Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪

ঘুষ কাণ্ডে মমতাকে চটাতে চান না প্রধানমন্ত্রী

সুর চড়ানোর পক্ষে অমিত শাহ। একই মত সিদ্ধার্থনাথ সিংহদেরও। স্টিং কাণ্ডের পরে রাজ্য বিজেপির বড় অংশ তৃণমূলকে তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে নামার পক্ষে। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরম বিরোধিতা করতে চাইছেন না নরেন্দ্র মোদী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৫
Share: Save:

সুর চড়ানোর পক্ষে অমিত শাহ। একই মত সিদ্ধার্থনাথ সিংহদেরও। স্টিং কাণ্ডের পরে রাজ্য বিজেপির বড় অংশ তৃণমূলকে তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে নামার পক্ষে। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরম বিরোধিতা করতে চাইছেন না নরেন্দ্র মোদী।

নারদ কাণ্ডের তদন্তের জন্য সংসদের দুই কক্ষেই সরব হয়েছে বিরোধীরা। রাজ্যসভায় এই দাবির সামনে ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে ক্যুরিয়নকে বলতে শোনা যায় যে তিনি তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন না। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে শাসক শিবিরকেই। শাসক বেঞ্চ তখন একেবারে চুপ। সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়রা মমতার বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানের পক্ষে ছিলেন। রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে সেই বার্তা দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও। কিন্তু রাজ্যসভায় অরুণ জেটলির নীরবতা দেখে বিজেপি শিবির বুঝতে পারছে এই নীরবতার পিছনে সমর্থন

রয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর। স্টিং অপারেশন থেকে ফায়দা নেওয়া হবে কিনা সেই প্রশ্নে দল এখন আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত। অমিত শাহ মমতা বিরোধিতার পক্ষে সরব। কিন্তু জেটলির পদক্ষেপে স্পষ্ট, খোদ প্রধানমন্ত্রীর এ বিষয়ে সম্মতি না থাকলে তৃণমূলকে বাঁচানোর এই খেলায় নামতে পারতেন না তিনি। না হলে ঘুষ কাণ্ডের বিষযটি রাজ্যসভাতেও নীতি কমিটির কাছে পাঠানো হতো। আর মুকুল রায়কে ইস্তফা দিতে হতো ওই কমিটি থেকে। সিপিএম এই পদক্ষেপকে তৃণমূল-বিজেপির ‘ম্যাচ ফিক্সিং’ বলে সরব হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র আজ টুইট করেন, ‘‘রাজ্যসভায় সমর্থনের কথা ভেবে বিজেপি তৃণমূলকে বাঁচার রাস্তা করে দিল। রাজ্য বিজেপির স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’

অবশ্য স্টিং অপারেশন নিয়ে শাসক শিবির যাতে প্যাঁচে না ফেলতে পারে, সে জন্য তৎপর ছিল তৃণমূল নেতৃত্বও। গত কাল সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডুর সঙ্গে এক প্রস্থ আলোচনা করেন মুকুল রায় ও ডেরেক ও’ব্রায়েন। সূত্রের খবর, রাতে রাজনাথ সিংহের সঙ্গেও কথা হয় মুকুল রায়ের। যদিও কোনও পক্ষই তা স্বীকার করতে চাননি।

তবে ঘুষ কাণ্ডের বিষয়টি লোকসভায় নীতি কমিটির কাছে পাঠানো হলেও, এর মধ্যেও তৃণমূলের লাভের অঙ্ক খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে। তাঁদের যুক্তি, এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি যে ঘুষের অভিযোগ বর্তমান নীতি কমিটি খতিয়ে দেখবে না এ জন্য নতুন করে কমিটি গড়া হবে। এ ছাড়া, কেউ কেউ ভাবছেন, বিষয়টি নীতি কমিটির কাছে পাঠিয়ে আখেরে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করে দিল বিজেপি। ভবিষ্যতে লোকসভায় কেউ বিষয়টি তুলতে চাইলে তদন্ত চালু রয়েছে যুক্তি দেখিয়ে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে। তাতে তৃণমূলকে সুবিধা। আর তদন্ত রিপোর্ট আসতেও রাজ্যের ভোট মিটে যাবে। যদিও রাজ্য বিজেপির দাবি, স্টিংয়ের বিষয়টি নীতি কমিটির কাছে পৌঁছে যাওয়ায় তৃণমূল চাপে থাকছে। কারণ এই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ২০০৫ সালে ঘুষ নেওয়ার জন্য ১১ জন সাংসদকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

যদিও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, পরিস্থিতি যা তাতে পশ্চিমবঙ্গে দলের ভরাডুবি নিশ্চিত। একাধিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভোটে বিজেপি একটিও আসন পাবে না। তাই পশ্চিমবঙ্গে এ বার প্রধানমন্ত্রীর মাত্র আটটি সভার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অথচ বিহারে সংখ্যাটি ত্রিশ পেরিয়ে গিয়েছিল। তবে মোদী মমতাকে চটানোর পক্ষে না থাকলেও সঙ্ঘ পরিবার বা অমিত শাহের লক্ষ্য হল পশ্চিমবঙ্গে দলের প্রভাব বাড়ানো। তাই জেটলিদের এই অবস্থানের পরেও রাজ্য বিজেপিকেও প্রয়োজন মতো মমতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে বলা হয়েছে।

২০১৯-র কথা মাথায় রেখে প্রাক্তন এনডিএ শরিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছেন মোদী। তাই এক বছর ধরে তলেতলে তৃণমূল শিবিরের সঙ্গে বোঝাপড়া রেখে চলেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দিন কয়েক আগে বিহারে প্রাক্তন শরিক নীতীশ কুমারের সঙ্গেও হেলিকপ্টারে সওয়ার হন মোদী। প্রধানমন্ত্রী ভাল করেই জানেন, আগামী লোকসভা ভোটে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে এক ছাতার নীচে এনে বিজেপির বিরুদ্ধে নামতে চাইবে কংগ্রেস। তবে বিজেপি বিরোধী অক্ষে তখন সিপিএম হাজির হলে সেখানে মমতার পক্ষে থাকা সম্ভব হবে না। তাই এখন থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখার পক্ষপাতী মোদী।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE