Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
TMC

Bengal polls 2021: আসানসোলের জিতেন অবশেষে গেলেন পদ্মবনেই, স্বাগত জানালেন বাবুলও

জিতেন বিজেপি-তে যোগ দেওয়ায় গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে চলা তৃণমূলের জিতেন-নাটকে ছেদ পড়ল। বৈদ্যবাটীতে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক। ইদানীং দলে প্রায় ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে পড়েছিলেন জিতেন। তবুও বিজেপি মনে করছে, এই সময়ে জিতেনের দলত্যাগ তৃণমূল শিবিরের কাছে জোরাল ধাক্কা হবে। তবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় তেমন কিছু মনে করছেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অনেকেই তো যাচ্ছেন। আবার অনেকে বিজেপি থেকে আমাদের দলেও আসছেন। কেউ চলে গেলে কিছু যাবে-আসবে না। তবে যাঁরা যাচ্ছেন, পরে তাঁদের আঙুল চুষতে হবে।’’ প্রসঙ্গত, এর আগেও জিতেনের বিজেপি-র দিকে পা বাড়িয়েছিলেন। তখন নেটমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে প্রবল আপত্তি জানান বাবুল।

জিতেন্দ্র তিওয়ারি ও বাবুল সুপ্রিয়।

জিতেন্দ্র তিওয়ারি ও বাবুল সুপ্রিয়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২১ ১৮:৫৫
Share: Save:

শেষপর্যন্ত সত্যি হল আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র (জিতেন) তিওয়ারির বিজেপি-তে যোগদানের জল্পনা। রাজ্যে বিধানসভা ভোটের প্রায় শেষলগ্নে এসে তৃণমূলকে ‘ধাক্কা’ দিয়ে বিজেপি-তেই যোগ দিলেন তিনি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, পুরনো রাজনৈতিক ‘শত্রু’কে এখন ‘মিত্র’ বলে মেনে নিতে আপত্তি করেননি আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও। জিতেনকে দলে ‘স্বাগত’ জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘উনি তো সাহস করে ফিরহাদ হাকিমকে চিঠিটা লিখেছিলেন! বলেছিলেন, রাজনৈতির স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসানসোলকে স্মার্ট সিটি করতে দেননি। কেউ যদি নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে উন্নয়নের কাজ করতে চান, তাঁকে বিজেপি-তে স্বাগত। উনি এলে আমাদের দল শক্তিশালীই হবে।’’

জিতেন বিজেপি-তে যোগ দেওয়ায় গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে চলা তৃণমূলের জিতেন-নাটকে ছেদ পড়ল। মঙ্গলবার হুগলির বৈদ্যবাটীতে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক। ইদানীং দলে প্রায় ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে পড়েছিলেন জিতেন। তবুও বিজেপি মনে করছে, এই সময়ে জিতেনের দলত্যাগ তৃণমূল শিবিরের কাছে জোরাল ধাক্কা হবে। তবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় তেমনকিছু মনে করছেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অনেকেই তো যাচ্ছেন। আবার অনেকে বিজেপি থেকে আমাদের দলেও আসছেন। কেউ চলে গেলে কিছু যাবে-আসবে না। তবে যাঁরা যাচ্ছেন, পরে তাঁদের আঙুল চুষতে হবে। এটুকু বলে রাখলাম।’’

প্রসঙ্গত, এর আগেও জিতেনের বিজেপি-র দিকে পা বাড়িয়েছিলেন। তখন নেটমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে প্রবল আপত্তি জানান বাবুল। যদিও বাবুল তখনই বলেছিলেন, সেটা তাঁর ‘ব্যক্তিগত মত’। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তই তিনি মেনে নেবেন। বাবুলকে সমর্থন করেছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পল, সায়ন্তন বসু প্রমুখ। ঘটনার পরেই বাবুল এবং দিলীপ ছাড়া সকলকে শো-কজ করা হয়েছিল। কারণ, তাঁরা দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধএ গিয়ে কথা বলেছিলেন। ওই কড়া শাস্তির মারফত বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল, জিতেনকে দলে নিতে চান বিজেপি-র শীর্ষনেতারা। তবে শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যান জিতেন নিজেই। উল্টে তিনি কলকাতায় এসে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। দেখা করার চেষ্টা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তার পর রাতে বৈঠক করেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে। সেই বৈঠকের পর বেরিয়ে কাঁচুমাচু মুখে বলেন, ‘‘ভুল করেছি। দিদির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব।’’ আর অরূপ বলেন, ‘‘এটা পারিবারিক বিষয়। যে কোনও পরিবারেই গোলমাল হয়। তা আবার মিটেও যায়। এটাও মিটে গিয়েছে।’’ সেই ক্ষমাপ্রার্থনা হয়ে উঠেছিল কি না জানা নেই। কিন্তু দেখা গেল, অরূপের ‘দৌত্য’ ব্যর্থ হয়েছে।

সেই ঘটনাপ্রবাহের মাস তিনেকের মাথায় জিতেন বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন। তিন মাসের ব্যবধানে সুর বদলে গিয়েছে বাবুলেরও। মঙ্গলবার জিতেনের বিজেপি-তে যোগদান নিয়ে প্রশ্ন করা বাবুল বলেন, ‘‘জিতেন্দ্র তিওয়ারির সঙ্গে অনেক দিন ধরেই আমার কথা চলছে। আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে বৈরিতা নিয়ে লড়াই করেছিলাম। কিন্তু তিনি যদি নরেন্দ্র মোদীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দলে কাজ করতে চান তা হলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’’ বাবুলের কথা থেকে অনেকে মনে করছেন, জিতেনকে নিয়ে যাঁর আপত্তি সবচেয়ে বেশি ছিল, তাঁকে দিয়েই জিতেনের সঙ্গে মধ্যস্থতা করিয়েছেন বিজেপি-র শীর্ষনেতৃত্ব। প্রসঙ্গত, জিতেনের তথাকথিত ‘ঘর ওয়াপসি’র সময়েই বিজেপি-র এক শীর্ষনেতা জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি খানিকটা থিতিয়ে গেলে জিতেন বিজেপি-তেই যোগদান করলেন।

গত ১৬ ডিসেম্বর পশ্চিম বর্ধমানের তৃণমূলের জেলা সভাপতির পদ থেকে আচমকা ইস্তফা দেন জিতেন। তিনি দলত্যাগের কথাও ঘোষণা করেছিলেন তখনই। তার পর ঘটে অরূপ-বৈঠক। কিন্তু তার পরেও পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটি গঠনের সময় জিতেনকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর পর বেশ কিছু দিন ‘অজ্ঞাতবাস’। মাঝে মাঝে অবশ্য টুইটার এবং ফেসবুকে ‘ইঙ্গিতবাহী’ মন্তব্য বা শায়েরি পোস্ট করে নিজের ‘মতবাদ’ ভাসিয়ে দিয়েছিলেন জিতেন। কখনও লিখেছেন, ‘রাজনীতিতে কোনও ফুলস্টপ নেই। রয়েছে পরপর কমা, কোলন, সেমিকোলন’। অর্থাৎ, রাজনীতিতে কোনও পূর্ণচ্ছেদ নেই। রয়েছে একাধিক যতিচিহ্ন। আবার কখনও ‘অর্থবহ’ শায়েরিও পোস্ট করেছেন। কখনও ইংরেজি প্রবাদ তুলে ধরে লিখেছেন ‘হোয়েন দ্য গোয়িং গেট্স টাফ, দ্য টাফ গেট্স গোয়িং’। তৃণমূলে থেকে গেলেও নেটমাধ্যমে জিতেনের একের পর এক পোস্ট নিয়ে জল্পনা দানা বাঁধতে থাকে। বাড়তে থাকে তাঁর রাজনৈতিক কক্ষপথ নিয়ে ‘রহস্য’ও। অবশ্য কিছু দিনের মধ্যে ‘অজ্ঞাতবাস’ কাটিয়ে তৃণমূলে কিছুটা ‘সক্রিয়’ হয়েছিলেন তিনি। প্রাক্তন আইনজীবী জিতেনের কাঁধে তুলে দেওয়া হয় দলের জাতীয় মুখপাত্র্রের দায়িত্ব। জোড়াফুল শিবিরের একটি অংশ মনে করতে শুরু করেছিল, জিতেন ওই দায়িত্ব পাওয়ায় তাঁর তৃণমূলে থেকে যাওয়া পাকা হল। কিন্তু ঠিক তখনই নতুন এক সরলরেখার জন্ম দিলেন তিনি। যার নিশানা তৃণমূলের ঠিক বিপরীতমুখী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy