Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

আগে বাড়িতে টাকা, তার পরে তো ভোট!

গত বছর নির্বাচন কমিশন রিমোট ইভিএম-এর মাধ্যমে ভিন্‌ রাজ্যে বা শহরে থাকা ভোটারদের ভোটগ্রহণ নিয়ে ভাবনাচিন্তা আলোচনা শুরু করেছিল। বিরোধীদের আপত্তিতে সেই প্রস্তাব আপাতত শিকেয় তুলে রাখা হয়েছে।

Representative Image

—প্রতীকী ছবি।

প্রেমাংশু চৌধুরী
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২৪ ০৭:৩০
Share: Save:

ভোট দিতে বাড়ি যাওয়া হল না?

বেঙ্গালুরুর গান্ধীনগরের হোটেলে বাঙালি কর্মীর দেখা পেয়ে প্রশ্নটা স্বাভাবিক ভাবেই এসে গিয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন শুনে জলপাইগুড়ির মানস বসাকের চোখ ছলছল করে ওঠে। ‘‘পাঁচ বছর হয়ে গেল বাড়িই যাওয়া হয়নি। বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা হয়নি। তো আর ভোট!’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

পাঁচ বছর! সেই কোভিডের আগে বাড়ি গিয়েছিলেন বছর তিরিশের মানস। কোভিডের সময়ে এক বছরের বেশি হোটেল বন্ধ ছিল। হোটেলমালিক মানসদের হোটেলেই থাকতে দিয়েছিলেন। রোজ ডাল-ভাত জুটেছিল। কিন্তু বেতন মেলেনি। মানস বলেন, ‘‘বেতনের অনেকটা টাকাই বাড়িতে পাঠাতে হয়। এক বছরের বেশি সময় তো বেতনই মেলেনি। তার আগে যেটুকু জমিয়েছিলাম, সব শেষ। হাতে টাকা না জমলে কী ভাবে বাড়ি যাই বলুন দেখি?’’

মানসেরই বন্ধু প্রদীপ, শঙ্কু, বীরেন, পল্লবরা বেঙ্গালুরুতে আশেপাশের হোটেল, রেস্তরাঁয় কাজ করেন। কারও বাড়ি জলপাইগুড়ি, কারও কোচবিহার, কারও উত্তর ২৪ পরগনা। গত বছর কর্নাটকে বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে হারিয়ে কংগ্রেসের সরকার এসেছে। এ বার লোকসভা নির্বাচন। মানস, প্রদীপ, শঙ্কু, বীরেনদের কাছে কেউ ভোট চাইতে আসে না। কারণ, তাঁরা কর্নাটকের ভোটার নন। পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় তাঁদের নাম। তাঁরা পরিযায়ী শ্রমিক। ‘‘গ্রামে ফিরে ভোট না দিলে, ভোটার হিসেবে আমাদের কী মূল্য?”—নিজেরাই নিজেদের প্রশ্ন করেন মানস, প্রদীপ, পল্লবরা।

বেঙ্গালুরুরই আজ়িম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-এর ‘স্টেট অব ওয়ার্কিং ইন্ডিয়া’ রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে ২৫ বছরের কম বয়সি স্নাতকদের মধ্যে ৪২ শতাংশ বেকার। মানস, প্রদীপরা কেউ বিএ পাশ, কেউ কেউ বিকম, কেউ উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে হোটেল পরিষেবার ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন। ভিন্‌ রাজ্যে কাজ পেতে তাঁদের ‘এজেন্সি’ই ভরসা।

‘এজেন্সি’টা কী? মানস জানান, এজেন্সিতে নাম লেখালে তারা বেঙ্গালুরুর হোটেল-রেস্তরাঁয় কাজ খুঁজে দেয়। প্রথম মাসের বেতন পেলে ‘কমিশন’ দিতে হয়।
পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদ এখন ‘কর্মসাথী পরিযায়ী শ্রমিক’ পোর্টাল খুলেছে। নভেম্বর পর্যন্ত ২১ লক্ষের বেশি মানুষ নাম লিখিয়েছেন। যাঁরা রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছেন। মানসরাও সেখানে নাম লিখিয়েছেন। তবে এখনও তেমন কোনও সুবিধা এখনও মেলেনি। বেঙ্গালুরুর ভিট্টল মাল্য রোডে আলো ঝলমল কাফের কর্মী বীরেন পাল বাস্তবটা মেনে নেন, ‘‘আমাদের কথা কোনও পার্টি কেন ভাববে? আমরা তো ভোটার হয়েও ভোট দিই না।’’

বীরেন নিজে হাওড়ার ভোটার। মোবাইলে সারাদিন রাজ্যের ভোটে কী হচ্ছে, সে দিকে নজর। এ বারও ভোটের দিন মারামারি হবে কি না, তা নিয়ে প্রবল উত্তেজনা। কিন্তু নিজের ভোট দেওয়া হবে না। বীরেন বলেন, ‘‘কাফের মালিক ছুটি দেবেন না। বাড়ি যাওয়ার কথা বলে ছেড়ে দেবেন। কিন্তু বেতন কাটা যাবে। ফিরে এসে হয়তো দেখব, চাকরিটাই নেই। তখন আবার কাজ খোঁজার ঝক্কি।’’

২০২০-২১ সালের সরকারি সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ২৯ শতাংশ মানুষ নিজের ভিটে ছেড়ে ভিন্‌ রাজ্যে ভিন্‌ শহরে বাস করেন। তাঁদের সিংহভাগই ঘরছাড়া হন রুটিরুজির সন্ধানে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাতের মতো রাজ্যে ভিন্‌ রাজ্যে থেকে আসা শ্রমিকদের সংখ্যা সব থেকে বেশি। দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ কোটি মানুষ নিজের ভিটে ছেড়ে অন্যত্র বাস করেন। তাঁদের ১০ শতাংশের বেশি জন রোজগারের খোঁজে, বা বেশি রোজগারের খোঁজে ঘরছাড়া হন।

কলকাতায় বা রাজ্যের হোটেল-রেস্তরাঁয় কেন চাকরি করলেন না?

মাইসুরুর রেস্তরাঁয় দেখা মিলল মেদিনীপুরের বলরাম দাসের সঙ্গে। অনেকদিন দীঘার এক বিরিয়ানি রেস্তরাঁয় কাজ করেছেন। গত তিন বছর সে কাজ ছেড়ে মাইসুরুর হোটেলে রাঁধুনির কাজ নিয়েছেন। দীঘার রেস্তরাঁ কী দোষ করল? ‘‘ওখানে বেতন অনেক কম। সেই জন্যই অন্য রাজ্যে পড়ে থাকা।’’— দাবি তাঁর। বলরাম সাত বছরের ছেলের সঙ্গে রোজ ভিডিয়ো-কলে কথা বলেন। বলছিলেন, ‘‘ছেলেকে বড় করার জন্যই ছেলেকে ছেড়ে থাকতে হচ্ছে। ভাল স্কুলে পড়াতে গেলে এখন অনেক ফি দিতে হয়। দীঘায় কাজ করে তা জোগাতে পারতাম না।’’

গত বছর নির্বাচন কমিশন রিমোট ইভিএম-এর মাধ্যমে ভিন্‌ রাজ্যে বা শহরে থাকা ভোটারদের ভোটগ্রহণ নিয়ে ভাবনাচিন্তা আলোচনা শুরু করেছিল। বিরোধীদের আপত্তিতে সেই প্রস্তাব আপাতত শিকেয় তুলে রাখা হয়েছে। জলপাইগুড়ির মানস জানা থেকে মেদিনীপুরের বলরাম দাসও ভোট দেওয়ার চিন্তা শিকেয় তুলে রাখেন। বেতন থেকে বাড়িতে টাকা পাঠানোর পরে, নিজের খাইখরচার পরে মাস গেলে কিছু টাকা জমানোই তাঁদের একমাত্র চিন্তা।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE