অধীরকে ডায়াসে ফিরতে অনুরোধ বিমান-সেলিমের। পাশে আব্বাস। ছবি: ভিডিয়ো গ্র্যাব।
আসন সমঝোতা ঝুলে রয়েছে এখনও। তার মধ্যেই ছন্দপতন ব্রিগেডের মাঠে। ‘সংযুক্ত মোর্চা’র প্রথম সভাতেই প্রকট হল কংগ্রেস এবং আব্বাস সিদ্দিকির ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) মধ্যেকার ফাটল। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, আব্বাসকে ঘিরে উচ্ছ্বাস দেখে বক্তৃতা থামিয়ে চলে যেতে উদ্যত হন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। আবার বক্তৃতা জুড়ে বারংবার বামেদের ‘বন্ধু’ বলে উল্লেখ করলেও, কংগ্রেসের প্রতি সেই সৌজন্য দেখাননি আব্বাস। বরং সাফ জানিয়ে দেন, বন্ধুত্বের রাস্তা খোলা রয়েছে। কিন্তু কাউকে তোষণ করবেন না তিনি। বরং নিজের ‘হক’ ছিনিয়ে নেবেন।
ব্রিগেড সমাবেশের আগের রাতেও আসন নিয়ে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে একদফা আলোচনা হয়েছে আইএসএফ-এর। তবে তাতেও রফাসূত্র মেলেনি। সোমবার ফের একদফা আলোচনা হবে ঠিক হয়েছে। সূত্রের খবর, সিপিএম ইতিমধ্যেই আইএসএফ-কে ৩০টি আসন দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু বেঁকে বসেছে কংগ্রেস। আইএসএফ-কে যত আসন দেওয়া হবে, সেই সংখ্যক আসন তাদের পুষিয়ে দিতে হবে বলে গোঁ ধরেছে তারা। তাতেই আসন সমঝোতা আটকে রয়েছে। সেই পরিস্থিতিতেই ব্রিগেডের মাঠে রবিবার মুখোমুখি হন আব্বাস এবং অধীর।
বেশ কয়েক জনের পর রবিবার বক্তৃতা করতে আসেন অধীর। চাঁচাছোলা ভাষায় তৃণমূল এবং বিজেপি-কে আক্রমণ করেন তিনি। স্লোগান তোলেন, ‘ইয়ে তো সির্ফ ঝাঁকি হ্যায়, সরকার গিরনা অভি বাকি হ্যায়’। এত বড় সভায় আগে কখনও বক্তৃতা করেননি বলেও জানান অধীর। তাঁর গা গরম করা ভাষণে সবে একটু একটু করে তেতে উঠছে ব্রিগেডের মাঠ, ঠিক সেই সময়ই ভিড়ের মধ্যে থেকে মঞ্চে উঠে আসেন আব্বাস। তাঁকে দেখেই ‘ভাইজান, আব্বাস’ রবে গমগম করে ওঠে গোটা ব্রিগেড চত্বর। তাতে মাঝপথে বক্তৃতা থামিয়ে দিতে হয় অধীরকে।
আব্বাসকে মঞ্চে স্বাগত জানাতে এগিয়ে যান পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্যসভার সাংসদ মহম্মদ সেলিম। এগিয়ে আসেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও। মঞ্চের সকলে আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আব্বাসকে স্বাগত জানান। সেই সময় ডায়াসের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সকলের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করলেও, অধীরের সঙ্গে একটি বাক্যও বিনিময় করতে দেখা যায়নি তাঁকে। এমন পরিস্থিতিতে বক্তৃতা শেষ না করেই ডায়াস ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হন অধীর।
সেই সময় অধীরকে আটকাতে প্রথমে এগিয়ে আসেন বিমান। তার পর সেলিম, সূর্যকান্ত, সকলেই তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই শান্ত করা যাচ্ছিল না অধীরকে। বক্তৃতা করবেন না জানিয়ে বার বার ঘাড় নাড়তে থাকেন তিনি। এমনকি, বক্তৃতা করার সময় যে মাস্ক গলায় নামিয়ে রেখেছিলেন, সেটি ফের মুখে পরে নিতে দেখা যায় তাঁকে। সেই সময় পিছন ফিরে অধীরের কানের কাছে ঝুঁকে কিছু বলতে দেখা যায় আব্বাসকে। বিমান এগিয়ে এসে অধীরকে ডায়াসের সামনে দাঁড় করান। তার পর ফের বক্তৃতা শুরু করেন অধীর।
তাঁর মঞ্চে আগমনে জোটের ফাটলের যে ছবি স্পষ্ট হয়েছিল, নিজের বক্তৃতায় সেই ফাটল আরও প্রকট করে তোলেন তিনি। বারংবার বাম শিবিরকে ‘বন্ধু’ বলে উল্লেখ করলেও, জোটসঙ্গী কংগ্রেসকে আগাগোড়া ‘বাম-শরিক’ বন্ধনীতেই বেঁধে রাখতে দেখা যায় তাঁকে। এমনকি, আসন সমঝোতা নিয়ে কথা বলতে গিয়েও কংগ্রেসকে উহ্যই রাখেন তিনি। বরং বলেন, ‘‘দাবি অনুযায়ী বামেরা আমাদের ৩০টি আসন ছেড়েছে। তাই যেখানেই বাম-শরিকরা প্রার্থী দেবেন, রক্ত দিয়ে তাঁদের জেতাব আমরা। বিজেপি এবং তাদের ‘বি’ টিম মমতাকে উৎখাত করব আমরা। এ বারের ভোটে মমতাকে শূন্য করে ছাড়ব।’’
তবে আব্বাস যে কংগ্রেসকে এড়িয়ে যাচ্ছেন, মঞ্চে উপস্থিত নেতৃত্বের চোখেমুখে তখন তা স্পষ্ট। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সুর নরম করার পরিবর্তে আরও ঝাঁঝালো মন্তব্য করেন আব্বাস। সরাসরি কংগ্রেসের নাম নিয়ে বলেন, ‘‘যাঁরা ভাবছেন, কেন কংগ্রেসের নাম নিচ্ছি না, তাঁদের বলছি, ভিক্ষা চাই না। আমরা অংশীদারি করতে এসেছি, তোষণ করতে নয়। হক বুঝে নিতে হবে।’’
শুধু তাই নয়, সমঝোতায় গড়িমসি নিয়েও প্রকাশ্য সভাতেই মুখ খোলেন আব্বাস। বাম-কংগ্রেস নেতৃত্বের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আর এক সপ্তাহ আগে যদি এই সমঝোতা হত, তা হলে এর দ্বিগুণ মানুষের জমায়েত করে দেখিয়ে দিতাম আমরা। কারণ মমতার উপর মানুষ ক্ষিপ্ত।’’
আব্বাসের এই মন্তব্যে অস্বস্তি এড়াতে পারেননি জোট নেতৃত্বের কেউই। মঞ্চের এক প্রান্তে সূর্যকান্তের পাশে বসেছিলেন অধীররঞ্জন। অন্য প্রান্তে ছিলেন আব্বাস এবং আরও কয়েক জন। সাধারণত সমাবেশ শেষ হওয়ার পর হাত ধরে ঐক্যের বার্তা দিতে দেখা যায় নেতাদের। কিন্তু আব্বাসের মন্তব্যের পরই বাম-জোটের সকলে হাত ধরে দাঁড়িয়ে পড়েন। অধীরকে নিয়ে চেয়ার ছেড়ে ওঠেন সূর্যকান্তও। কিন্তু তখনও পাশাপাশি দেখা যায়নি আব্বাস এবং অধীরকে। বরং মঞ্চের দু’প্রান্তে একে অপরের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেই চলছিলেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy