সন্দেশখালিতে ভোটের দিন দফায় দফায় অশান্তি। — নিজস্ব চিত্র।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলার রাজনীতিতে অন্যতম বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল সন্দেশখালি। ইডির উপর হামলা থেকে শুরু করে শাহজাহান শেখের গ্রেফতারি এবং স্টিং ভিডিয়ো— একের পর এক ঘটনা সন্দেশখালিকে শিরোনামে তুলে এনেছে বার বার। ভোটেও শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্দেশখালি ইস্যুকে হাতিয়ার করেছিল বিজেপি। পরে অবশ্য স্টিং ভিডিয়ো প্রকাশিত হওয়ায় সন্দেশখালি ইস্যুতে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে তারাও। ভোটের আগে নাগাড়ে শিরোনামে থাকা বসিরহাট লোকসভা আসনের এই গ্রাম সপ্তম দফার ভোটগ্রহণের দিনও উত্তপ্তই রইল। দফায় দফায় সন্দেশখালিতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লেন তৃণমূল এবং বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিচার্জ করতে হল পুলিশকে। সংঘর্ষে মাথা ফাটল দুই তরফের কর্মীদেরই।
সন্দেশখালিতে ভোটের উত্তাপ ছড়িয়েছিল শুক্রবার রাত থেকেই। অভিযোগ, বেড়মজুর এলাকায় ভোটের আগের রাতে পুলিশ ঢুকে পড়েছিল। তারা কয়েক জনকে আটকও করে। পরে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে দাবি। শনিবার সকাল থেকে সন্দেশখালির বিভিন্ন বুথে শুরু হয় ভোটগ্রহণ। ভোট দেন বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র, সিপিএম প্রার্থী নিরাপদ সর্দারেরা।
সকাল থেকে বেশ কিছু ক্ষণ মোটের উপর শান্তিপূর্ণই ছিল সন্দেশখালির পরিস্থিতি। বেলা বাড়তেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। দক্ষিণ খুলনার ১৭৭ নম্বর বুথে মার খান তৃণমূলের এক কর্মী। রামকৃষ্ণ মণ্ডল নামের ওই কর্মীর মাথা ফেটে যায়। বিজেপি পাল্টা দাবি করে, বুথ দখল করতে যাওয়ায় গ্রামবাসীরাই মেরেছেন রামকৃষ্ণকে। খুলনা থেকে উত্তাপের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে সন্দেশখালির বয়ারমারিতে। সেখানে মার খান বিজেপি কর্মী চঞ্চল খাটুয়া। তাঁরও মাথা ফাটে। অভিযোগ, তৃণমূলের বুথ দখলের প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় তাঁকে বাঁশ, লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কুইক রেসপন্স টিম এবং আধা সামরিক বাহিনী।
দলের কর্মী সমর্থকদের মারধরের অভিযোগে সন্দেশখালিতে বিক্ষোভ শুরু করে বিজেপি। বয়ারমারিতে রাস্তা অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ দেখায়। বিক্ষোভ তুলতে পুলিশ বলপ্রয়োগ করে বলে অভিযোগ। বয়ারমারিতে সংঘর্ষের জেরে আহত হন তৃণমূলের দু’জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি নলিনী খাটুয়া। এ ছাড়া, কিঙ্কর জানা নামে আরও এক বিজেপি কর্মী সংঘর্ষে আহত হন। বিজেপির অভিযোগ, এলাকায় গুলি চালিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগও করেছেন বয়ারমারির বাসিন্দারা। অভিযোগ, পুলিশ পাঁচ-ছ’জনকে আটক করে নিয়ে গিয়েছে। তাঁদের মুক্তির দাবিতে বাসন্তী সড়কে গাছের ডাল, টায়ার ফেলে অবস্থানে বসে পড়ে বিজেপি। পরে সেখানে আসেন প্রার্থী রেখাও। তিনিও পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। রাজবাড়ি এলাকাতেও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। সেখানে সংঘর্ষে স্থানীয় এক মহিলা আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ। বেড়মজুরে শেষবেলার ভোটচলাকালীন ঢিল লেগে মাথা ফাটে এক পুলিশকর্মীর। তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
খুলনায় আক্রান্ত তৃণমূল
শনিবার সকালে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সন্দেশখালির দক্ষিণ খুলনা অঞ্চল। সেখানে ১৭৭ নম্বর বুথের পঞ্চায়েত সদস্য মণিকা মণ্ডলের স্বামী তথা এলাকার তৃণমূলকর্মী রামকৃষ্ণ মণ্ডলকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁর মাথা ফেটে যায়। অভিযোগের তির বিজেপির দিকে। আক্রান্ত ব্যক্তি জানিয়েছেন, তিনি ভোট দিতে গেলে তাঁকে ঘিরে ধরেন বিজেপি কর্মীরা। তার পর মারধর করা হয়।
বিজেপির পাল্টা
খুলনার ঘটনায় অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস ঘোষ বলেন, ‘‘রামকৃষ্ণ মণ্ডল দলবল নিয়ে বুথ দখল করতে গিয়েছিলেন। তাই গ্রামবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঁর উপরে চড়াও হন। হাতাহাতিতে তিনি জখম হন। এর সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই।’’
ভোট দিলেন প্রার্থীরা
বিজেপির সন্দেশখালি আন্দোলনের মুখ রেখা পাত্র শনিবার সকালে ভোট দিয়েছেন। পাত্রপাড়ার ১৭১ নম্বর বুথে গিয়ে ভোট দেন তিনি। সকাল সকাল ভোট দেন সিপিএম প্রার্থী তথা সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারও। পাত্রপাড়ার ১৭০ নম্বর বুথে ভোট দেন তিনি।
আক্রান্ত বিজেপি
সন্দেশখালির বয়ারমারি এলাকায় বিজেপি কর্মী চঞ্চলকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। আক্রান্ত ব্যক্তি জানান, তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা বুথ দখল করে অবাধে ছাপ্পা ভোট দিচ্ছিলেন। তিনি বাধা দিতে গেলে তাঁকে রাস্তায় ফেলে বাঁশ, লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। তাঁর মাথা ফেটে গিয়েছে। ঘটনার জেরে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। ন্যাজাট থানার ওসি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। পৌঁছয় আধা সামরিক বাহিনী এবং কুইক রেসপন্স টিমও।
বিজেপির বিক্ষোভ
বয়ারমারিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বিজেপি। পুলিশ সেই বিক্ষোভ তুলতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। লাঠিচার্জ করার অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, তাদের কয়েক জনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে। তাঁদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়।
বাসন্তী সড়কে অবস্থান
পুলিশের আচরণের বিরুদ্ধে বাসন্তী সড়কে গাছের ডাল, টায়ার ফেলে অবস্থানে বসে পড়ে বিজেপি। পরে সেখানে আসেন প্রার্থী রেখাও। তিনিও পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় বাসন্তী সড়কের উপরে। লাঠি হাতে রাস্তায় নেমেছিলেন মহিলারা। রেখার দাবি, ভোট লুট করতে অশান্তি করছে তৃণমূল। রাস্তা আটকে বিক্ষোভ চলছে রাত পর্যন্ত।
সন্দেশখালিতে গুলি?
বয়ারমারি এলাকায় গ্রামবাসী এবং বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, গুলি চালানো হয়েছে। তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও গুলি কারও গায়ে লাগেনি বলেই দাবি। পুলিশও এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি। বিজেপি কর্মী শঙ্কর দাস দাবি করে বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল। যদিও গুলি তাঁর লাগেনি। তৃণমূলের লোক এ সব করেছে।’’
অশান্ত বয়ারমারি
বয়ারমারিতে বুথের সামনে বিজেপির সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হন তৃণমূলের দু’জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি নলিনী খাটুয়া। এ ছাড়া, কিঙ্কর জানা নামের আরও এক বিজেপি কর্মী সংঘর্ষে আহত হন। রাজবাড়ি এলাকায় সংঘর্ষে জখম হন স্থানীয় এক মহিলা। আহতদের হাটগাছি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের দেখতে গিয়েছিলেন সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতো।
রাতের অভিযান
সন্দেশখালির বেড়মজুর এলাকায় শুক্রবার রাতে পুলিশ অভিযান চালায় বলে অভিযোগ। কয়েক জনকে আটকও করা হয়েছিল। গ্রামবাসীদের দাবি, ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় কিছু না কিছু অভিযোগ রয়েছে বলে জানায় পুলিশ। তাই ভোটের আগে অশান্তি এড়াতে তাঁদের ধরা হয়। কিন্তু এই ধরপাকড় গ্রামবাসীরা মেনে নেননি। রাতেই পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। যাঁদের ধরা হয়েছিল, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয় রাতেই।
মাথা ফাটল পুলিশের
বেড়মজুরে শনিবার বিকেলে ভোটগ্রহণ পর্ব যখন শেষের মুখে, তখন উত্তেজনা ছড়ায়। ঢিল লেগে মাথা ফাটে এক পুলিশকর্মীর। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে কারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়েছে, স্পষ্ট নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy