সৌগত রায়। —ফাইল চিত্র।
তিনি ভাবছেন ও দাবি করছেন, তাঁর ভোট-যুদ্ধের ময়দান ‘কুসুমাস্তীর্ণ’। কিন্তু সত্যিই কি তা-ই! বরং কামারহাটি, পানিহাটি ও খড়দহ— এই তিন বিধানসভা এলাকায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, শাসক শিবিরের অন্তর্দ্বন্দ্বের ‘চোরা স্রোতের’ শব্দ।
যদিও দমদম লোকসভা কেন্দ্র থেকে জোড়া ফুলের তিন বারের সাংসদ এবং এ বারেরও প্রার্থী সৌগত রায়ের দাবি, ‘‘কোথাও আর তেমন কোনও সমস্যা নেই। ওই তিন বিধানসভা কেন্দ্রেরই সমস্ত দলীয় কর্মী মোটামুটি ময়দানে নেমেছেন। চেনা-জানা কোনও কর্মী ঘরে বসে আছেন, এমনটা আমার অন্তত জানা নেই।’’ কিন্তু, রাজনৈতিক মহল বলছে, ব্যাপারটা অনেকটা ‘চকচক করলেই সোনা নয়’-এর মতো। কারণ, ওই তিন বিধানসভা কেন্দ্রের ময়দান জুড়ে বিন্যস্ত সবুজ ঘাসের মধ্যেই রয়েছে ‘চোরকাঁটা’। আর তা বাঁচিয়ে প্রবীণ প্রার্থী কতটা এগিয়ে যাবেন, তা অবশ্য সময়ই বলবে। তবে, রাজনৈতিক মহলের একাংশের কথায়, ‘‘জয় এলেও চোরকাঁটার খোঁচাতেই এ বার ব্যবধান অনেকটা কমবে।’’ যদিও বিরোধীরা হেসে বলছেন, ‘‘চোরা স্রোতে ভরাডুবিও হতে পারে।’’
প্রকাশ্যে শাসকদলের সর্বস্তরের নেতৃত্বই দাবি করছেন, তাঁদের প্রার্থী এ বারেও সাংসদ হবেন। যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে সেই নেতারাই সংশয় প্রকাশ করছেন। কারণ, তিন বিধানসভা কেন্দ্র জুড়েই রয়েছে স্থানীয় স্তরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। সেই কারণে তলে তলে কে কী ‘খেলা’ খেলছেন বা খেলবেন, তা স্পষ্ট নয়। মাসখানেক আগেও খড়দহ বিধানসভা কেন্দ্রে শাসকদলের বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বনাম তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব মারাত্মক ভাবে সামনে এসেছিল। বিধায়ক পুরনো রাজনৈতিক কর্মীদের দূরে সরিয়ে রেখে নিজের পছন্দের কিছু লোকজনকে নিয়েই সমস্ত কিছু করছেন বলে অভিযোগ তুলে তাঁর ডাকা সভায় অনুপস্থিত ছিলেন একাধিক পুরপ্রতিনিধি ও প্রতিটি ওয়ার্ডের সভাপতিরা। আবার, বিধায়ককে বাদ দিয়েই সৌগতের সমর্থনে মিছিল করতে দেখা গিয়েছিল ওই বিরুদ্ধ গোষ্ঠীকে। লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে খড়দহে এ হেন আড়াআড়ি বিভাজন নিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে দেখা গিয়েছিল সৌগতকেও।
যদিও এখন তাঁর দাবি, ‘‘ও সব সমস্যা পুরোপুরি মিটে গিয়েছে। দিনকয়েক আগেই বিধায়ক-সহ সমস্ত পুরপ্রতিনিধি মিলে মিছিল করেছেন।’’ কিন্তু খড়দহের বাস্তব পরিস্থিতি কি সত্যিই সব কিছু মিটে যাওয়ার কথা বলছে? সূত্রের খবর, বিধায়কের বিরুদ্ধ গোষ্ঠী কার্যত এখন বসে রয়েছে। ওই নেতা-কর্মীরা অপেক্ষা করছেন, আগামী ২০ মে ব্যারাকপুরের ভোট মিটে যাওয়ার। বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর এক নেতার কথায়, ‘‘আশা করি, তার পরে জেলা নেতৃত্ব আমাদের দিকে নজর দেবেন। নির্বাচন শুধু
বিধায়কের নেতৃত্বেই হবে, না পুরনো রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাও প্রাধান্য পাবেন, সেটা নিশ্চয়ই জেলা নেতৃত্ব ঠিক করবেন।’’
আবার, নাগরিক পরিষেবা নিয়ে জেরবার শতাব্দীপ্রাচীন পানিহাটি পুরসভা। ভাগাড়, পানীয় জল, রাস্তার আলো, রাস্তাঘাট— সব কিছু নিয়েই অভিযোগ তুলছেন নাগরিকেরা। জানা যাচ্ছে, এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে শেষ কয়েক মাসে বোর্ড মিটিং-ই করতে পারেনি পুরসভা। আবার, শাসকদলের পুরপ্রধানের বদল চেয়ে ৩২ জন পুরপ্রতিনিধি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু সেই পুরপ্রতিনিধিদের সকলেই বিধায়ক নির্মল ঘোষের সঙ্গে কতটা রয়েছেন, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন রয়েছে।
এই সমস্ত কিছুর মধ্যেই পুর পরিষেবার বেহাল অবস্থার কারণ হিসাবে দলেরই একাংশের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন পুরপ্রধান মলয় রায়। স্পষ্ট করে কারও নাম না করলেও তিনি বলছেন, ‘‘একটি অংশ নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে দলকে ব্যবহার করে পুরসভা যে ব্যর্থ, এটা প্রমাণ করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।’’ আর সৌগত ও নির্মল, উভয়েই বলছেন, ‘‘পুরপ্রধান অসুস্থ। পানিহাটিতে অনেক কাজ হয়েছে। পানীয় জলের সমস্যা যতটা বলা হচ্ছে, ততটা নয়। যেটুকু আছে, তা-ও ধীরে ধীরে মিটবে।’’ ফলে এটাও প্রশ্ন, পানিহাটি পুরসভাকে কেন্দ্র করে শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্বের চোরা স্রোত এ বার সৌগতকে বিপাকে ফেলে দেবে না তো?
আবার, কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পরে সম্প্রতি ভোটের ময়দানে নেমেছেন। তবে, সৌগত বলছেন, ‘‘আমার থেকেও বেশি নেমেছেন মদন। ওঁর ছেলে পুরোটাই দেখভাল করছেন।’’ যদিও অনেকে বলছেন, দীর্ঘদিন ময়দানে না থাকা মদন নিজের অস্তিত্ব প্রমাণ করতেই মিছিল-মিটিংয়ে যাচ্ছেন। তবে, কর্মীদের কাছে স্পষ্ট কোনও নির্দেশই নেই যে, কী ভাবে ভোটে লড়তে হবে। আবার, ওই বিধায়কের সঙ্গে স্থানীয় স্তরের বহু নেতার ‘অম্লমধুর’ সম্পর্ক সুবিদিত।
অন্য দিকে, অতীতে সাংসদের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছে খোদ মদনকেও। তা হলে কি এখন সব মিটমাট হয়ে গিয়েছে? কামারহাটির বিধায়কের কথায়, ‘‘এখানে মিটমাটের কোনও ব্যক্তিগত ব্যাপার নেই। রাজ্যে সব চেয়ে বড় দল তৃণমূল। তাদের দেওয়া প্রার্থীর জন্য নামতে হবে। কারণ, মানুষ দলকে জেতায়।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘বেহুলা-লখিন্দরের লোহার ঘরের মতোই কামারহাটি দুর্ভেদ্য। অন্য কেউ তা ভেদ করে ঢুকতে পারবে না।’’ যা শুনে বিরোধীদের সহাস্য মন্তব্য, ‘‘বেহুলা-লখিন্দরের লোহার ঘরেও ছোট ছিদ্র করে রেখেছিলেন বিশ্বকর্মা। কামারহাটিতেও তেমন বিশ্বকর্মা নেই তো?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy