Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

দাওয়াই ভোট বয়কট, দুপুরেই বিদ্যুৎহীন গ্রামে পৌঁছল ট্রান্সফর্মার

সমস্যা দীর্ঘ দিনের। কিন্তু, ভোটের আগে তা যেন চরমে ওঠে। গত তিন দিন ধরে গোটা গ্রামে বিদ্যুত্ নেই। ট্রান্সফর্মার না পাল্টালে সমস্যা মেটার কোনও রাস্তাও নেই। তাই, ট্রান্সফর্মার পাল্টানোর দাবি তুলে গোটা গ্রামটাই ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল।

ফাঁকা বুথে ভোটারের অপেক্ষায় ভোটকর্মীরা। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

ফাঁকা বুথে ভোটারের অপেক্ষায় ভোটকর্মীরা। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

শিবাজী দে সরকার
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৬ ১৫:১৮
Share: Save:

সমস্যা দীর্ঘ দিনের। কিন্তু, ভোটের আগে তা যেন চরমে ওঠে। গত তিন দিন ধরে গোটা গ্রামে বিদ্যুত্ নেই। ট্রান্সফর্মার না পাল্টালে সমস্যা মেটার কোনও রাস্তাও নেই। তাই, ট্রান্সফর্মার পাল্টানোর দাবি তুলে গোটা গ্রামটাই ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল।

কিন্তু ৭৮৪ জন ভোটার যে গ্রামে রয়েছেন, সেখানে কি এত সহজে ভোট বয়কট করা যায়! তাই বয়কটের কথা শুনেই গ্রামে পৌঁছে যান রামপুরহাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রামবাসীদের তিনি আশ্বাস দেন, নতুন ট্রান্সফর্মার বসানো হবে। এবং সেটা আজই। গ্রামবাসীদের সামনেই ফোন করেন প্রশাসনের কোনও এক আধিকারিককে। এর পরই আশিসবাবু জানিয়ে দেন, দুপুরের মধ্যেই ট্রান্সফর্মার পাল্টানো হবে। দীর্ঘ দিনের সমস্যা এ বার মিটে যাবে। কিন্তু, গ্রামবাসীরাও অনড়। প্রার্থীকে জানিয়ে দেন, যত ক্ষণ না নতুন ট্রান্সফর্মার গ্রামে এসে পৌঁছচ্ছে, ভোট দিতে যাবেন না তাঁরা। রবিবার বেলা একটা নাগাদ সেই ট্রান্সফর্মার এসে পৌঁছয় রামপুরহাটের বেলিয়া গ্রামে। তার পরেই বুথে লাইন দেন গ্রামবাসীরা।

অথচ, সকাল থেকেই বেলিয়া গ্রামের ওই ভোটারদের অপেক্ষায় ছিল কৌড়বেলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথ। সকাল থেকে এক জন ভোটারেরও দেখা মেলেনি। বুথে লোক না থাকলেও গ্রামের মোড়ে মোড়ে জটলা দেখা গিয়েছে। ফাঁকা বুথে সব রাজনৈতিক দলের এজেন্টরা বসে ছিলেন। বুথ চত্বরও ছিল ফাঁকা। সকালের দিকে কংগ্রেসের বুথ এজেন্ট সদানন্দ দাস যেমন বলেন, ‘‘গ্রামে তিন দিন ধরে বিদ্যুত্ নেই। ভোট দেওয়ার কথা কোন মুখে বলব বলুন তো মানুষগুলোকে!’’ একই কথা ছিল তৃণমূলের এজেন্ট জীবনসাধন মণ্ডলেরও। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামবাসী হিসেবে আমরাও তো সমব্যাথী। শু‌ধুমাত্র দল করি বলে বুথে বসে থাকতে বাধ্য হয়েছি।’’ ফরোয়ার্ড ব্লকের এজেন্ট আদেশ লেটও জানান, গ্রামের মানুষকে ভোট দিতে আসার কথা তাঁরাও বলেননি। কিন্তু, গ্রামবাসীরা ভোট দিতে এলেও প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূল প্রার্থীর ভূমিকা নিয়ে। ভোটের দিন এ ভাবে তিনি এমনটা করতে পারেন কি? বিরোধীরা সে প্রশ্ন তুললেও, খুশি বেলিয়া গ্রাম।

চূড়ান্ত গরমের মধ্যে সকাল থেকে বুথের দায়িত্বে ছিলেন প্রিসাইডিং অফিসার দিব্যেন্দুবিকাশ মণ্ডল। বেলা যত বেড়েছে, তাপমাত্রা চল্লিশ পেরিয়েছে। মকপোল হওয়ার পর একটাও ভোট পড়েনি। বেলা একটা নাগাদ গ্রামবাসীরা ভোট দিতে এলে তিনি যেন স্বস্তির শ্বাস ফেলেন। গ্রামে বিদ্যুত্ নেই। শনিবার বিকেলে তাঁরা যখন বুথে পৌঁছেছেন তখনও বিদ্যুত্ ছিল না। ভোট বলে এ দিন সকালে একটি জেনারেটর বসানো হয়েছে বুথ চত্বরে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাও জানিয়েছেন গরমের কথা। এক সিআরপি জওয়ান বলেন, ‘‘দিন তিনেক ধরে যা কষ্ট পাচ্ছি, সে আর বলার নয়। একে তো গরম, তার উপর গ্রামে বিদ্যুত্ নেই!’’

এলাকার বাসিন্দা অতনু মণ্ডল সকালে বলছিলেন, তাঁরা প্রতিটা রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ করেছিলেন, ট্রান্সফর্মার পাল্টানোর জন্য। অভিযোগ, কেউ কোনও গুরুত্ব দেয়নি। মিলন মণ্ডল যেমন বলছিলেন, গ্রামবাসীরা দলমত নির্বিশেষে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। দুপুরে ট্রান্সফর্মার না আসা পর্যন্ত কেউ ভোট দিতে যাননি। সকাল থেকে বুথের ১০০ মিটারের মধ্যে শাসক দলের ক্যাম্প থাকলেও সেখানে কোনও ভোটারকে দেখা যায়নি। জয়দেব প্রামাণিক নামে এক গ্রামবাসী জানালেন, প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে এক জন মারা গিয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 shibaji de sarkar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE