গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মালদহ উত্তর লোকসভা আসন বয়সে বেশ ছোট। ২০০৯ সালে জন্ম। সে বারের লোকসভা ভোটের সময় সাবেক মালদহ আসন ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ মালদহ আলাদা আলাদা কেন্দ্র হয়। রাজ্য রাজনীতিতে মালদহ আসন একটা সময় পর্যন্ত কংগ্রেস নেতা ‘গনি খানের আসন’ হিসাবেই পরিচিত ছিল। ১৯৮০ সাল থেকে টানা আট বার জিতে আমৃত্যু মালদহের সাংসদ ছিলেন তিনি। ইন্দিরা গান্ধী থেকে রাজীব গান্ধী মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক সামলেছেন। দেশের রেলমন্ত্রীও থেকেছেন আবু বরকত আতাউর গনি খান চৌধুরী।
বয়সজনিত কারণে গনি প্রয়াত হন ২০০৬ সালের ১৪ এপ্রিল। এর পরে উপনির্বাচনে ওই আসন থেকে জেতেন গনির ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরি (রাজ্য রাজনীতিতে ‘ডালু’ নামে বেশি পরিচিত)। ২০০৯ সালে আসন ভাগ হলে ডালু চলে যান মালদহ দক্ষিণ আসনে। সেখান থেকে পর পর তিন বার জিতেছেন তিনি। আর মালদহ উত্তরে কংগ্রেস গনি তথা ডালুর ভাগ্নি মৌসম নুরকে প্রার্থী করে। ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে কংগ্রেসের টিকিটে সংসদে যান মৌসম।
তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দেন মৌসম। সে বার ঘাসফুলের টিকিট পান। কংগ্রেস প্রার্থী করে ডালুপুত্র অর্থাৎ মৌসমের মামাতো ভাই ইশা খান চৌধুরীকে। তিনি এ বার মালদহ দক্ষিণে বাবার আসনে প্রার্থী হয়েছেন। তবে ২০১৯ সালে ইশা দিদির জয়ের পথে ‘কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই কাঁটার কাটাকুটিতে ৫,০৯,৫২৪ ভোট পেয়ে জয়ী হন বিজেপির খগেন মুর্মু। মৌসম এবং ইশা যথাক্রমে ৪,২৫,২৩৬ এবং ৩,০৫,২৭০ ভোট পান। এই ফলাফল থেকেই স্পষ্ট ছিল যে, গনি পরিবারের ভোট ভাগ হয়েই বিজেপির জয়ের পথ প্রশস্ত হয়েছিল। ২০১৪ সালে সিপিএম প্রার্থী হিসাবে মৌসমের কাছে হেরে যাওয়া খগেন বিজেপির টিকিটে ২০১৯ সালে জয়ী হন।
২০১৯ সালে সিপিএম এই আসনে পেয়েছিল ৫০ হাজারের কিছু বেশি ভোট। তখন কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের জোট ছিল না। এ বার জোটের প্রার্থী প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মোস্তাক আলম। তিনিও গনির সঙ্গে কাজ করেছেন। দু’বার মালদহ উত্তরেরই অন্তর্গত হরিশচন্দ্রপুর থেকে কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক হয়েছেন। তৃণমূল মৌসমকে টিকিট না দিয়ে প্রার্থী করেছে প্রাক্তন পুলিশকর্তা প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তবে বিজেপি খগেনকেই রেখেছে। রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় তৃণমূল-বিজেপি আড়াআড়ি লড়াই হলেও এই আসন ধরে রাখার ব্যাপারে ‘আশাবাদী’ কংগ্রেস। পক্ষান্তরে, খগেনের হয়ে প্রচার করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আবার আসন ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রসূনের হয়ে প্রচারে নেমেছেন। লক্ষণীয় ভাবে, এই প্রথম এই আসনে গনি পরিবারের কোনও সদস্যকেই প্রার্থী করেনি প্রধান যুযুধান তিন পক্ষ। কারণ, মনে করা হচ্ছে, গনির প্রয়াণের ১৮ বছর কেটে যাওয়ায় তাঁর পরিবারের প্রতি আনুগত্য ফিকে হয়ে এসেছে। সেই ভোট কোন দিকে যাবে, তার উপর অনেকটা নির্ভর করছে বিজেপির ‘প্রত্যাবর্তন’ এবং তৃণমূলের হারানো আসন ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy