(বাঁ দিক থেকে) নরেন্দ্র মোদী, মহুয়া মৈত্র, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
চতুর্থ দফার ভোটের প্রচারে বৃহস্পতিবারই বাংলায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার তাঁর নদিয়ার কৃষ্ণনগরে জনসভা করার কথা। তার এক দিন আগে ওই একই কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে মহুয়া মৈত্রের সমর্থনে প্রচার করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদে মহুয়ার দাপট এবং তাঁর শাস্তি নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করলেন তিনি। জানিয়ে দিলেন, মোদী শুক্রবার আবার ‘মিথ্যা’ বলতে আসছেন। তাঁর কথা যেন কেউ বিশ্বাস না করেন, কৃষ্ণনগরের মানুষের কাছে সেই আবেদনও জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার মমতার সভা ছিল নদিয়ার তেহট্টের হরিচাঁদ গুরুচাঁদ স্টেডিয়ামে। সেখানে দাঁড়িয়ে বিদায়ী সাংসদের ঢালাও প্রশংসা করেন তিনি। জানান, মহুয়া সংসদে বাঘের বাচ্চার মতো লড়াই করেন বলেই তাঁকে নিয়ে বিজেপির এত জ্বালা। সেই কারণেই তাঁকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মোদীকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘কাল আবার মিথ্যা বলতে আসছেন মহুয়ার এখানে। কারণ, মহুয়াকে নিয়ে ওঁদের খুব জ্বালা। মহুয়া যে মুখের উপর কথা বলে দেয়, ভয় পায় না। মহুয়া বাঘের বাচ্চার মতো লড়াই করে। ও সবাইকে বলে দিয়েছিল দেশে কী চলছে। তাতে কী রাগ! আসলে কেঁচো খুঁড়তে গেলে তো দিল্লির নেতাদের সাপ বেরিয়ে যাবে।’’
উল্লেখ্য, গত বছর ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’কাণ্ডে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল মহুয়াকে। তাঁর সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়া হয়। মমতা বলেন, ‘‘মহুয়াকে ভয় পায় বলে ওকে ওরা তাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু পার্লামেন্ট থেকে তাড়ালেও মানুষের মন থেকে ওকে তাড়াতে পারেনি। আপনারা আবার ভোট দিয়ে ওকে জেতান। ও আবার সংসদে আপনাদের হয়ে লড়বে।’’
প্রধানমন্ত্রীর শুক্রবারের সভাকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘কী বলতে আসবেন আপনি? ১০০ দিনের টাকা তো দেননি। পাকা বাড়ির টাকা দেননি, রাস্তার টাকা দেননি। রেশন বিনামূল্যে দেননি। রোজ মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছেন। সাধারণ মানুষ মিথ্যা বললে লজ্জা পান। কান ধরতে হয় তাঁদের। আর মিথ্যা বললে মোদীকে পুজো করতে হয়।’’
মোদীর বিরুদ্ধে প্রচারসর্বস্বতার অভিযোগ এনেছেন মমতা। তেহট্টের মঞ্চ থেকে বলেন, ‘‘উনি তো রোজ নিজের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। শুধু নিজের প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। যে দিকে তাকাই, ওঁর ছবি দেখা যায়। চারদিকে ঝুটা গ্যারান্টি দিয়ে বেড়াচ্ছেন।’’
গরমে দীর্ঘ তিন মাস ধরে ভোট চালানো নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে আরও এক বার আক্রমণ করেছেন মমতা। বলেন, ‘‘এত গরম। আমার লু লেগে গিয়েছে। গলা ভেঙে গিয়েছে। গত এক মাস ধরে আমি বাড়ির বাইরে আছি। আরও এক মাস টানতে হবে। গরমে সকলের এত কষ্ট হচ্ছে। কেন এত দিন ধরে ভোট চালানো হল? বিজেপি নিজের ইচ্ছা মতো লোক দিয়ে কমিশন বানিয়েছে।’’ বিজেপি নেতাদের প্রচারের সুবিধার জন্যই দীর্ঘ সময় ধরে ভোট চলছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
প্রথম দুই দফার ভোটের শতাংশের হার নিয়েও বৃহস্পতিবার কমিশনকে আক্রমণ করেছেন মমতা। কোথায় কত ভোট পড়ল, তার একটি হিসাব ভোটের পর কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছিল। ১১ দিন পর কমিশনের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে যে ভোট শতাংশের হার প্রকাশ করা হয়, তাতে দেখা গিয়েছে ভোট আগের চেয়ে ছয় শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। মমতার সন্দেহ, যেখানে বিজেপি কম ভোট পেয়েছে, সেখানকার বুথে ইভিএম বদলে দেওয়া হয়েছে। রাতের অন্ধকারে এই কাজ করা হয়ে থাকতে পারে বলে বুধবারই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন মমতা। তেহট্টের সভা থেকেও সেই সন্দেহের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ভোটের দিন লোকে জানল এত শতাংশ ভোট পড়েছে। কিছু দিন পর সেই সংখ্যা উল্টে গেল! কোনও দেশে এটা হয় না।’’
কেন্দ্রে বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র কথা বলতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আগামী দিনে ইন্ডিয়া জোটই দেশ তৈরি করবে। কিন্তু বাংলায় ওই জোট নেই। এখানে সিপিএম বা কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকেই ভোট দেওয়া। বাংলা থেকে আমরা যত বেশি আসন পাব, তত কেন্দ্রে বাংলার জোর থাকবে।’’
এর আগেও কৃষ্ণনগরে সভা করে গিয়েছেন মমতা। তিনি লোকসভা ভোটের প্রচার শুরুই করেন মহুয়ার কেন্দ্র থেকে। কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে মহুয়ার বিরুদ্ধে সেখানকার রাজপরিবারের সদস্য অমৃতা রায়কে প্রার্থী করেছে বিজেপি। তাঁর সমর্থনে শুক্রবার কৃষ্ণনগরে প্রচারে যাবেন প্রধানমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy