আজ বাদে কাল যুদ্ধু! হাওড়া এবং উত্তর ২৪ পরগনা মিলিয়ে ৪৯ আসন দখলের। যে দুই জেলায় সংখ্যালঘু ভোট ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ করে। তার ঠিক আগে, শনিবার বিজেপির সঙ্গে দিদির দলের ‘সহজাত বন্ধুত্বে’র ছবিটা একেবারে সামনে এনে দিল কংগ্রেস। যা নিশ্চিত ভাবেই দিদির দলের নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও গভীর করবে।
নরেন্দ্র মোদীর দল যে দিদির ‘সহজাত বন্ধু’, তা প্রমাণ করতে এ দিন বিবিসি চ্যানেলে দেওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি পুরনো সাক্ষাৎকারের ফুটেজ প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। যেখানে বিজেপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটে (এনডিএ) ফেরার দরজা খোলা রাখার কথা মেনে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মমতা বলছেন, ‘‘হ্যাঁ সব বিকল্পই খোলা থাকছে। ওঁরা (বিজেপি) তো আমাদের সহজাত (ন্যাচারাল) বন্ধু।’’
ফুটেজে বলা মমতার সে দিনের কথাগুলো গত এক বছরে বহু বার বলেছেন এ রাজ্যের বিরোধী বাম-কংগ্রেস নেতারা। সারদা-তদন্তের হঠাৎ থমকে যাওয়া থেকে রাজ্যসভায় একাধিক বিল পাশে মোদী সরকারকে ঘুরপথে দিদির দলের সাহায্য— সব নিয়েই সরব হয়েছেন তাঁরা। এমনকী নারদ থেকে বাঁচতে সম্প্রতি অরুণ জেটলির সঙ্গে মুকুল রায় গোপনে যে বৈঠক করেছিলেন, তা নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু প্রমাণ কই? আজ সেই প্রমাণই সামনে আনা হল। এবং আনা হল এমন দিনে এমন সময়ে, যার কিছু পরেই এ রাজ্যে প্রচারে এসে তৃণমূল-বিজেপি গোপন বোঝাপড়া নিয়ে মমতার দলকে তুলোধোনা করলেন কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। হাওড়ার শ্যামপুর ও গুলমোহর মাঠের সভা থেকে রাহুল এ দিন বলেন, ‘‘এ রাজ্যে তৃণমূল-বিজেপি আঁতাঁত রয়েছে। সব ক্ষেত্রেই মোদী সাহায্য করছেন মমতাকে। কালো টাকা উদ্ধারের নামে একদিকে মোদীর লোকেদের পকেটে টাকা যাচ্ছে, অন্য দিকে সারদায় রাখা গরিবের টাকা তৃণমূলের নেতারা পকেটে পুরছেন!’’
তৃণমূল-বিজেপি বন্ধুত্বের ছবিটা প্রকাশ করার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস মুখপাত্র আর পি এন সিংহ বলেন, ‘‘দিদির সবটা এ রকমই সাজানো! ওপরে এক রকম দিদি দেখান, ভিতরে আরেক রকম। ওপরে জোড়াফুল, ভিতরে পদ্মফুল! সবাই জানুক, মোদীই দিদির সহজাত বন্ধু!’’
কংগ্রেসের এমন কৌশলে হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনায় ভোটের আগে তৃণমূলের চাপ নিশ্চিত ভাবে বেড়েছে। একে তো এই দুই জেলাতেই সংখ্যালঘু ভোট বড় ফ্যাক্টর। তৃণমূলের এই আশঙ্কা বরাবরই রয়েছে যে বিজেপি তথা মোদীর সঙ্গে বোঝাপড়ার ব্যাপারটা সামনে এলে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে বড় প্রভাব পড়বে। বিশেষত এ রাজ্যে গত ক’টি নির্বাচনে সংখ্যালঘুরা ঝুলি উজাড় করে ভোট দিয়েছেন দিদির দলকে। তা ছাড়া, শুধু তো এ রাজ্যে নয়, সামগ্রিক ভাবে গোটা দেশেই সংখ্যালঘুদের মধ্যে মোদীর গ্রহণযোগ্যতা খুব কম। বাবরি ধ্বংস থেকে গুজরাত দাঙ্গা— সব মিলিয়েই সংখ্যালঘুদের বড় অংশের মধ্যে বিজেপি তথা মোদী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা আছে। যা কেন্দ্রে মোদী সরকার গঠনের পর বেড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে দিদি চেয়েছিলেন, প্রচারে এসে মোদী তাঁর তীব্র সমালোচনা করুন। যাতে তাঁর সঙ্গে মোদীর ‘ঝগড়া’ নিয়ে সংখ্যালঘুদের মধ্যে কোনও ধন্দ না থাকে। তাতে মেরুকরণ হলে আখেরে লাভ তৃণমূলেরই। বাংলায় এসে গত ক’টি প্রচার সভায় সেই অঙ্ক মেনে মোদী দিদিকে যে ভাবে আক্রমণ করেছেন, তাতে তৃণমূল বেশ খুশি। কিন্তু মমতার সেই কৌশলটাই এ দিন ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা হল, সোমবার, পঞ্চম দফা ভোটের ঠিক আগে মোদী-দিদি আঁতাঁত নিয়ে কংগ্রেসের ফুটেজ প্রকাশ এবং রাহুলের আক্রমণে। প্রচারে এসে এ দিন একই কাজ করেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় ম্যাচ গড়াপেটা চলছে। দিদি-দিদি বলে চিৎকার করে মোদী কিছু ফাঁপা সমালোচনা করছেন ঠিকই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জবাব দিন, সারদা তদন্ত হঠাৎ থেমে গেল কেন? কেনই বা নারদ-তদন্ত রাজ্যসভায় এথিক্স কমিটির কাছে পাঠানো হল না?’’
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের সভাতেও দিদি-মোদী আঁতাত নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেন রাহুল। বলেন, ‘‘ওঁদের মধ্যে অদ্ভুত মিল রয়েছে। দিল্লিতে মোদী যা করেন, এখানে দিদিও তা করেন! মোদী দেশকে নষ্ট করছেন, দিদি রাজ্যকে। এখানে ভোটের প্রচারে এসে মোদী কিছু কথা বলছেন ঠিকই, কিন্তু দিল্লি ফিরেই সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন মমতাকে আক্রমণ করে কিছু না লিখতে!’’ রাহুলের বক্তব্য, তাই মানুষকে এটা বুঝে নিতে হবে বাংলার লড়াই হচ্ছে দিদির সঙ্গে জোটের। কারণ, দিদি ও মোদী একই সত্তা।
কংগ্রেসের ফাঁস করা ফুটেজ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘ওই সময় তৃণমূল এনডিএ কে সমর্থন করছিল। এর মধ্যে অভিনবত্ব কোথায়? সে রকম হলে তো কলকাতায় এক মঞ্চে জ্যোতি বসু-বাজপেয়ী-বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের ছবিও সামনে আনতে হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy