প্রিসাইডিং অফিসারকে সতর্ক করছেন ময়ূরেশ্বরের বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। প্রচণ্ডপুরের একটি স্কুল বুথে শুভাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
দৃশ্য ১: টেবিলের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে প্রিসাইডিং অফিসার। আঙুল উঁচিয়ে চিৎকার করছেন তিনি, ‘‘লজ্জা করে না! কত টাকা পেয়েছেন? রিগিং করাচ্ছেন? ঘুষ-কাণ্ডে আপনাদেরও জড়িয়ে ফেলেছে দেখছি!’’
দৃশ্য ২: বুথের কাছে খেজুর গাছের ছায়ায় বাঁশের মাচায় বসে জনা কয়েক যুবক। গাড়ি থেকে নেমেই দৌড়ে গেলেন সে দিকে। ধমকে বললেন, ‘‘বাবুলাল শেখ কোথায়? রিগিং করছ তোমরা?’’ আমতা-আমতা করে উত্তর এল, ‘‘ওই নামে কেউ নেই। এখানে সব শান্তিপূর্ণ।’’
দৃশ্য ৩: বুথে ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন অভিযোগে তর্ক জুড়েছিলেন তৃণমূলের এজেন্ট। পাল্টা গলা তুললেন তিনিও— ‘‘প্রমাণ করতে পারবেন আপনি?’’ শেষমেশ আসরে নেমে দু’জনকেই নিরস্ত করলেন তৃণমূলের এক নেতা।
মাসখানেকের প্রচারপর্বে কোনও বিতর্কে জড়াননি তিনি। বরং, তারকা-ইমেজ ঝেড়ে মেঠো পথে নেমে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, ‘আমি তোমাদেরই লোক’। রবিবার, ভোটের দিনে ময়ূরেশ্বরের সেই বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় কেন্দ্রে চরকি পাক দেওয়ার মাঝে কিন্তু মেজাজ হারালেন কয়েকবার। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন প্রিসাইডিং অফিসারকে ধমকের ঘটনায় রিপোর্ট চেয়েছে।
গ্রামবাসী থেকে দলের কর্মী, প্রচারে গিয়ে অনেককেই গোলমালের খবর পেলে জানাতে বলে রেখেছিলেন। আশ্বাস দিয়েছিলেন, ‘‘নিজে পৌঁছে যাব।’’ সে জন্যই এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ বেরিয়ে পড়েন লকেট। পরনে পেঁয়াজ রঙের শাড়ি, গেরুয়া ব্লাউজ আর কপালে বড় লাল টিপ। প্রথমেই তাঁর গাড়ি ছোটে মল্লারপুর ২ ব্লকের দিকে। একটি বুথের সামনে গাড়ি থেকে নামতেই ঘিরে ধরেন জনা কয়েক মহিলা। তাঁরা জড়িয়ে ধরে আশীর্বাদ করতেই হাসি ফোটে লকেটের মুখে।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত লকেট যেখানেই গিয়েছেন, ভিড় জমিয়েছেন গ্রামের আট থেকে আশি। বাদ যাননি তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীরাও। লোকপাড়ায় ভিড়ের মাঝে লকেটকে দেখতে হাজির তৃণমূল কর্মী প্রভাকর মণ্ডল যেমন বলেন, ‘‘এখানে বেশি ভোট আমরাই পাব। তবে উনি এসেছেন শুনে দেখতে এলাম।’’
লকেটের মুখে অবশ্য সব সময় হাসি ছিল না। কেন্দ্রের ২৬২টি বুথের ৬৪টিতে বিজেপি-র এজেন্ট না থাকা, নানা বুথে রিগিংয়ের অভিযোগ— বেলা বাড়তে এমন খবর যত এসেছে, চোয়াল শক্ত হয়েছে তাঁর। রিগিংয়ের অভিযোগ পেয়ে দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ তিনি পৌঁছন প্রচণ্ডপুর বিএসএম হাইস্কুলে। ভোটকেন্দ্রে ঢুকেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানকে বলেন, ‘‘৩০ নম্বর বুথে রিগিং হল, আপনারা কী করছিলেন?’
উত্তর না পেয়ে সটান প্রিসাইডিং অফিসার দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সামনে গিয়ে প্রশ্ন, ‘‘রিগিং হয়েছে কি হয়নি বলুন?’’ অফিসার অস্বীকার করতেই অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন লকেট। টেবিল চাপড়ে বলেন, ‘‘হোয়াটসঅ্যাপে আমার কাছে ছবি এসেছে। এটা নির্বাচন কমিশনকে দেব।’’ তার পরেই তাঁর তোপ, ‘‘তৃণমূলের থেকে টাকা নিয়ে ভোট করাচ্ছেন? আর কত দিন করবেন? সারা জীবন চলবে তো?’’ এই ঘটনা নিয়ে কমিশন রিপোর্ট চাইলেও লকেট তা গুরুত্ব দিতে নারাজ। পরে বলেন, ‘‘এক বার নয়, দরকার হলে হাজার বার বলব।’’
লকেটের মেজাজ হারানো নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ময়ূরেশ্বরের তৃণমূল প্রার্থী অভিজিৎ রায়। তবে এলাকার এক তৃণমূল নেতার মন্তব্য, ‘‘দেওয়াল লিখনটা বোধহয় বিজেপি প্রার্থী পড়ে ফেলতে পেরেছেন। তাই এ ভাবে প্রিসাইডিং অফিসারকে ধমকাতে হল।’’ বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী সিপিএমের অরূপ বাগও দিনভর অনেক বুথে ঘুরেছেন। বিকেলে তিনি বলেন, ‘‘কয়েকটি জায়গায় একটু অসুবিধে হয়েছে ঠিকই। তবে মোটের উপর ভোট শান্তিপূর্ণ।’’
পড়ন্ত বিকেলে লকেটের গাড়ি ছোটে ময়ূরেশ্বরের পাথাই গ্রামের দিকে। মাসখানেক ধরে সেখানেই এক তিন তলা বাড়ির অতিথি তিনি। ক্লান্ত লকেট বলেন, ‘‘রিগিং হয়েছে ঠিকই। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই ভোট দিতে পেরেছেন। তাঁদের আশীর্বাদ রয়েছে। এটাই প্রাপ্তি।’’
আরও পড়ুন...
দিনভর সঙ্গী ভিড়, ময়ূরেশ্বর দাপিয়ে বেড়ালেন লকেট চট্টোপাধ্যায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy