বড়মার আশীর্বাদ চাইলেন কংগ্রেস প্রার্থী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
বাগদায় প্রার্থী হিসাবে প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক দুলাল বরের নাম ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। ওই আসনে ফরওয়ার্ড ব্লক আগেই মৃণাল সিকদারের নাম ঘোষণা করে দেওয়ায় ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্মীদেরও একাংশের আপত্তি ছিল। জোটের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’-এর তালিকায় বাগদার নামও জুড়ছে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
যদিও ফরওয়ার্ড ব্লকের স্থানীয় নেতৃত্বের একটি অংশ চাইছে, দুলালবাবুর সমর্থনে যে আবেগ কাজ করছে বাগদায়, তাকে কাজে লাগিয়ে বিদায়ী বিধায়ক তথা তৃণমূল প্রার্থী উপেন বিশ্বাসকে হারাতে দুলালবার মতো প্রার্থীই দরকার। সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্বেরও দুলালবাবুর প্রতি সমর্থন স্পষ্ট। ফরওয়ার্ড ব্লকের অন্দরেরই খবর, মৃণালবাবুও নিজে এই আসনে দাঁড়াতে আগ্রহী নন। সে ক্ষেত্রে জেলা নেতৃত্বের কাছে স্থানীয় ফরওয়ার্ড নেতারা দাবি করেছেন, বাগদা কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়ে বনগাঁ উত্তর আসনটি দাবি করা হোক। ওই আসনে এখনও জোট প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়নি।
পরিস্থিতি যখন এখানে দাঁড়িয়ে, তখন বৃহস্পতিবার মৃণালবাবুর পরিবর্তে বাগদায় ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী হিসাবে স্থানীয় বাসিন্দা অশোক বিশ্বাসের নাম ঘোষণা করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। যদিও সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম এ দিনই বলেছেন, তৃণমূলকে হারানোই মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য যেখানে যার দরকার হবে, সেখানে তাকে বসে যেতে হবে।’’
অন্য দিকে, সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘‘ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্বের সঙ্গে আমাদের এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।’’ বনগাঁ শহর কংগ্রেস সভাপতি কৃষ্ণপদ চন্দ বলেন, ‘‘এটা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্বের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির ফলশ্রুতি। তবে অবিলম্বে প্রার্থী প্রত্যাহার হবে বলে আমরা মনে করছি।’’
কী বলছেন মৃণালবাবু?
তিনি বলেন, ‘‘এখনও দল থেকে কিছু জানানো হয়নি। লোকমুখে শুনেছি।’’
তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত নেতা দুলাল বর দিন কয়েক আগেই তাঁর অনুগামী নেতা-কর্মীদের নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেসে। সে সময়ে দুলালবাবু জানান, বাগদা থেকে কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়াতে চান। দুলালবাবুর সঙ্গে শাসক দলের স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা-নেত্রীও দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শাসক দলের পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েতের কিছু সদস্যও আছেন। মূলত স্থানীয় তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়ক উপেন বিশ্বাসের উপরে ক্ষুব্ধ হয়েই এঁরা দল ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন। ফলে স্থানীয় তৃণমূলে ভাঙনও তৈরি হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই বাগদায় দুলালবাবু কংগ্রেসেরও প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠেন।
প্রার্থিপদ নিয়ে জটিলতা যে গাঢ় হচ্ছে, তার আঁচ পেয়ে মৃণালবাবুও এত দিন প্রচারে গা ঘামাননি। একদিনই মাত্র হেলেঞ্চা বাজারে ছোট্ট একটি মিছিল করেন তিনি। সেই মিছিলে আবার সিপিএমের কেউ যোগ দেয়নি। মৃণালবাবুর নামে বাগদায় বাম কর্মী-সমর্থকেরাও প্রচার শুরু করেনি। পোস্টার-ব্যানার লাগানো হয়নি এখনও। দিন কয়েক আগে হেলেঞ্চায় সিপিএম বিশাল মিছিল করে। সেখানেও মৃণালবাবুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। মৃণালবাবু গত বিধানসভা ভোটেও উপেনবাবুর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পরাজিত হয়েছিলেন।
এ দিকে, ফরওয়ার্ড ব্লক জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা বাগদা লোকাল কমিটির সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী এই পরিস্থিতির জেরে দলের জেলা কমিটির কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন। যদিও নিজেই জানিয়েছেন, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাসের অনুরোধে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমাদের সকলের লক্ষ্য, শাসক দলকে হারানো। রাজ্যের বহু জায়গায় আমরা সে কারণে আসন ছেড়ে দিয়েছি। তা হলে, কেন বাগদা আসনটি কংগ্রেসকে দিয়ে বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রে আমরা প্রার্থী দিয়ে আসন রফা করতে পারব না।’’ বাগদায় প্রার্থী নিয়ে অচলাবস্থা কাটাতে বুধবার বনগাঁ শহরের সিপিএমের কার্যালয়ে এসে সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নরেন চট্টোপাধ্যায়। এ দিকে, ফরওয়ার্ড ব্লকের স্থানীয় নেতৃত্ব দুলালবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছেন। সম্প্রতি একটি মিছিলে দুলালবাবুর সঙ্গে ফরওয়ার্ড ব্লক সমর্থকেরা দলীয় পতাকা নিয়ে হেঁটেছেন।
প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পরে বৃহস্পতিবার দুলালবাবু কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঠাকুরনগরে গিয়ে সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপানি ঠাকুর বা বড়মাকে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেন। দেখা করেন মতুয়া ঠাকুরবাড়ির বড়বৌ, বনগাঁর সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের সঙ্গেও। ঠাকুরবাড়িতে প্রয়াত সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের চিতাভস্ম রাখা বেদিতে প্রণাম করেন। পরে বলেন, ‘‘শাসক বিরোধী প্রতিটি দলের কর্মী-সমর্থকেরা আমার হয়ে নেমে পড়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy