তৃণমূলের লক্ষ্য, উন্নয়নের অস্ত্রে বাজিমাত করা। আর, বিরোধীদের পাখির চোখ শাসকদলের নেতাদের দুর্নীতিকে সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরতে নিবিড় প্রচার।
পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে ১১টি পঞ্চায়েত। প্রতিটিই রয়েছে কালনা ১ ও পূর্বস্থলী ১ ব্লকে। সব ক’টিতেই ক্ষমতায় রয়েছে শাসকদল। দীর্ঘ দিন ধরে এই কেন্দ্রে প্রার্থী রয়েছেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি স্বপন দেবনাথ। দু’বার এই বিধানসভা থেকে তিনি বিধায়ক হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১১ সালের ভোটে জিতে মন্ত্রী হন। লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের জয়ের ব্যাবধান বাড়ে। বামেদের ভরা বাজারেও এই কেন্দ্রে ২০০৬ সালে জিতেছিলেন স্বপনবাবু।
এ বারও প্রার্থী স্বপনবাবু। আগেভাগেই প্রচারে নেমে পড়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই এই কেন্দ্রে দেওয়াল লিখনের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত স্তরে কর্মীদের নিয়ে বেশ কিছু কর্মী বৈঠকও হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, জেলার মধ্যে গত পাঁচ বছরে পূর্বস্থলী ব্লকে সব থেকে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। মন্ত্রী হবার সুবাদে কলেজ, স্টেডিয়াম, চুন, মাছ গবেষণা কেন্দ্র-সহ অজস্র সরকারি প্রকল্প স্বপনবাবু নিয়ে এসেছেন এই কেন্দ্রে। উন্নয়নের সেই সব খতিয়ান তুলে ধরেই জোর কদমে চলছে ভোট প্রচার। সরকারি প্রকল্পগুলিও ভিডিওর মাধ্যমে ভোটারদের কাছে তুলে ধরা হবে।
বিদায়ী মন্ত্রী যখন উন্নয়নের অস্ত্রে বাজিমাত করতে চাইছেন তখন বিরোধী শিবির থেকে উঠে আসছে দুর্নীতির অভিযোগ। জেলা সিপিএমের এক নেতা ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘দুর্নীতির তালিকায় কী নেই! বন্যার ক্ষতিপূরণের চেক নিয়ে নেতাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে সাধারণ মানুষ। আবার কখনও উঠে এসেছে ইন্দিরা আবাস, ক্ষতিপূরণের চেক নিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।’’ কংগ্রেসের এক ব্লক নেতার কথায়, ‘‘কিসান মান্ডিতে সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি না করতে পারা নিয়ে চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ভোটে টের পাবে তৃণমূল।’’
বাম নেতৃত্বের অভিযোগ, গত লোকসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই কেন্দ্রের বিস্তীর্ণ এলাকায় সন্ত্রাস চালায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বেগপুর, সুলতানপুর, নাদনঘাট পঞ্চায়েতের মতো বহু এলাকায় তৃণমূল সমর্থকেরাই ভোট দিতে পারেনি বলে সিপিএমের দাবি। সিপিএমের পূর্বস্থলী জোনাল কমিটির সম্পাদক সুব্রত ভাওয়াল আশাবাদী, ‘‘ঠিক মতো ভোট হলে এ বার ফল অন্য রকম হবেই।’’
এলাকাবাসীর অনেকের আবার অভিযোগ, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নিরিখে এই বিধানসভা এলাকার কালনা ১ ব্লকে উন্নয়ন হয়েছে ছিটেফোঁটা। সেই নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে কালনার ওই এলাকাগুলিতে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, সব থেকে চিন্তায় রাখছে দলের নানা গোষ্ঠীর কোন্দল। প্রতি পঞ্চায়েতেই দলের একাধিক গোষ্ঠী রয়েছে। সেই গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সংঘাতও নতুন ঘটনা নয়। দ্বন্দ্ব রয়েছে পুরানো নেতাকর্মীদের সঙ্গে অন্য দল থেকে যোগ দেওয়া নেতা কর্মীদের মধ্যেও। ‘‘মর্যাদা নেই’’— অভিযোগ তুলে অনেকে বসে গিয়েছেন।
বিরোধী হিসাবে এই কেন্দ্রে সব থেকে বেশি ভোট ব্যাঙ্ক সিপিএমের থাকলেও জোটের স্বার্থে তারা আসনটি ছেড়ে দেয় কংগ্রেসকে। প্রার্থী হন অভিজিৎ ভট্টাচার্য। এই কেন্দ্রের বিজেপি-র প্রার্থী এলাকার বাসিন্দা তথা রাজ্য কমিটির সদস্য রাজীব ভৌমিক। বিজেপি প্রার্থীর কথায় স্পষ্ট হয়েছে এই কেন্দ্রে দল দুর্নীতিকে হাতিয়ার করেই ভোটে লড়ছে। রাজীবের কথায়, ‘‘এই কেন্দ্রে ভোটাররা তৃণমূলের দুর্নীতির কারণে বিরক্ত। ভোট প্রচারে তেমনটাই অভিজ্ঞতা হচ্ছে।’’ উল্লেখ্য, বিজেপি এই কেন্দ্র থেকে লোকসভা নির্বাচনে ভোট পায় ২১, ৮৪৪টি। আর বিধানসভা নির্বাচনে ভোট পায় ১০, ৭৬৫টি।
এ দিকে, নিজের নাম ঘোষণার পরই যুব কংগ্রেস নেতা অভিজিৎ ভট্টাচার্য শুরু করে দিয়েছেন নিবিড় প্রচার। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বেশ কিছু এলাকা ইতিমধ্যেই চষে ফেলেছেন তিনি। অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘সিপিএমের থেকে সাহায্য পাচ্ছি। মাঠে নেমে বুঝতে পারছি শাসক দলের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের কতটা ক্ষোভ জমা হয়েছে।’’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, সেই ক্ষোভকে ইভিএমে নিয়ে আসাই তো চ্যালেঞ্জ! সেই কাজে কোন দল কতটা সাফল্য পায়, দেখার সেটাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy