Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

তৃণমূল নেতা খুনে অভিযুক্ত জোটপ্রার্থীও

ভোটের মুখে কাকদ্বীপের তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় যে ভাবে তিন দলীয় সমর্থককে ধরা হয়েছে এবং আরও ১৩ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে, তাতে রায়দিঘি-কাণ্ডেরই ছায়া দেখছে সিপিএম। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন কাকদ্বীপের সিপিএম প্রার্থী রফিকউদ্দিন মোল্লাও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৬ ০৩:১২
Share: Save:

ভোটের মুখে কাকদ্বীপের তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় যে ভাবে তিন দলীয় সমর্থককে ধরা হয়েছে এবং আরও ১৩ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে, তাতে রায়দিঘি-কাণ্ডেরই ছায়া দেখছে সিপিএম। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন কাকদ্বীপের সিপিএম প্রার্থী রফিকউদ্দিন মোল্লাও। শাসকদলের নেতাদের চাপে পুলিশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করেছে, এই অভিযোগ তুলে শুক্রবারই নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে সিপিএম। কমিশন ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

বুধবার রাতে কাকদ্বীপের কেঁদোরামচন্দ্রপুরে তৃণমূলের কর্মিসভা ছিল। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের কয়েক জন জানান, একটি মাদ্রাসার নির্বাচন নিয়ে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতেই সভা হয়। সেখান থেকে রাতে মোটরবাইকে শিবনগর গ্রামে বাড়ি ফিরছিলেন তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা আবুজার মোল্লা। সঙ্গে ছিলেন দলীয় কর্মী জাহাঙ্গির হোসেন ভাগ্গি। গ্রামের রাস্তায় বোমা মেরে, গুলি চালিয়ে এবং শেষে চপার দিয়ে কুপিয়ে আবুজারকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। গুলিতে জখম হন জাহাঙ্গির।

তদন্তে নেমে পুলিশের অনুমান, একটি পুরনো বিবাদের জেরে খুনের বদলা হিসেবেই ৬-৭ জন পেশাদার খুনি আবুজারকে খুন করে। একই ধারণা স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বেরও। ওই রাতেই সিপিএম কর্মী হাজিমুদ্দিন পিয়াদা, মনছেপ হালদার এবং সঞ্জীবন সর্দারকে আটক করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার নিহতের বড় ছেলের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগে আরও যে ১৩ জনের নাম রয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই সিপিএমের। প্রার্থী ছাড়াও নাম রয়েছে কাকদ্বীপ জোনাল কমিটির সম্পাদক মৃতেন্দু ভুঁইয়ারও। কয়েক জন কংগ্রেস সমর্থকও অভিযুক্ত।

এই ঘটনা দু’বছর আগের রায়দিঘি-কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি বলেই মনে করছে সিপিএম। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের পরেই রায়দিঘির খাঁড়ি এলাকায় জমির দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে তিন তৃণমূল সমর্থক এবং এক সিপিএম সমর্থক নিহত হন। দলীয় সমর্থকদের পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে বলে তৃণমূলের তরফে সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, দলের মথুরাপুর-২ জোনাল কমিটির সম্পাদক বিমল ভাণ্ডারী-সহ ২১ জন নেতা-কর্মীর নামে অভিযোগ দায়ের করে তৃণমূল। বিমলবাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে বিমলবাবু জামিন পান।

বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে সিপিএমের দাবি, খুনে যাঁদের নাম জড়ানো হয়েছে, তাঁদের বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে ২০-৩০ কিলোমিটার দূরে। আবুজার খুন হন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে। তাতে সিপিএম যুক্ত নয়। নির্বাচনের সময় জোটের সক্রিয় নেতাকর্মীদের জেলবন্দি করে রাখতে শাসকদল চক্রান্ত করছে, অভিযোগ তুলে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্তের জন্য নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছি।’’ জেলা কংগ্রেস নেতা অর্ণব রায় বলেন, ‘‘কাকদ্বীপে কংগ্রেস ও সিপিএম জোটবদ্ধ হওয়ায় তৃণমূল সাফ হয়ে যাবে। ওই আতঙ্কে মিথ্যা অভিযোগ তুলে শাসকদল পায়ের তলার মাটি সামলানোর চেষ্টা করছে।’’ এ দিন জোটের তরফে এসডিপিও-র (কাকদ্বীপ) কাছে গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানানো হয়। জেলা তৃণমূল সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায় চক্রান্তের অভিযোগ উড়িয়ে এ দিনও দাবি করেন, ‘‘পরিকল্পিত রাজনৈতিক খুন।’’

জেলা পুলিশের কর্তারা অবশ্য জানান, এফআইআরে নাম থাকা মানেই তাঁদের গ্রেফতার করা হবে, তা না-ও হতে পারে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তারপরেই গ্রেফতারের প্রশ্ন। তদন্তে দেখা হচ্ছে, খুনের পিছনে কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা রয়েছে কিনা এবং যে পেশাদারিত্বের সঙ্গে খুন করা হয়েছে তা কোনও রাজনৈতিক দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকের পক্ষে করা সম্ভব কিনা। কয়েক জন পুলিশকর্তা মনে করছেন, এ ভাবে গুচ্ছ গুচ্ছ সিপিএম-কংগ্রেস নেতাকর্মীর নাম জড়িয়ে দিলে তদন্ত অন্য পথে চলে যেতে পারে। তা ছাড়া, কমিশনের তদন্তে এফআইআর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রমাণ হলে মামলা এমনিতেই লঘু হয়ে যাবে।

ধৃতদের এ দিন কাকদ্বীপ আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের ৫ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ধৃত মনছেপ সর্দার খেতমজুরের কাজ করতেন। তাঁর স্ত্রী সাবিরা বিবি বলেন, ‘‘বুধবার রাতে স্বামী ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। পুলিশ এসে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেল। কারও কথা শুনল না। ও কেন খুন করতে যাবে?’’

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy