প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী।
স্বাধীনতা-উত্তর ৭৫ বছরে বাংলা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সবকিছু ফিরিয়ে দেবেন তিনি। রবিবারের ব্রিগেডে তিনি বললেন, ‘‘স্বাধীনতার পর গত ৭৫ বছরে বাংলা থেকে যা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা ফিরিয়ে দেব। আমার কথা লিখে রাখুন!’’
বক্তা নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আসলে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। গোটা ভারত জানে, স্বপ্ন দেখাতে জানেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে এমন স্বপ্ন দেখিয়েই দেশের মানুষের মন জিতেছিলেন। তখনও তিনি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। স্বপ্ন দেখানোর কারিগর সেই অস্ত্রেই যমুনাপাড়ের দিল্লিতে ক্ষমতায় ফিরেছেন ২০১৯ সালে। আর ২০২১ সালে গঙ্গাপাড়ের নীলবাড়ি দখল করতে ব্রিগেড সমাবেশ থেকে স্বপ্ন ফেরি করলেন তিনি। ফিরিস্তি শোনালেন, বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলে কী কী করবে। যাকে তিনি নিজেই আখ্যা দিলেন— ‘আসল পরিবর্তন’। তবে তার জবাবও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কালক্ষেপ না করে শিলিগুড়ি থেকে বলেছেন, ‘‘বাংলায় পরিবর্তন করতে হবে না আপনাদের। দিল্লিতে তার আগে পরিবর্তন হয়ে যাবে!’’
মোদীর অবশ্য তা জানার কোনও অবকাশ ছিল না। বস্তুত, সমাবেশের সাফল্যে খুশি মোদী ব্রিগেড সমাবেশের শেষে টুইট করেন, ‘ধন্যবাদ কলকাতা, ধন্যবাদ বাংলা। রাজ্যবাসী বিজেপি-কেই চায়’।
ব্রিগেডের জমায়েত দেখে যে তিনি খুশি, তা রবিবার নিজের বক্তব্যেও বারবার বুঝিয়েছেন মোদী। আর সেই সঙ্গে ছুঁতে চেয়েছেন সেই ভিড়ের মন। ব্রিগেড ময়দানে থেকেই হোক বা না থেকে, তাঁর শ্রোতা যে গোটা বাংলা, তা বুঝে ভাষণ-কৌশলী মোদী দুই বাংলার কথাই বলেছেন। বলেছেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ, পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে কোনও পার্থক্য করা হবে না। সবাই সমান গুরুত্ব পাবে। সবার কল্যাণ করাই হবে প্রশাসনের মূল মন্ত্র। কারও তোষণ হবে না।’’ কেমন হবে বিজেপি-র বাংলা? নিজে প্রশ্ন তুলে নিজেই উত্তর দিয়েছেন মোদী, ‘‘বাংলা চায় উন্নতি। বাংলা চায় শান্তি। বাংলা চায় প্রগতিশীল বাংলা। বাংলা চায় সোনার বাংলা।’’ এর পরেই বলেছেন, ‘‘এই ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে আমি বাংলার মানুষকে আসল পরিবর্তনের আশ্বাস দিতে চাই। বাংলার পুনর্নিমাণ হবে। বাংলার সংস্কৃতি রক্ষার, বিনিয়োগ বাড়ানোর, কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’’ কেন্দ্রে থেকেও তিনি যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলার কথা ভাববেন, তা বোঝাতে মোদী বলেন, ‘‘এখানকার ছেলেমেয়েদের জন্য, শিল্পের জন্য, বাংলার জন্য ২৪ ঘন্টা লড়াই করব। প্রতি মুহূর্ত আপনাদের জন্য বাঁচব। শুধু ভোট নয়। প্রতিনিয়ত আপনাদের মন জয় করে চলতে চাই। তা করতে চাই প্রেম আর সমর্পণ দিয়ে। বাংলার মানুষের উপকার করাই বিজেপি-র কাছে সবচেয়ে জরুরি হবে।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ক্ষমতা দখলের আগে ‘পরিবর্তন’-এর স্লোগান তুলেছিলেন। মোদী তুললেন পাল্টা স্লোগান— ‘আসল পরিবর্তন’। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলায় আসল পরিবর্তন আনাই হবে বিজেপি-র কাজের আধার। এমন বাংলা হবে, যেখানে যুবকদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এমন বাংলা, যেখানে মানুষকে রাজ্য ছেড়ে যেতে হবে না। আসল পরিবর্তন মানে এমন বাংলা, যেখানে শিল্পবাণিজ্যের উন্নতি হবে। বিনিয়োগ আসবে। এমন বাংলা, যেখানে একুশ শতকের আধুনিক পরিকাঠামো হবে। যেখানে গরিবদের অগ্রসর হওয়ার সুযোগ থাকবে। যেখানে সব শ্রেণির উন্নয়নে সমান অংশীদারী থাকবে।’’ রাজ্যে নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে নেমে বিজেপি-র রাজ্য নেতারা ইতিমধ্যেই নানা প্রতিশ্রুতি শোনাচ্ছেন। সেই সঙ্গে এর আগে দু’দফায় রাজ্যে এসে বাংলার কৃষিজীবীদের ‘না-পাওয়া’ কৃষক সম্মান নিধি প্রকল্পের টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন মোদী। ওই প্রকল্পের পাশাপাশি রাজ্যে ক্ষমতা দখল করলে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ চালু করার আশ্বাসও দিয়েছেন। আর রবিবার বললেন, কলকাতার বস্তিবাসীরা পাবেন পাকা বাড়ি। ‘সিটি অব জয়’ কলকাতা হয়ে উঠবে ‘সিটি অব ফিউচার’। মোদীর কথায়, ‘‘বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলায় স্মার্ট সিটি হবে। সেখানে পড়াই-কামাই এবং মানুষের চিকিৎসার জন্য দাওয়াইয়ের ব্যবস্থা থাকবে। পরিকাঠামোর উন্নতি হবে। গ্রাম ও শহরের প্রশাসনিক ব্যবস্থাতেও সংস্কার করা হবে।’’ অর্থাৎ, লেখাপড়া, রোজগার এবং ওষুধের ব্যবস্থা থাকবে।
সেখানেই না থেমে মোদী আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বলেছেন, রাজ্যের পঞ্চায়েত ও পুর-ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক কাঠামো ফিরিয়ে আনা হবে। পুলিশি ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা ফেরানো হবে। মোদী বলেছেন, ‘‘বাংলায় চাকরির পরীক্ষা স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে। স্কিল ডেভেলপমেন্ট স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে। কারিগরি, চিকিৎসার মতো বিষয়ে পঠনপাঠন যাতে বাংলায় হয়, তার ব্যবস্থাও করা হবে। ইংরেজি না জানলেও গরিবের ছেলেমেয়েরা যাতে ডাক্তারি পড়তে পারে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারে, সেই ব্যবস্থাও আমরা করব।’’
কেন এত প্রতিশ্রুতি শোনালেন মোদী? তাঁর উত্তরও তিনি নিজেই দিয়ে গিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘আমরা বাংলার রাজনীতিকে উন্নয়ন-কেন্দ্রিক করতে চাই। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। আর সময় নষ্ট যেন না হয়।’’ শুধু স্বল্পমেয়াদী নয়, দীর্ঘমেয়াদী স্বপ্নও ফেরি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘আগামী ২৫ বছর বাংলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণেই এই বিধানসভা ভোটের এত মাহাত্ম্য। আগামী পাঁচ বছরে সেই বৃহত্তর উন্নয়নের আধার তৈরি করা হবে। যাতে ২০৪৭ সালে দেশ যখন স্বাধীনতার শতবর্ষ পালন করবে, তখন দেশের পয়লা নম্বর স্থানে থাকে বাংলা।’’ নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে এখনও ইস্তেহার প্রকাশ করেনি বিজেপি। তবে রবিবার সেটাই যেন তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে তুলে ধরলেন মোদী। আসলে রাজ্য বিজেপি-কে বুঝিয়ে দিলেন, ‘বিকাশ রাজনীতি’-র প্রসঙ্গে ভোটারদের ঠিক কী কী বলতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy