Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪

এইমস আবেগেই দীপার পাশে থাকতে চায় রায়গঞ্জ

এইমসের ধাঁচের হাসপাতাল না পাওয়ায় রায়গঞ্জে তৃণমূল বিরোধী হাওয়া বরাবরই বেশ ঝাঁঝালো। এ বার রায়গঞ্জেরই ঘরের বৌ দীপা দাশমুন্সি তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছে বিধানসভায় লড়তে যাচ্ছেন শুনে তাই খুশি রায়গঞ্জের তৃণমূল বিরোধী শিবির।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০২:৪৮
Share: Save:

এইমসের ধাঁচের হাসপাতাল না পাওয়ায় রায়গঞ্জে তৃণমূল বিরোধী হাওয়া বরাবরই বেশ ঝাঁঝালো। এ বার রায়গঞ্জেরই ঘরের বৌ দীপা দাশমুন্সি তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছে বিধানসভায় লড়তে যাচ্ছেন শুনে তাই খুশি রায়গঞ্জের তৃণমূল বিরোধী শিবির। রায়গঞ্জের তৃণমূল বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, মমতা বিধানসভায় দীপার কাছে হারলে এইমস নিয়ে তাঁদের নৈতিক জয় হবে। রায়গঞ্জ মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ি বলেন, ‘‘দীপাই বরাবর রায়গঞ্জে এইমসের দাবিতে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। তিনি কলকাতাতেও সেই আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু তৃণমূল সরকার কিছুতেই রাজি হয়নি। তাই এ বার মমতার সঙ্গে তাঁর লড়াইয়ে রায়গঞ্জের বেশিরভাগ মানুষই দীপার পাশে থাকবেন।’’ তৃণমূল অবশ্য দাবি করেছে, দীপা পুরোপুরি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি মমতার কাছে বড় ব্যবধানেই হারবেন বলে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের দাবি।

দীপা যে তাঁর জেলায় না দাঁড়িয়ে কলকাতায় গিয়ে লড়তে যাচ্ছেন, তাতেও কোনও মন খারাপ নেই উত্তর দিনাজপুরের। লোকসভা ভোটে দীপা হেরেছেন মাত্র ১৬৩৪ ভোটে। তারপরে তিনি এ বার বিধানসভা নির্বাচনে গোয়ালপোখরে বা কালিয়াগঞ্জে দাঁড়াবেন বলে মনে করছিলেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতারা। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দের বক্তব্য, ‘‘দীপা এখানে দাঁড়াননি বলে মন খারাপ হত যদি সাধারণ কোনও আসনে তিনি দাঁড়াতেন। কিন্তু দীপা সে পথে হাঁটেননি। তিনি টক্করে যাচ্ছেন খোদ তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গেই।’’ স্থানীয় এক শিক্ষক দীপ চাকির কথায়, ‘‘দীপা তাঁর স্বামী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির দেখানো পথেই হাঁটছেন। প্রিয়রঞ্জনও মুখোমুখি লড়াই পছন্দ করেন।’’

দু’বছরে রাজনীতির অঙ্কও বদলে গিয়েছে। যে মহম্মদ সেলিম দীপাকে লোকসভায় হারিয়েছিলেন, তিনি এ দিন বলেন, ‘‘দীপাদেবী রাজ্য রাজনীতিতে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের একজন প্রতিবাদী নেত্রী হিসেবে পরিচিত মুখ। প্রিয়বাবু অসুস্থ থাকলেও দক্ষিণ কলকাতায় এখনও তাঁর বহু শুভানুধ্যায়ী মানুষ রয়েছেন। তা ছাড়া, একজন রাজনৈতিক হেভিওয়েট মহিলা প্রার্থীর বিরুদ্ধে আরেকজন রাজনৈতিক হেভিওয়েট মহিলা প্রার্থী দাঁড়ালে লড়াইটা সেয়ানে সেয়ানে হয়।’’ সেলিম বলেন, ‘‘আমি ও আমার দলের তরফে দীপাদেবীর সাফল্য কামনা করছি। জোটপ্রার্থী হিসেবে দল দীপাদেবীকে সমর্থন করবে।’’

কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি পৃথক ভাবে দাবি করেছে, মমতাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিলেন দীপা। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বিকেলেই দীপা জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তকে এসএমএস করে ভবানীপুর কেন্দ্রে মমতার বিরুদ্ধে তাঁর প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।

দীপা ২০০৬ সালে গোয়ালপোখর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রথমবার কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়ে বিধায়ক হন। ২০০৮ সালে তত্কালীন রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়বাবু অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ২০০৯ সালে তিনি রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হন। দীপাদেবী মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে রাজি হওয়ায় খুশি গোয়ালপোখর ও তাঁর খাসতালুক কালিয়াগঞ্জের কংগ্রেসের নেতা কর্মীরাও।

গোয়ালপোখরের কংগ্রেস প্রার্থী মহম্মদ আফজল হোসেন ও কালিয়াগঞ্জ পুরপ্রধান কংগ্রেসের অরুণ দে সরকারের দাবি, ‘‘নির্বাচনে প্রিয়বাবুর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দীপাদেবী মমতাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবেন।’’ তাঁদের কথায়, প্রিয়বাবু অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীর মতো একজন হেভিওয়েট প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে দীপাদেবী যে সাহস, ইতিবাচক মানসিকতা ও রাজনৈতিক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন, তা ভবিষ্যতে এ রাজ্যে কংগ্রেসকে আরও শক্তিশালী করবে।

বিজেপির জেলা সভাপতি নির্মল দামের দাবি, দীপা ছাড়া মমতার বিরুদ্ধে অন্য কেউ প্রার্থী হলে, লড়াইটা সমানে সমানে হত না।

যদিও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া নিয়ে দীপাকে গুরুত্ব দিতে চাইছে না তৃণমূল। জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্যের দাবি, মমতার সঙ্গে এ রাজ্যের কোনও নেতা নেত্রীর তুলনা করাটাই হাস্যকর। তাই রায়গঞ্জের মতো ভবানীপুরের মানুষও উন্নয়নের স্বার্থে প্রিয়হীন ও বহিরাগত দীপাকে প্রত্যাখ্যান করবেন।

দীপার দেওর তৃণমূলের পবিত্ররঞ্জ দাশমুন্সি বলেন, ‘‘দলনেত্রীর সমর্থনে আমাকে প্রচারে ডাকলে আমি প্রচারেই বাসিন্দাদের যা বোঝানোর বোঝাব। এটা রাজনৈতিক লড়াই। এতে বৌদির সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ হবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE