তৈরি করা হচ্ছে শৌচাগার। — নিজস্ব চিত্র
একটা লম্বাটে বারান্দা, টানা পরপর খান কয়েক ক্লাসরুম। তারপর এক চিলতে জমি। আম-ছায়ায় ইটৃ, বালি, চুনের শাসনে ফুট আটেকের একটা ছোট্ট আড়াল গড়ে উঠছে সেই জমিতেই। সন্ন্যাসীডাঙা গার্লস জুনিয়র হাইস্কুলের মেয়েরা মনে মনে যার একটা নাম দিয়েছে—স্বস্তি।
টানা সাড়ে তিন বছর পরে, মাঠ-ময়দান, ঝোপ-ঝাড়ে ছুটতে না হওয়ার ঘোর স্বস্তি। নির্বাচনের কল্যাণে একটা পাকাপোক্ত শৌচাগার পাচ্ছে তারা। স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গেই শিক্ষক-শিক্ষিকারাও যা দেখে স্বগতোক্তি করে বসছেন, ‘‘বাব্বাঃ, অন্তত এ দিক ও দিক দৌড়তে হবে না আর!’’
মুর্শিদাবাদের লালবাগ এলাকায়, স্কুলটা মাথা তুলেছিল ২০০১২ সালে। ক্লাসঘর, বারান্দা, আম-জামরুলের ছায়া—ছিল সবই। ছিল না একটা শৌচাগার। স্থানীয় প্রশাসন থেকে পঞ্চায়েত, কারও খেয়ালই হয়নি, পড়ুয়াদের যে এই প্রয়োজনটাও বড় জরুরি। আসন্ন নির্বাচনে, ওই স্কুলেই বুথ হওয়ায় এ বার ভোট কর্মীদের সৌজন্যেই এই শৌচাগারের প্রাপ্তিযোগ।
তাঁর স্কুল পড়ুয়া মেয়ে বড় হচ্ছে। আয়েসা বিবি বলছেন, ‘‘প্রয়োজন পড়লেই মেয়েটাকে ছুটতে হত আশপাশের ঝোপের আড়ালে। এখন সপ্তম শ্রেণি। আর তো মাঠে-ঘাটে ছুটতে পারে না। তাই ছুটে আসে বাড়িতেই। এ বার অন্তত স্বস্তি।’’ আর এক অভিবাবক রেহেনা বিবি বলছেন, ‘‘এই বয়ঃসন্ধি, মেয়েদের একটু আড়ালের প্রয়োজনটা কতটা জরুরি বলুন তো? স্কুল-পঞ্চায়েত কারও কোনও খেয়ালই ছিল না।’’
তা এত দিন সে ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষেরই বা টনক নড়েনি কেন?
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বেলি মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি এই স্কুলে দায়িত্ব পেয়েছি প্রায় দেড় বছর। ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের অসুবিধার কথা ভেবে বছরখানেক ধরে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে আবেদন করছি। সাড়া যে মেলেনি দেখতেই পাচ্ছেন।’’ স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান সিপিআমের সালেহা বিবির কথায়, ‘‘একেবারেই জানতাম না, ওই স্কুলে শৌচাগার নেই। জানলে, করে দিতাম।’’
পালাবদলের পরে রাজ্যের অধিকাংশ জেলাই নির্মল গ্রাম হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই পড়শি জেলা নদিয়া এ ব্যাপারে ইউনিসেফের শংসাপত্র পেয়ে গিয়েছে। মুর্শিদাবাদও যে পিছিয়ে নেই, জনসভায় বার কয়েক তা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গ্রামের আনাচকানাচ ঘুরে কাজ করার জন্য তাঁর প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন খোদ মুর্সিদাবাদ জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও। তিনি অবশ্য বলছেন, ‘‘য়ে সব স্কুল আবেদন করেছে তাদের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শৌচাগার গড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই স্কুলটি আবেদন করেনি কেন জানি না। তবে আমি খোঁজ নিচ্ছি কেন এত দিন ওখানে শৌচাগার গড়া হয়নি।’’
স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী বলছে, ‘‘আমি যখন নীচুক্লাসে পড়তাম তখন নির্ধ্বিদায় পাশের মাঠে চলে যেতাম। এখন তো আর পারি না। লজ্জা লাগত। তাই তেমন হলে বাড়ি ছুটতাম।’’ এই বাড়ি ছুটতে গিয়েই রাস্তায় এক দফা ‘লজ্জায়’ পড়েছিল এমন অভিজ্ঞতাও রয়েছে ছাত্র-ছাত্রীদের। স্কুলের শিক্ষক বলছেন, ‘‘তারপর থেকেই আমাদের স্কুলের অদূরেই একটি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে, ছেলে-মেয়েরা অনেক সময়ে সেখানেও যেত।’’ তবে সেটি মেয়েদের স্কুল নয়। তাই একটু উঁচু ক্লাসের মেয়েদের অসুবিধা দূর হয়নি। নির্বাচন কমিশন সেই অসুবিধা কি়্চিৎ লাঘব করল তাদের।
কমিশনের এখন কড়া নির্দেশ—এখন থেকে প্রতিটি বুথে সমরকমের সুযোগ-সুবিধে থাকতে হবে। যাতে ভোট দিতে এসে কোনও অসুবিধায় না পড়েন ভোটাররা। বুথে ভোট টানতেই এই নির্দেশ কমিশনের।
মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের ১৮ নম্বর সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এত দিন ওই স্কুলে বুথ ছিল না। এ বছরই ১৮৩ নম্বর বুথ করা হয়েছে ওই স্কুলে। স্কুলে দু’টি ভাল ঘর রয়েছে। বিদ্যুৎও রয়েছে, এমনকী প্রতিবন্ধী কোনও ভোটারকে চেয়ারে বসিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। নেই শুধু শৌচাগার।’’
সেটুকুই করে দিচ্ছে কমিশন। স্বস্তির হাসি হাসছে স্কুলের মেয়েরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy