পুলিশ যখন তাঁকে খুঁজে পাচ্ছে না, তিনি খাস তালুকেই। নিজস্ব চিত্র।
অভিযোগ হওয়ার ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ ওরফে হিম্মত চহ্বানকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অথচ চম্পাসারিতে সারা দিনই দেখা গিয়েছে তাকে। সঙ্গীদের নিয়ে আড্ডাও মেরেছেন দিনভর। কখনও খবরের কাগজ পড়েছেন, কখনও রাজ্যে ক্ষমতায় কে আসবেন তা নিয়ে জল্পনায় অংশ নিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ বলছে তিনি ফেরার।
পুলিশের দাবি, ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বিষয়টি নিয়ে ভাল করে খতিয়ে না দেখে কিছু বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন। তবে ক্ষোভ বাড়ছে অভিযোগকারী ও এলাকাবাসীর তরফে। পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকির মতো গুরুতর অভিযোগের পরেও কী ভাবে খোলা ঘুরে বেড়াচ্ছেন ওই নেতা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও অভিযুক্তের দাবি, এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। তাই এলাকা ছাড়ার প্রশ্নই নেই। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। যদি দোষী প্রমাণিত হই তাহলে নিজেই আত্মসমর্পণ করতে রাজি আছি।’’
তিনি দাবি করলেও মানতে নারাজ এলাকার অনেকেই। এমনকী তৃণমূলেরই একাংশের দাবি, এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে।
কে এই হিম্মত?
তাঁর নাম জয়প্রকাশ সিংহ চহ্বন। তিন পুরুষ ধরে শিলিগুড়ির চম্পাসারি এলাকায় তাঁদের বাস। ঠাকুর্দা রামবরণ থেকে বাবা শিবপ্রসাদ দু’জনেই রেলকর্মী ছিলেন। পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রেখে তিনিও শিলিগুড়ি জংশন ডিজেল শেড ওয়ার্কশপে চাকরিতে যোগ দেন ১৯৯২ সালে। ২০০৬ পর্যন্ত চাকরি করার পর, কর্মক্ষেত্রে গোলমালের জেরে চাকরি খোয়াতে হয়। তারপরেই কর্মহীন হয়ে তিনি একের পর এক বিভিন্ন রকম কাজে জড়িয়ে পড়েন। চম্পাসারিতে নিজস্ব দোতলা বাড়ি, একটি গাড়ি রয়েছে। তাঁর ছেলে শিলিগুড়ির বাইরে থেকে পড়াশোনা করছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রথমে সিপিএমের ছত্রছায়ায় তিনি রাজনীতির পাঠ নেন। যদিও সক্রিয় রাজনীতিতে তিনি কোনওদিনই ছিলেন না বলে জানা যায়। সেই সময় থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম খুচরো গোলমাল, তোলাবাজির অভিযোগ ওঠে। সেই সময় থেকেই আইএনটিইউসির নেতা অলক চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা। নিন্দুকেরা বলেন, তাঁর অপরাধমূলক কাজকর্মে শাসক দলের কোপ থেকে তাঁকে বাঁচাতেন অলকবাবুই। সে কথা স্বীকারও করেছেন অলকবাবু। তাঁর সঙ্গে অবশ্য হিম্মতের বহু দিন কোনও যোগাযোগ নেই বলে দাবি করেন তিনি। অলকবাবু বলেন, ‘‘এটা সত্যি কাজের ছেলে বলে আমি প্রথমে তাঁর অনেক ভুলকে শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। পরে অবশ্য ও নিজেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়।’’
পরে বছর তিনেক আগে হিম্মত তৃণমূলে যোগ দেন। নিজের আর্থিক প্রভাব খাটিয়ে তৃণমূলের তৎকালীন দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের কাছাকাছি চলে আসেন বলে দলেরই একাংশের মত। দ্রুত মন্ত্রীর কাছের লোক হিসেবে অনেককে টপকে গত শিলিগুড়ি পুর নির্বাচনে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হন। ভোটের সময় সমরনগর এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ ওঠে। সেখানে গোলমালের অভিযোগও ওঠে।
চম্পাসারি এলাকায় জমির কারবারি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, চম্পাসারি এলাকায় দেবীডাঙ্গা থেকে শুরু করে চম্পাসারি, সমরনগর, বটতলা এলাকায় কেউ জমি কেনাবেচা করতে গেলে তাঁকে হিম্মত ও তাঁর সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই কিনতে হয়। ক্রেতা ও বিক্রেতা দু’পক্ষের কাছ থেকেই দাবি মতো কমিশন বুঝে নিয়ে তবেই ছাড়পত্র মেলে ওই জমি কেনার ব্যপারে। দ্বিতীয়ত তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে কমিশন আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। এই জন্যই শাসক দলে বা বিরোধী দলের কোনও প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থাকা তার পক্ষে বাধ্যতামূলক বলে জানান স্থানীয় ও দলের অনেকেই। কারণ, তা না হলে তাঁর কাজে অসুবিধা হয়। বিভিন্ন থানায় খুনের মামলায় তাঁর নাম জড়িয়ে গিয়েছে অতীতে বলেও জানা গিয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রতিটি মামলায় গ্রেফতার এড়িয়েছেন বলে তাঁরই ঘনিষ্ঠ মহলের একাংশের দাবি। হিম্মতের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘এ সবই মিথ্যা অভিযোগ। কেউই এ সব প্রমাণ করতে পারেনি।’’
শুক্রবার রাতে তাঁর ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের বিরুদ্ধে সিপিএম কর্মী শ্যাম যাদবের বাড়িতে ঢুকে তাঁর পরিবারের লোককে ভয় দেখানো, তাঁকে মারধর করা ও পিস্তল ঠেকিয়ে ভয় দেখানোর অভিযোগ ওঠে। শনিবার শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন শ্যাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy