বিজেপিতে যোগদানের পর মিঠুন চক্রবর্তীকে যথেষ্ট অভিভূত এবং আপ্লুত দেখিয়েছে।
কোনও দলের নাম করেননি। কিন্তু ঠারেঠোরে মিঠুন চক্রবর্তী জানিয়ে দিলেন, তাঁর আগের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। আগের সিদ্ধান্ত, অর্থাৎ, তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত। রবিবার ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চে বিজেপি-তে যোগ দিয়ে মিঠুন সাফ বলেছেন, তাঁর আগের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘কারও দিকে আঙুল তুলতে চাই না। কাউকে দোষও দিচ্ছি না। আমারই সিদ্ধান্তে ভুল ছিল।’’
প্রসঙ্গত, ব্রিগেডের সভার পরে মঞ্চের পিছনে মিঠুনের সঙ্গে আলাদা করে অন্তত ১৫ মিনিট কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মিঠুনের কথায়, ‘‘ওঁর সঙ্গে আমার খুব ভাল আলোচনা হয়েছে। সব কথা তো প্রকাশ্যে বলা যায় না।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘বাংলায় বিজেপি যথেষ্ট জায়গা তৈরি করেছে। বাংলার মানুষ বিশ্বাস করছে, ওরা রাজ্যের জন্য ভাল কিছু করবে। তারা ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেটা কখনও মিথ্যে হতে পারে না। তার মধ্যে কিছু সততা থাকে।’’ মিঠুন আগেও বলেছেন, তিনি ‘রাজনীতি’ নয়, ‘মানবনীতি’ বোঝেন। কিন্তু তাঁর কথায়, ‘‘সকলেরই একটা পতাকা প্রয়োজন হয়। প্রধানমন্ত্রী আমায় ডেকে যখন কথা বললেন, আমি বললাম, আমি বাংলার জন্য কাজ করতে চাই। আমি বাংলাকে ভালবাসি।’’
তিনি কি আসন্ন বিধানসভার লড়াইয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হতে পারেন? মোদী কি তাঁকে তেমনকিছু বলেছেন? মিঠুন এর জবাবে যেমন ‘হ্যাঁ’ বলেননি, তেমনই ‘না’-ও বলেননি। শুধু বলেছেন, ‘‘আমি প্রটোকল ভাঙতে পারব না।’’ যা থেকে জল্পনা শুরু হয়েছে যে, সেই সম্ভাবনা কি সত্যিই আছে? যা মিঠুন এখন প্রকাশ্যে বলছএন না। কারণ, তাতে ‘প্রটোকল’ ভাঙা হয়।
একদা অতি বামপন্থী ছিলেন। তার পর বামপন্থী। তবে প্রয়াত সিপিএম নেতা সুভাষ চক্রবর্তীর ‘ঘনিষ্ঠ’ হলেও সিপিএমে সে ভাবে কখনও যোগ দেননি মিঠুন। তবে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন ২০১৪ সালে। তৃণমূলের টিকিটে রাজ্যসভার সদস্যও হয়েোছিলেন। সেই ইনিংস মাঝপথে অসমাপ্ত রেখেই তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেন কয়েক বছর আগে। সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে ব্যথিত হয়েছিলেন এই সুপারস্টার। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে চিঠি লিখে টাকা ফেরত দেন তিনি। তার পর থেকে তাঁকে আর বিশেষ লোকসমক্ষেও দেখা যায়নি। রাজনীতি তো দূরের কথা! আচমকাই বাংলায় বিধানসভা ভোটের আগে তাঁর উদয় এবং পদ্মশিবিরে যোগদান। সে যোগদানের পর মিঠুনকে যথেষ্ট অভিভূত এবং আপ্লুত দেখিয়েছে। তা গোপন করারও কোনও চেষ্টা করেননি তিনি। বলেছেন, এই দিনটা তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো। তা হলে কি বলতে চাইছেন তৃণমূলে থাকার দিনগুলো ‘দুঃস্বপ্ন’? প্রত্যাশিত ভাবেই এর জবাব দেননি মিঠুন। কিন্তু তাঁর বক্তব্য যে, আগের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল, অনেক বেশি কথা বলছে। মিঠুনের খথায়, ‘‘আমি কখনও গিয়ে মমংতা’দিকে বলিনি, আমায় রাজ্যসভায় দিন। উনিই আমায় ডেকে বলেছিলেন। তার আগে আরও একবার বলেছিলেন। আমি তখন রাজি হইনি।’’ তবে দলবদল প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে মিঠুন বলেন, ‘‘আমার ভাবনাটা একই আছে। দলের নামটা শুধু বদলেছে। আগাগোড়াই মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছি। সেই আদর্শ থেকেই বামপন্থী রাজনীতিতে জড়িয়েছিলাম। এখনও তাই করতে চাই। আমি মনে করি, ভাবনা যদি ঠিক থাকে, তবে বাকি কাজও ঠিকই হবে। ম্যায় হুঁ অ্যায়সা আদমি।’’
বস্তুত, রবিবার ব্রিগেডে মোদী যখন তাঁকে ‘বাংলার ছেলে’ বলে বর্ণনা করে তাঁর পুরনো কথা বলছিলেন, তখন ক্যামেরা মিঠুনকে ধরেছে। লেন্সে ধরা পড়েছে তাঁর অশ্রুসিক্ত চোখ। পরে মিঠুন বলেছেন, ‘‘এতদিনে মনে হচ্ছে আমার স্বপ্ন সত্যি হল। গরিবদের জন্য কাজ করা আমার বরাবরের স্বপ্ন। এতদিনে সেই স্বপ্নপূরণ হতে দেখছি আমি।’’ ভোটের আগে বাঙালি আবেগ টানতে মিঠুনকে দলে নিয়ে বিজেপি ‘মাস্ট্রারস্ট্রোক’ দিয়েছএ বলে মনে করছেন দলের নেতারা। আর প্রত্যাশিত ভাবেই তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘‘মিঠুনকে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সামনে আনতে চাইছে বলে বলতে শুনছি অনেককে। আমার প্রশ্ন, ওর কি সেই রাজনৈতিক ভিত আছে? না ও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য? ও তো বারবার দল পাল্টায়। ও তো পাল্টিবাজ! ওকে কি ভরসা করা যায়?’’ সৌগতের বক্তব্য সম্পর্কে মিঠুন বলেন, ‘‘আমি পাল্টিবাজ হলে বাকিরা কী! মানুষের ভালবাসা আমাকে এখানে এনেছে। ভালমন্দ সব জায়গায় আছে। আমি নিজের জন্য কারও কাছ থেকে কোনও সুবিধা নিইনি। মানুষের জন্য সাহায্য চেয়েছি।’’ সৌগতের আরও অনুমান, মিঠুনকে ইডি-র ভয় দেখিয়ে বিজেপি-তে যোগ দিতে ‘বাধ্য’ করা হয়েছে।
তবে তিনি যে বিজেপি-র দিকে ঝুঁকে রয়েছেন, তার ইঙ্গিত কয়েকমাস আগেই মিঠুন শহরে এসে দিয়ে গিয়েছিলেন। একটি বাংলা রিয্যালিটি শোয়ের শ্যুটিং করতে এসে তিনি ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছিলেন, বিজেপি-র হয়ে বিধানসভা ভোটের প্রচারে নামবেন। তখন থেকেই তাঁকে নিয়ে জল্পনা শুরু। রবিবার সেই জল্পনাই সত্যি হল। আগামী শুক্রবার থেকে বিজেপি-র হয়ে বিধানসভা ভোটের প্রচারে নামার কথা মিঠুনের। আপাতত কথা আছে, তিনি ২০টি জনসভা এবং মিছিল করবেন। তবে ভোটের প্রচার মিঠুনের কাছে নতুন নয়। এর আগে সুভাষের স্ত্রী রমলা চক্রবর্তীর হয়ে প্রচার করেছেন তিনি। আবার তৃণমূলের সাংসদ থাকার সময় মমতার প্রার্থীদের হয়েও নিরলস প্রচার করেছেন। মঞ্চে নেচেছেন। সিনেমায় তাঁর জনপ্রিয় ডায়ালগ আউড়েছেন। কিন্তু এর পর কি একধাপ এগিয়ে তিনি ভোটে প্রার্থী হবেন? মিঠুনের জবাব, ‘‘একইদিনে সব বলে দেব নাকি? আমি তো ফিল্মের লোক। ধীরে ধীরে পাতা খুলব। তখনই জানতে পারবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy