অমিত শাহ
নীলবাড়ির লড়াইকে যুদ্ধের রূপ দিতে চলতি সপ্তাহে কার্যত বাংলায় ঝাঁপিয়ে পড়ছেন মোদী-শাহ। বুধবার পুরুলিয়ায় সমাবেশ করে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের রাজ্যে আসার কথা শনি, সোম ও বুধবারে। তার মধ্যেই রবিবার বাংলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আসার কথা পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায়। আর সেই দিন বিকেলেই অমিতের হাত দিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তাহার প্রকাশ করতে চাইছে পদ্মশিবির। জানা গিয়েছে, সেই ইস্তাহারে ক্ষমতায় এলে পদ্মশিবির কী কী করতে চায়, তার স্বল্পমেয়াদী প্রতিশ্রুতির কথাও যেমন থাকবে, তেমনই থাকবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার উল্লেখও।
এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা দেখছে বিজেপি। সেই কারণে অতীতের মতো চটজলদি নয়, অনেক ভাবনাচিন্তা করে বানানো হয়েছে ইস্তাহার। এর জন্য অনেক আগে থেকেই আলাদা একটি দলও গঠন করেছিল বিজেপি। সেই দলে বিভিন্ন শাখা সংগঠনের প্রতিনিধি ছাড়াও রাখা হয়েছিল সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠিতদের। ওই দলের এক সদস্য শুক্রবার বলেছেন, ‘‘ইস্তাহার তৈরির কাজ চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। আর তাতে অন্য রাজনৈতিক দলের মতো একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি নয়। থাকবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা। থাকবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে কর্মসংস্থান, পর্যটন-সহ সব জরুরি বিষয়।’’
রাজ্য বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবার বরাবরই অনুপ্রবেশ নিয়ে সরব। জানা গিয়েছে, সীমান্ত সুরক্ষা বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলায় অনুপ্রবেশ রুখতে কী কী করা প্রয়োজন, তা থাকবে ইস্তাহারে। সেই সঙ্গে সীমান্ত এলাকা দিয়ে গরুপাচার এবং নারীপাচার রোখার প্রতিশ্রুতিও থাকবে। ইস্তাহার প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি-র এক নেতা বলেছেন, ‘‘আমরা ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। আর সেটা রাতারাতি সম্ভব নয়। তাই ইস্তাহারে এমন কিছু দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থাকবে, যাতে আগামীর পশ্চিমবঙ্গ কেমন হবে তার রূপরেখা দেখতে পাবেন ভোটাররা। ২০৪৭ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ। সেই সময়ের মধ্যে বাংলাকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য বিজেপি-র। তাই আগামী ২৫ বছরে পশ্চিমবঙ্গের সার্বিক উন্নয়নের কথা ভাবা হয়েছে ইস্তাহার তৈরির সময়।’’
কিন্তু শুধুই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা বলে ভোটে জেতা সম্ভব? প্রশ্নের উত্তরে ওই নেতা বলেন, ‘‘শুধু দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নয়। ক্ষমতায় এলেই বিজেপি কী কী করবে, সে কথাও বলা হবে। কিন্তু পাঁচ বছরে সব হয়ে যাবে বলাটা সত্যের অপলাপ। আমরা যে ‘আসল পরিবর্তন’-এর কথা বলছি, তা রাতারাতি সম্ভব নয়।’’ বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ইস্তাহারে ক্ষমতায় এলেই যা যা বিজেপি করবে, তার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্ব পাবে যাবতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প বাংলায় চালু করা। এর মধ্যে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ যেমন আছে, তেমনই আছে ‘কৃষক সম্মান নিধি’ প্রকল্পের কথাও। এর পাশাপাশি রাজ্য সরকারি বেতনভুকদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশন চালুর প্রতিশ্রুতি থাকবে। শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্রীয় হারে যাবতীয় সুবিধা চালুর স্থায়ী নীতি নেওয়ার কথাও থাকবে। ওই নেতা এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ঠিক কী কী থাকবে, সেটা ইস্তাহার প্রকাশের পরেই জানা যাবে। কিন্তু তা তৈরি করার সময়ে আমরা রাজ্যের আয় ও ব্যায়ের মধ্যে সমতা রাখার কথাও মাথায় রেখেছি। মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে ভারী করা হয়নি ইস্তাহার। যেটা সম্ভব তার কথাই বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে থাকবে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার রূপরেখা।’’
‘সোনার বাংলা’ বলতে ঠিক কী বোঝাতে চাইছে বিজেপি? সম্প্রতি রাজ্যে এসে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা বলেছেন, ‘‘সোনার বাংলা বলতে আমরা বাংলার গৌরব, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের কথা বলছি। তা ফিরিয়ে আনার কথা বলছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-র সময় যে বাংলা ছিল, তার কথা বলছি। সে সময় সবদিক থেকে উন্নত ছিল বাংলা। বাংলার গৌরব, সংস্কৃতির বিশ্বজোড়া পরিচিতি ছিল। আর এখন দুর্নীতি, তোলাবাজি, সিন্ডিকেট চলছে বাংলায়। এর থেকে পরিবর্তনের কথা আমরা বলতে চাইছি। আর সেই পরিবর্তনের মাধ্যমেই তৈরি হবে সোনার বাংলা। যে বাংলা ভারতকে নেতৃত্ব দিত, আমরা সেই বাংলা ফিরিয়ে আনব।’’
শুধু নড্ডা নয়, মোদী-শাহরাও ‘আসল পরিবর্তন’ আনার কথা বলছেন। সেটা কেমন হবে, তার রূপ বোঝাতে নড্ডা যা বলেছেন সেটাই শুনিয়েছেন তাঁরা। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এরই মধ্যে দল যে ইস্তাহার তৈরি করেছে তাতে সে সবেরই উল্লেখ থাকবে। ইস্তাহারে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কর্মসংস্থানের বিষয়ে। এই রাজ্যের মানুষকে যাতে অন্যত্র কাজের জন্যে যেতে না হয়, তার জন্য শিল্প নিয়ে দলের পরিকল্পনা বলা হবে ইস্তাহারে। দক্ষিণবঙ্গে চটশিল্পের পুনরজ্জীবন থেকে পশ্চিমাঞ্চলে নতুন শিল্পের কথা থাকবে। উত্তরবঙ্গেও যাতে শিল্পে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তার কথাও থাকবে। শুধু শিল্প নয়, উত্তরবঙ্গের আরও অনেক বিষয়ের আলাদা করে উল্লেখ থাকবে ইস্তাহারে। উত্তরবঙ্গের মানুষ যাতে সহজে প্রশাসনিক সুবিধা পান, সেই প্রতিশ্রুতিও যেমন থাকবে, তেমনই চায়ের পাশাপাশি উত্তরের পাট ও তামাক চাষের উন্নতিতেও পরিকল্পনার কথা বলা হবে। পর্যটন ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গকে আরও গুরুত্ব দেওয়ার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথাও শোনাবে বিজেপি-র ইস্তাহার।
বিজেপি সূত্রে খবর, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের নানা পরিকল্পনাও গুরুত্ব পাচ্ছে ওই ইস্তাহারে। সেই সঙ্গে থাকবে প্রশাসনকে রাজনীতি মুক্ত করার কথা। অবশ্যই জায়গা পাবে ‘তোষণের বিরোধিতা’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy