর কেন্দ্র নারায়ণগড়ে প্রচারে যেতে পারেন প্রদেশ সভাপতি। তবে রাজ্যে দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে প্রচারে আসার কথা কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর। সেই সভায় সিপিএম অংশ নেবে কি না, তা এখনও ঠিক হয়নি।
কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া মসৃণ করার চেষ্টার পাশাপাশি সূর্যবাবু ফের সরব হয়েছেন তৃণমূল বিজেপি-র আঁতাঁতের অভিযোগে। সূর্যবাবুর আগেই প্রেস ক্লাবে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এ দিন আবার বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস-সিপিএম তাদের অবস্থান স্পষ্ট করুক। কেরলে লড়াই করবে আর বাংলায় ইলু ইলু করবে, এটা কেমন! অন্তত কমিউনিস্টরা তো স্পষ্ট করুক অবস্থান। তারা তো সিদ্ধান্ত থেকে সরে না, আদর্শের কথা বলে।’’ জবাবে সূর্যবাবু বলেছেন, ‘‘দেশের আলাদা আলাদা রাজ্যে পরিস্থিতি যে আলাদা, এটা তো সহজ কথা!’’
জোটের বার্তাকেই আরও জোরালো করে এ দিন চেতলা পার্ক থেকে ভবানীপুরের কংগ্রেস প্রার্থী দীপা দাশমুন্সির মিছিলে দেখা গিয়েছে সিপিএম থেকে সিপিআই বা ফরওয়ার্ড ব্লক, সব বাম দলের পতাকা। কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য, ওমপ্রকাশ মিশ্র, রাসবিহারীর প্রার্থী আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়দের পাশাপাশিই মিছিলে হেঁটেছেন সিপিএম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার নেতা মানব মুখোপাধ্যায়, সিপিআইয়ের প্রবীর দেব প্রমুখ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy