নন্দীগ্রামে বাম কার্যালয়ে উড়ছে তৃণমূলের পতাকা। নিজস্ব চিত্র।
বিরোধীদের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর থেকে বেদখল, সবই চলছে দুই মেদিনীপুরে। বাদ নেই পরিবর্তনের আঁতুরঘর নন্দীগ্রামও।
জমি আন্দোলন পর্বে কম ঝড়-ঝাপটা সইতে হয়নি নন্দীগ্রাম বাজারে সিপিএমের জোনাল কার্যালয়টিকে। ভাঙচুর থেকে আগুন লাগানো সবই হয়েছে। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের ওই কার্যালয়ে তালাও পড়ে যায়। কিন্তু বেদখল হয়নি। নন্দীগ্রামের মাটিতে সিপিএমের সেই জোনাল কার্যালয়ই এ বার দখল করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
প্রয়াত নেতা সুকুমার সেনগুপ্তের নামাঙ্কিত সিপিএমের ওই জোনাল কার্যালয় উদ্বোধন হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। ২০১১ থেকে লাগাতার বন্ধ ওই কার্যালয় এ বার বিধানসভা ভোট পর্বেও খোলেনি। অভিযোগ, সোমবার বিকেলে কয়েকজন তৃণমূল কর্মী সিপিএমের এক দলীয় কর্মীকে হুমকি দিয়ে দলের ওই জোনাল কার্যালয়ের তালার চাবি নিয়ে নেয়। তারপর পুরনো সেই তালা খুলে নতুন তালা লাগিয়ে দেয় ও তৃণমূলের পতাকা বেঁধে ওই সিপিএম কার্যালয় দখল করে নেয়।
সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, ‘‘শুধু ওই জোনাল কমিটির কার্যালয় নয় নন্দীগ্রামের তেরপেখ্যা লোকাল কমিটির অফিসও দখল করেছে তৃণমূলের লোকজন। জেলার পুলিশ সুপারকে সব জানিয়েছি।’’ অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের নন্দীগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘সিপিএমের কিছু বিক্ষুব্ধ লোকজন এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ’’ পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার অবশ্য বক্তব্য, ‘‘নন্দীগ্রামে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় দখল করার বিষয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
হলদিয়াতেও সিপিএম কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের জোনাল সম্পাদক শ্যামল মাইতির অভিযোগ, এক্সাইড কারখানার কাছে দলের ওই কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরানো হয়। দলের তরফে দুর্গাচক থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে সিপিএম কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হলদিয়া শহরের তৃণমূল নেতা সুদীপ অগস্তি।
সোমবার আবার দুই তৃণমূল সমর্থককে ছুরির ঘায়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে। এ দিন হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে আহত দুই সমর্থককে দেখতে যান হলদিয়ার তৃণমুল প্রার্থী মধুরিমা মণ্ডল। পরে মধুরিমাদেবী বলেন, ‘‘সিপিএম হলদিয়ায় জিতে যাওয়ায় অত্যাচার চালাচ্ছে।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের সদর শহর মেদিনীপুরের ছবিটা অবশ্য আলাদা। সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, হিংসা দমনে প্রয়োজনে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলা যেতেই পারে। সেই মতো শান্তি রক্ষায় স্থানীয়স্তরে দু’দলের কথাবার্তা শুরু হওয়ায় কাজও হচ্ছে। এর আগে তৃণমূল কাউন্সিলর নির্মাল্য চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বলে কুইকোটার বাউরিপাড়ার শাখা কার্যালয়ের দখল ফিরে পেয়েছিল সিপিএম। এ বার শহরের আরও তিনটি শাখা কার্যালয়ের দখল ফিরে পেয়েছে তারা। ভোটের ফলপ্রকাশের পরই প্রমোদনগর, টাউন কলোনি এবং ঈশ্বরপুরের শাখা কার্যালয় তৃণমূলের লোকজন দখল করে নেয় বলে অভিযোগ করেছিল সিপিএম। পরে এলাকার সিপিএম কাউন্সিলর কাজলমণি মুর্মু স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই বরফ গলে। সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক সারদা চক্রবর্তী বলেন, “স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব সহযোগিতা করেছেন। এলাকার একাধিক ক্লাবও উদ্যোগী হয়। আমরা চাই, এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকুক।”
জঙ্গলমহলের এই জেলার গ্রামাঞ্চলের যদিও এই সৌজন্য-শান্তির ছবি নেই। সিপিএমের অভিযোগ, মঙ্গলবার ভোরে কেশপুরের আমড়াকুচির চৌকিঘাটে তাণ্ডব চালিয়েছে তৃণমূলের লোকজন। আদিবাসী অধ্যুষিত এই এলাকায় মানুষ সন্ত্রস্ত। অনেকে ঘরছাড়া হয়েছেন। কেশপুরের সিপিএম নেতা এন্তাজ আলি বলেন, “পরিকল্পনামাফিক চৌকিঘাটে হামলা চালানো হয়েছে।” তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের অবশ্য বক্তব্য, “কেশপুরে কী হয়েছে ঠিক জানি না। সব কর্মীকেই সংযত থাকার কথা বলা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy