কেউ বলছেন তাঁর সর্দি-গর্মি লেগেছে। তাই তিনি বাড়িতে। কেউ আবার বলছেন তিনি ব্যবসার কাজে নিজের এলাকায় অফিসে ব্যস্ত।আর পুলিশ বলছে, আসলে ওঁরা সকলেই নজরবন্দি।
গত ২৫ তারিখ পঞ্চম দফার ভোটের দিন নিউ টাউন ও রাজারহাটে শাসকদলের হয়ে সিন্ডিকেট দাদাদের দাদাগিরি করার খবর ছিল পুলিশের কাছে। কিন্তু সে দিন সকাল থেকেই ওই দাদাদের কাউকে এলাকা ছাড়া, কাউকে নিজের ডেরাতেই নজরবন্দি করে দিয়েছিল পুলিশ। যে কারণে নিজেদের এলাকায় থেকেও ভজাই সর্দার, সইফুল ইসলাম, ডাম্পিদের মতো সিন্ডিকেট দাদাদের অনেকেই বুথ কিংবা বুথ চত্বরে ঘেঁষতে পারেননি।
পুলিশ জানিয়েছে, শুধু ওই দিনের জন্যই নয়। কলকাতা কিংবা দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভোটেও যাতে ওই দাদারা অথবা তাঁদের বাহিনী কোনও ভাবে নাক গলাতে না পারে, তার জন্য তাঁদের ষষ্ঠ দফার ভোটেও নজরবন্দি করে রাখা হবে। বিধাননগরের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘সকলের উপরেই পুলিশের পূর্ণ মাত্রায় নজর রয়েছে।’’
পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘শনিবার ষষ্ঠ দফার ভোটে বন্দর এলাকা ও নিউ টাউন লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় অঞ্চলে সিন্ডিকেট বাহিনীর যাওয়া খুব সহজ। তাই তাদের উপরে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। তাদের এলাকার ভোট মেটার পরেও দুষ্কৃতীদের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলছে।’’
উল্লেখ্য, বুধবারই হাওড়ার বালি বাজার এলাকা থেকে মোহন বিশ্বাস নামে কুখ্যাত এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে বাগুইআটি থানার পুলিশ। বাগুইআটি এলাকার এক যুব তৃণমূল নেতার কার্যত ডানহাত মোহন। পুলিশকে মারধর থেকে শুরু করে সিন্ডিকেটের তোলাবাজি-সহ নানা অভিযোগ মোহনের বিরুদ্ধে রয়েছে বলেই পুলিশের দাবি। তবে মোহনকে পুলিশ পুরনো একটি মারামারির অভিযেগে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশকর্তারা মনে করেন, পঞ্চম দফার ভোটে দাদাদের বাহিনীরা ভূতের নেত্য করতে পারেনি। যে কারণে সিন্ডিকেট সাম্রাজ্যে শাসক দল চাপে রয়েছে। এর পরে শেষ দু’দফা ভোটে বিধাননগরের পুলিশের দেখানো পথেই চলতে চাইবে অন্যান্য এলাকার পুলিশ। ফলত সুষ্ঠু ভোট করানোর চেষ্টায় প্রশাসন আরও কঠিন হবে। আর সেই চাপ ঠেকাতে শাসক দলের ভজাই, গফ্ফর, ডাম্পিদের মতো সিন্ডিকেট নেতাদের বাহিনীর প্রয়োজন আরও বেশি করে হবে। তাই যতটা সম্ভব ওই সিন্ডিকেট নেতাদের আতস কাচের নীচে রাখতে চাইছে পুলিশ প্রশাসন।
উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগে বিধাননগর পুর-নির্বাচনের সময়েই ভাঙড় থেকে নারায়ণপুর এলাকায় এসেছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার দাপুটে নেতা আরাবুল ইসলামের বাহিনী। এ বার যাতে তেমন কিছু না ঘটে,
তাই ভাঙড় লাগোয়া চাঁদপুর এলাকায় পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর
চাপ থাকবে।যদিও সিন্ডিকেট মহলের খবর, বরাবরই সিন্ডিকেটের পাশে দাঁড়ানো নিউ টাউনের বিদায়ী বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের সঙ্গে আরাবুলের সম্পর্ক ভাল। কিন্তু আরাবুল এ বার ভাঙড়ের প্রার্থী নন। তাই সেই বাহিনী ভাঙড়ে হয়তো ঢোকার চেষ্টা করবে না। তার বদলে তারা বন্দরের দিকে যেতে পারে। কারণ, বন্দরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে সব্যসাচীবাবুর সম্পর্কও ভাল। সিন্ডিকেট বাহিনীর মাটি গফ্ফর, টুটুন গাজিরা এখন এলাকাতেই নেই। তাঁরা এখন ঠিক কোথায়, দেখতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
গত পঞ্চম দফা ভোটে মাটি গফ্ফর বাড়িতে ছিলেন না বলেই দাবি করেছিল পরিবার। এ দিনও তিনি বাড়িতে নেই বলেই দাবি করা হল পরিবারের তরফে। কোথায় এখন গফ্ফর, তা-ও তাঁরা জানেন না বলেই দাবি।
যাঁরা এলাকায় আছেন, তাঁরা পুলিশের নজরদারিতে থাকার মতো কোনও কাজ করেন না বলে দাবি করেছেন। যেমন, সমীর সর্দার ওরফে ভজাইয়ের কথায়, ‘‘আমার সর্দি-গর্মি হয়েছে। তাই বাড়িতে শুয়ে আছি। কোথাওই যাব না, আমার কোনও বাহিনীও নেই। এ সবই সংবাদ মাধ্যমের মনগড়া কথা।’’
আবার নবাবপুর-যাত্রাগাছি এলাকার আর এক সিন্ডিকেট নেতা সইফুলের সহাস্য মন্তব্য, ‘‘পুলিশ আমাদের নজরে রাখছে, নাকি আমরা পুলিশকে নজরে রাখছি। ভোটের পর থেকেই আমি নিজের ব্যবসার কাজে ব্যস্ত। কে আমায় নজরে রাখছে, সেটা তার ব্যাপার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy