নয়াদিল্লিতে অখিলেশ যাদবের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
ইন্ডিয়া মঞ্চের প্রতিটি বৈঠকে এর আগে যোগ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কংগ্রেসের প্রতি ‘অ্যালার্জি’ এবং আঞ্চলিক দলগুলিকে এককাট্টা করে ‘জিঞ্জার গোষ্ঠী’ তৈরি করার প্রবণতা বরাবরই বজায় রেখেছে তৃণমূল। লোকসভা ভোটের ফলাফলের পরেও তা অব্যাহত রইল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
গত কাল কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বাংলোয় ইন্ডিয়া জোটের সমস্ত নেতার সঙ্গে বৈঠকের পর আজ গোটা দিনই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দফায় দফায় দিল্লি এবং মুম্বই গিয়ে বৈঠক করলেন অকংগ্রেসি আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে। আজ সকালেই তিনি ফুল নিয়ে পৌঁছে যান দিল্লিতে এসপি নেতা অখিলেশ যাদবের বাড়ি। আলোচনা চলে প্রায় এক ঘণ্টা। সাউথ অ্যাভিনিউতে নিজের বাসভবনে ফেরার পর তাঁর সঙ্গে কথা বলতে আসেন আপ দলের দুই নেতা সঞ্জয় সিংহ এবং রাঘব চড্ডা। বিকেলে অভিষেক কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও ব্রায়েনকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দেন মুম্বইয়ে। রাতে মাতোশ্রীতে পৌঁছে শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন, সর্বভারতীয় ভূমিকায় এ বার সক্রিয় হতে দেখা যাবে অভিষেককে। গত কাল দলের পক্ষ থেকে একাই ইন্ডিয়ার বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন অভিষেক। আর আজ তাঁর এই ‘সক্রিয়তা’ রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন তুলেছে, পৃথক কোনও সমীকরণ কি তৈরি করতে চাইছে তৃণমূল? অর্থাৎ জোটের মধ্যে থেকেই আর একটি জোট, যার রাশ থাকবে তৃণমূল নেতৃত্বের হাতে?
সূত্রের বক্তব্য, কংগ্রেসের প্রাপ্ত আসন এখন অন্য বিরোধীদের তুলনায় এতটাই বেশি যে, কংগ্রেসকে নেতৃত্বে না রেখে কোনও বিরোধী পদক্ষেপ করা সম্ভবই নয়। বিরোধী রাজনীতির সামগ্রিক হাওয়া এখন সে দিকে বইছে না। কিন্তু সংখ্যার বিচারে কংগ্রেসকে অগ্রাহ্য করতে না পারলেও বাংলায় ২৯টি আসন নিয়ে আসা তৃণমূল নেতৃত্ব কারও ‘দাদাগিরি’ যে মেনে নেবে না, তা আজ স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে অভিষেকের এই বৈঠকগুলির মধ্য দিয়ে। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “তৃণমূল কংগ্রেস একমাত্র বিরোধী দল, যারা নিজের দমে লড়ে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আসন নিয়ে এসেছে। কারও মুখাপেক্ষী হয়নি। ফলে অন্য কোনও বিরোধী নেতা কোনও সিদ্ধান্ত নিলে আমরা তার হুবহু অনুসরণ করে যাব, বিষয়টি এমন হবে না। তবে এটাও ঠিক, আমরা ইন্ডিয়া মঞ্চের সবাই একস্বরে কথা বলব।”
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, ইন্ডিয়া মঞ্চে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের বিষয়টি আদৌ ভাল চোখে দেখছে না তৃণমূল। গত কাল সনিয়া গান্ধীর পাশের চেয়ারটি ধার্য ছিল শিবসেনার নেতা উদ্ধব ঠাকরের জন্য। তিনি না আসায় সেখানে গিয়ে বসেন সীতারাম। বিষয়টিতে ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত তৃণমূল। দলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে দাবি করেছেন, সিপিএম এবং কংগ্রেসের জোটের কারণে পশ্চিমবঙ্গে ছ’টি আসনে বিজেপি জেতার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে। ভোটের শতকরা হিসাব তুলে ধরে জহর বলছেন, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, মালদহ-উত্তর, তমলুক, বিষ্ণুপুর এবং পুরুলিয়ায় কংগ্রেস এবং বাম সম্মিলিত ভাবে এতটাই ভোট কেটেছে যে, জয় পাওয়া সহজ হয়ে গিয়েছে বিজেপির। এই প্রশ্নও উঠছে যে, সিপিএমের সঙ্গে সম্মুখসমরের ফলে যেখানে কেরলে আসন হারাতে হচ্ছে কংগ্রেসকে, তাদের সঙ্গে দিল্লিতে বসে এতটা ‘আদিখ্যেতার’ প্রয়োজন কী।
তবে ঘটনা হল, অখিলেশ-উদ্ধব-কেজরীওয়ালের দলের সঙ্গে তৃণমূলের প্রাপ্ত আসন সংখ্যা যোগ করলেও কংগ্রেসের ধারেকাছে আসা যাচ্ছে না। সূত্রের খবর, সেটা এই মুহূর্তে তৃণমূলের উদ্দেশ্যও নয়। কিন্তু সীতারামের পরামর্শ মেনে কংগ্রেস বিরোধী রাজনীতিতে সর্বদা শেষ কথা বলবে, এটাও হতে দিতে চান না তৃণমূল নেতৃত্ব। একই সঙ্গে তৃণমূল চাইছে, মোদী সরকারের পতনের জন্য পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষা না করে এখনই ঝাঁপিয়ে পড়ে সমস্ত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে। এই নিয়ে আজ অখিলেশ, রাঘব চড্ডা এবং উদ্ধবের সঙ্গে কথা বলেন অভিষেক।
তবে রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, কংগ্রেসের সঙ্গে এসপি, তথা রাহুল-প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে অখিলেশের সম্পর্ক এখন মাখনের মতো মসৃণ। উত্তরপ্রদেশে লড়াই করাকংগ্রেসের প্রতিটি প্রার্থীর কাছেএসপি-র ভোট ঢেলে গিয়েছে। এই সুসম্পর্ক রাজ্যের আসন্ন নির্বাচন পর্যন্ত ধরে রাখতে চাইবেন অখিলেশ ও রাহুল, এটাই স্বাভাবিক। আজ প্রিয়ঙ্কা এসপি-কে ধন্যবাদ জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের ফলাফলের জন্য এবং ইন্ডিয়া জোটকে সফল ভাবে কার্যকর করার জন্য। অন্য দিকে অখিলেশও ইন্ডিয়া জোটের ভূমিকাকে তুলে ধরেছেন তাঁর বক্তব্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy