রঘুনাথগঞ্জের ম্যাকেঞ্জী মাঠ থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাঁশ। নীচে, সাগরদিঘিতে রাতের অন্ধকারেও চলছে মঞ্চ বাঁধার কাজ।
নীল-সাদা ডুরে কাপড়ের স্তূপ, ট্রাক বোঝাই বড়-মেজ বাঁশ, মঞ্চ বাঁধার পেরেক ওঠা তক্তা— পাঁচ তারিখের জন্য সাজগোজের যাবতীয় উপকরণই পড়ে গিয়েছিল মাঠে।
ঘন ঘন বাইক দাপিয়ে নেতারা দলনেত্রীর সভা মঞ্চের তদারকির মাঝেই খবরটা এল—রঘুনাথগঞ্জ নয়, সাগরদিঘি। নেত্রীর ম়ঞ্চ। বদলে গিয়েছে। কেন?
মাস কয়েক আগেও সাগরদিঘি ঘুরে গিয়েছিলেন তিনি। স্থানীয় প্রার্থী সুব্রত সাহাকে পাশে নিয়ে এক দফা আগাম প্রচারও সেরে রেখেছিলেন। তার পরেও ফের সাগরদিঘি? যা শুনে রঘুনাথগঞ্জের মুখ ভার হলে সামাল দেহে কে? স্থানীয় নেতাদের প্রশ্ন করলে ঝাঁঝালো উত্তর ফিরে আসছে— ‘‘কী করে বলি বলুন তো, আমার মর্জি মাফিক তো উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) চলেন না!’’ সভা বাতিলের ঘটনায় অস্বস্তিতে রঘুনাথগঞ্জের প্রার্থীও। দলীয় সূত্রে খবর, তা নিয়ে প্রকাশ্যে রা না কাড়লেও ঘনিষ্ঠদের কাছে জানিয়েছেন অসন্তোষ। দলের রঘুনাথগঞ্জ ব্লক সভাপতি মুক্তিপ্রসাদ ধর এ সব ‘গুঢ়’ প্রশ্ন অবশ্য এড়িয়ে যাচ্ছেন, ‘‘কেন সভা বাতিল হল জানি না। নির্বাচনের আগে ক’টা তো মোটে দিন, আমরা এখন গ্রামে গ্রামে প্রচার নিয়েই ব্যস্ত থাকব।’’
সভা বাতিল হয়ে গিয়েছে বড়ঞাতেও। স্থানীয় প্রার্থী ষষ্ঠী মালের প্রস্তুতিও প্রায় সারা হয়ে গিয়েছিল। সবা বাতিল হওয়ায় সেকানেও কিঞ্চিৎ অস্বস্তিতে দল।
সভাস্থল বদলে গিয়েছে খবর পেয়েই অবশ্য থানা আর প্রশাসনের থরহরি কম্প শুরু হয়ে গিয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা তো বলেই ফেলছেন, ‘‘ক্ষণে ক্ষণে এই মত বদলের সঙ্গে আর পাল্লা দেওয়া য়াচ্ছে না।’’ তড়িঘড়ি শনিবার রাতেই সে কানে অবশ্য বাঁশ পড়েছে মাঠে। ফ্লাড লাইট জ্বেলে শুরু হয়ে গিয়েছে অনুষঙ্গিক কাজও। মঙ্গলবার বেলায় কপ্টার নামবে যে মাঠে, সেখানে রাতেই মাটি ফেলে হেলিপ্যাড তৈরির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে রবিবার।
এখন প্রশ্ন, সাগরদিঘিকে এত গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন দলনেত্রী? গত ১৬ ডিসেম্বর, মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি ব্লকের ধুমারপাহাড় মাঠে সরকারি সভা করে ৯৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৯১টি প্রকল্পের শিলান্যাস করে গিয়েছিলেন মমতা। সভা মঞ্চেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, সাগরদিঘির সঙ্গে তার সুসম্পর্ক , এমনকী তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক-সূত্রও।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনে তাঁর সেই আত্মীয়েরাই প্রকাশ্যে সুব্রতর বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছেন। তবে কি তাদের ঠেকাতেই দলনেত্রীকে ফের সাগরদিঘিতে আনা হচ্ছে।
দিন দশেক আগে দলের দুই পঞ্চায়েত প্রধান ও তিন উপপ্রধান সহ ৫৭ জন পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূল থেকে গণ ইস্তফা দিয়েছেন সাগরদিঘিতে। দল ছেড়েছেন যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় সহ ১১ জন অঞ্চল যুব সভাপতিও। দেবাশিসবাবু সম্পর্কে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিসতুতো ভাই। সম্প্রতি তার পিতৃপিয়োগের পারলৌকিক কাজে যোগ দিতে সাগরদিঘির বাড়িতেও এসেছিলেন মমতার দাদা কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলতঃ কার্তিকবাবুর সুপারিশেই এক সময় দেবাশিসবাবুকে সাগরদিঘিতে ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি করা হয়।
কিন্তু সভাপতি করা হলেও তিনি বরাবরই সুব্রতর মনোনয়ন নিয়ে বিরোধীতা করে এসেছেন। এখন বিক্ষুব্ধ তৃণমূলীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সুব্রতের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছেন।
এমনিতেই সাগরদিঘি তৃণমূলের যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের সিট। ২০১১ সালে সুব্রতবাবু তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে জিতেছিলেন ৪৫৫৪ ভোটের ব্যবধানে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সে ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ১৩৮০তে। এই অবস্থায় ভোটের আগে ব্যাপক দল বদলে স্বভাবতই চাপে রয়েছেন সুব্রতবাবু। তার উপর দলনেত্রীর ভাই পরিচয়ে দেবাশিসবাবু তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে প্রচারে ঘুরে বেরানোয় অস্বস্তি আরও বেড়েছে। তৃণমূল শিবিরের খবর, ‘দিদির ভাই’য়ের এই প্রচারকে ভোঁতা করতেই নির্বাচনী প্রচারে সাগরদিঘিতে দলনেত্রীকে ফের চেয়েছেন সুব্রতবাবু নিজেই। এ নিয়ে জেলার পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারীকেও বার বার অনুরোধ করায় তা কাজে দিয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কংগ্রেসের গড় সাগরদিঘিতেই একমাত্র আসনটি ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। সেটি ধরে রাখা যে জরুরি তা নেত্রীকে বুঝিয়েছেন শুভেন্দু। সে জন্যই কি তাঁর বার বার সাগরদিঘিতে আসা, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন অবশ্য বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী কখন, কোথায় সভা করবেন তা ঠিক করে রাজ্য নেতৃত্ব। হয়তো পরের দফায় তিনি অন্য কেন্দ্রগুলো ছুঁয়ে যাবেন।’’ সেই অপেক্ষাতেই রঘুনাথগঞ্জ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy