(বাঁ দিকে) কাজল শেখ। (ডান দিকে) অনুব্রত মণ্ডল (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
নিরাপত্তা বাড়ল বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের। এ বার থেকে তিনি ওয়াই প্লাস পর্যায়ের নিরাপত্তা পাবেন বলে রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত ১৬ নভেম্বর, শনিবার বীরভূম জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বৈঠকের আগে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন জেলা তৃণমূলের নেতারা।
বীরভূমের রাজনীতিতে কাজল বনাম অনুব্রত মণ্ডলের ‘দ্বন্দ্ব’ তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সুবিদিত। তাই কোর কমিটির সঙ্গে অনুব্রতের ‘সমন্বয়’ ঘটিয়ে জেলা তৃণমূল পরিচালনা করতে বোলপুরের তৃণমূল কার্যালয়ে কোর কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকের আগে কাজলের নিরাপত্তা বাড়িয়ে জেলার রাজনীতিতে তাঁর ‘গুরুত্ব’ বোঝানো হয়েছে বলেই অভিমত অনুব্রত শিবিরের একাংশের। তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলেননি। অনুব্রত-অনুগামীরা চান, দ্রুত তাঁদের ‘কেষ্টদা’ জেলা সংগঠনের হাল ধরুন। যদিও তাঁরা জানেন, দু’বছরেরও বেশি সময় সংগঠন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর ‘প্রত্যাবর্তন’ সহজ নয়। তাই সময় নিয়ে, প্রতিটি ব্লকের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ করে এগোতে চান অনুব্রত। অনুগামীদের বক্তব্য, অনুব্রত বিভিন্ন ব্লকের বিজয়া সম্মিলনীতে গিয়ে নিজের ‘শক্তি’ পরখ করেছেন। তাঁর অনুগামীদের দাবি, কর্মী এবং সমর্থকেরা অনুব্রতকে যে ভাবে সমস্ত ব্লকে স্বাগত জানাচ্ছেন, তাতে তাঁর আগের জমি ফিরে পেতে অসুবিধা হবে না।
গরু পাচার মামলায় জামিন পেয়ে তিহাড় জেল থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর বোলপুরের বাড়িতে ফেরেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তার পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছে যে, কবে আবার বীরভূমের রাজনীতিতে ‘স্বমূর্তিতে’ দেখা যাবে অনুব্রতকে। কারণ, কারাবাসের সময়ে অনুব্রতকে জেলা তৃণমূলের সভাপতি পদ থেকে না সরালেও জেলার রাজনীতি পরিচালনার জন্য একটি কোর কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কমিটি এত দিন বীরভূমের সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখার পাশাপাশি পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোট পরিচালনারও কাজ করেছে। অনুব্রতকে ছাড়াই কোর কমিটির নেতারা ওই দু’টি ভোটে বীরভূমে তৃণমূলের ‘আধিপত্য’ বজায় রেখেছেন। বস্তুত, লোকসভা ভোটে ২০১৯ সালের চেয়ে জয়ের ব্যবধান বেড়েছে তৃণমূলের দুই সাংসদের। তাই বীরভূমের রাজনীতিতে অনুব্রত নিজের পুরনো জায়গা ফিরে পাবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। তাঁর নেতৃত্ব ছাড়াই তৃণমূল সাফল্য পেয়েছে। ফলে তাঁর মতো ‘বিতর্কিত’ নেতার হাতে দলের রাশ পুরোপুরি আগের মতো তুলে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে রাজ্য তৃণমূলের অন্দরমহলে।
২০২২ সালের ১১ অগস্ট অনুব্রত গ্রেফতার হন। তার পর থেকে বীরভূমের রাজনীতিতে উল্কার গতিতে উত্থান হয়েছে কাজলের। শুধু কোর কমিটিতে জায়গা পাওয়াই নয়, ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে জয়ের পর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে জেলা পরিষদের সভাধিপতি করেন। লোকসভা নির্বাচনে বীরভূম ও বোলপুর লোকসভা আসন জয়ের ক্ষেত্রে কাজলের বড় ভূমিকা রয়েছে বলেই মনে করে দলের একাংশ। এক সময়ে নানুরের মধ্যে নিজের কর্মকাণ্ড সীমিত রাখা কাজল এখন জেলার রাজনীতিতে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করেছেন। তাই প্রত্যাবর্তনের পরে অনুব্রতের হাতেই সংগঠনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তুলে দিতে হবে, এমন ভাবছেন না দলের নেতারা। মুখ্যমন্ত্রীর ‘আস্থাভাজন’ অনুব্রতের কারণেই বীরভূমের রাজনীতিতে একসময় কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন কাজল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নানুর আসনে তৃণমূল বিধায়ক গদাধর হাজরার পরাজয়ের পিছনে কাজলের ভূমিকা ছিল বলে বীরভূমের তৃণমূলের অন্দরে শোনা যায়। নিজের রাজনৈতিক শক্তি জানান দিতেই অনুব্রতের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নানুরে দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন কাজল— এমনই অভিযোগ ছিল অনুব্রত শিবিরের। যদিও কাজল সে অভিযোগ বরাবরই উড়িয়ে দিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, তৃণমূলের অন্দরের সমীকরণে কাজল অভিষেকের ‘আস্থাভাজন’ নেতা বলেই পরিচিত। অভিষেক সম্প্রতি বলেছেন, ব্যক্তিগত ভাবে তিনি মনে করেন, বীরভূমের দায়িত্ব কোর কমিটির হাতেই থাকা উচিত। কারণ, কোর কমিটি ভোটে ভাল ফল করে দেখিয়েছে। তবে একই সঙ্গে জেলার রাজনীতিতে অনুব্রতের ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন করায় অভিষেক জানিয়েছিলেন, অনুব্রত কোর কমিটির বৈঠক ‘পরিচালনা’ করবেন।
এই আবহেই শনিবারের বৈঠক এবং তার অব্যবহিত আগে কাজলের নিরাপত্তা বৃদ্ধি। যা থেকে বৈঠকের আগে আরও জল্পনা তৈরি হচ্ছে। কোর কমিটিতে কাজল ছাড়াও রয়েছেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী এবং যুবনেতা সুদীপ্ত ঘোষ। কাজল ছাড়া প্রায় সকলের সঙ্গে অনুব্রতের সম্পর্ক ভাল। তবে রামপুরহাটের বিধায়ক তথা ডেপুটি স্পিকার আশিসের সঙ্গে অনুব্রতের ‘রাজনৈতিক বিরোধ’ আছে। তবে তা বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতির মাথাব্যথার কারণ হয়নি। যদিও কাজলের বিষয়টি তেমন নয়। কারণ, তিনি ক্যামাক স্ট্রিটের ‘ছত্রছায়ায়’ রয়েছেন বলেই দলের লোকেরা জানেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy