এক দিক ঢাকতে গিয়ে আর দিক বেআব্রু হওয়ার জোগাড়! রাজ্যে ভোটগ্রহণ পর্বের প্রাক্কালে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গতিবিধি দেখে তেমনই মনে করছে প্রশাসনেরএকাংশ।
জঙ্গলমহলে প্রথম দফার ভোটগ্রহণের জন্য বিভিন্ন জেলায় টহলদারিতে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীর বড় অংশকে তুলে সেখানে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যা শুনে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে আশঙ্কা, এতে জেলায় জেলায় ভোটারদের ভয়মুক্ত করার প্রক্রিয়া ধাক্কা খাবে। যদিও কমিশনের দাবি, কোনও জেলা থেকে সমস্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী সরানো হচ্ছে না। টহলদারির জন্য সর্বত্রই কিছু থাকবে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট হবে কিনা, সে ব্যাপারে ধন্দ থেকেই যাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচন অফিসার (সিইও)-এর অফিস সূত্রের খবর: প্রথম দু’দফার ভোটপর্বের জন্য অধিকাংশ জেলা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলে জঙ্গলমহলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের এডিজি (সশস্ত্র বাহিনী) বিবেক সহায়, যিনি কিনা নির্বাচন কমিশনের নোডাল অফিসারও বটে। ২৬ মার্চের নির্দেশ অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে বাহিনীকে জঙ্গলমহলে পৌঁছাতে হবে।
দক্ষিণবঙ্গ থেকে বাহিনী সরানো শুরু হয়েছে বুধবার। উত্তরবঙ্গ থেকে মঙ্গলবারই বাহিনী পাঠানো আরম্ভ হয়েছে। কমিশনের নির্দেশ— ভোটে শান্তিরক্ষার স্বার্থে রাজ্য পুলিশের একাংশকেও জঙ্গলমহলে মোতায়েন করতে হবে। আপাতত বিভিন্ন জেলার ক্যাম্পে থাকা পুলিশকর্মীদের সেখানে পাঠাতে বলা হয়েছে।
এ হেন প্রেক্ষাপটেই দানা বেঁধেছে আশঙ্কা ও সংশয়। কী রকম?
প্রশাসন-সূত্রের ব্যাখ্যা: ভয়মুক্ত পরিবেশ তৈরির তাগিদে স্পর্শকাতর তল্লাটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুট মার্চ শুরু হয় মাসখানেক আগে। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বাহিনীর টহলদারি না-থাকায় ত্রাস কাটছে না। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের বৈঠকেও প্রসঙ্গটি ওঠে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী জানান, প্রত্যন্ত গ্রামেও বাহিনীকে টহল দিতে হবে।
তাতে ফলও মিলেছে। পুলিশকর্তারা বলছেন, অধিকাংশ জেলায় পুলিশের লোকবল কম। কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি রাজনৈতিক সংর্ঘষ এড়াতে বিস্তর সাহায্য করেছে। এখন কেন্দ্রীয় বাহিনী-সহ জেলা পুলিশের একাংশকেও জঙ্গলমহলে তুলে নিয়ে গেলে আইন-শৃঙ্খলা সামলানো কঠিন হয়ে উঠতে পারে। ‘‘পড়ে থাকবে যারা, শুধু তাদের দিয়ে গ্রাম-গ্রামান্তরে টহলদারি কিংবা রাজনৈতিক সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ, কোনওটাই সম্ভব নয়।’’—মন্তব্য দক্ষিণবঙ্গের এক এসপি’র। সর্বোপরি ভোটমুখী গ্রামবাংলায় ভীতির পরিবেশ কাটানোর প্রয়াসও হোঁচট খাবে বলে পুলিশের আশঙ্কা। এক পুলিশকর্তার পর্যবেক্ষণ, ‘‘আধা ফৌজের আনাগোনা দেখে গ্রামের লোক কিছুটা হলেও বুকে বল পাচ্ছিলেন। বাহুবলিরা ফের এলাকায় ঢুকে শাসানি দিলে কে সামলাবে?’’ রাজ্য পুলিশের বড় অংশের প্রশ্ন, ‘‘বিরোধীদের অভিযোগে গুরুত্ব দিয়ে কমিশন আমাদের বলছে তদন্ত করতে। কিন্তু হাতে পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী না-থাকলে তা হবে কী করে?’’
নির্বাচন সদন এ সব আশঙ্কা ও সংশয় উড়িয়ে দিচ্ছে। তাঁদের দাবি: সারা রাজ্যে টহলদারি ও ভোটে নিরাপত্তা— কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দু’টোই করতে হলে এ ছাড়া উপায় নেই। আধিকারিকটির কথায়, ‘‘কমিশনের মূল কর্তব্য হল অবাধে ও শান্তিতে ভোটগ্রহণ পর্ব সম্পন্ন করা। সে জন্য যা যা প্রয়োজন, তা করতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy