(বাঁ দিক থেকে) চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কুণাল ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
ভূপতিনগরে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র ভূমিকা নিয়ে ‘অতিসক্রিয়তা’র অভিযোগ তুলে এ বার নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। শাসকদলের অভিযোগ, এনআইএ-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার ‘অপব্যবহার’ করছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এই অভিযোগ নিয়ে এ বার তৃণমূল জাতীয় নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। ইতিমধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনারের সময় চাওয়া হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। তৃণমূলের ১০ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দল মূলত ভূপতিনগরের ঘটনা নিয়েই লিখিত অভিযোগ জানাতে যাবে কমিশনের কাছে। পাশাপাশি, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভূপতিনগরে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং কুণাল ঘোষ তাঁর নির্দেশে রবিবার ভূপতিনগর যাবেন।
শনিবার ভোর থেকে ভূপতিনগরের পাঁচটি জায়গায় তল্লাশি চালায় এনআইএ। পরে ভূপতিনগরে বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই তৃণমূল নেতা বলাইচরণ মাইতি এবং মনোব্রত জানাকে গ্রেফতার করা হয়। মনোব্রতের বাড়িতেও চালানো হয় তল্লাশি। অভিযোগ, সেই সময় স্থানীয়েরা কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। অভিযোগ, সেই সময় এনআইএ-র এক আধিকারিক অল্প চোট পান। কয়েক জন তাঁদের গাড়িতে হামলা চালান। এনআইএ-র দাবি, ভূপতিনগর থানায় যেতে তাদের আধিকারিকদের বাধা দেওয়া হয়। সেখানেই ধৃতদের গ্রেফতারি সংক্রান্ত প্রক্রিয়া শেষ করার কথা ছিল এনআইএ-র। এ নিয়ে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে এনআইএ। এনআইএ দাবি করেছে, তদন্তে জানা গিয়েছে, মনোব্রত এবং বলাইচরণ বোমা তৈরি এবং বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্র করেছিলেন আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পূর্ব মেদিনীপুরের নারুয়াবিলার গ্রামে রাজকুমার মান্নার বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনিও তৃণমূল নেতা ছিলেন। রাজকুমার নিজে গুরুতর জখম হন। জখম হন বিশ্বজিৎ গায়েন এবং বুদ্ধদেব মান্না। পরে তিন জনেরই মৃত্যু হয়। ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর রাজ্য পুলিশ ওই তিন জনের মৃত্যুতে এফআইআর দায়ের করে। এর পর, উপযুক্ত ধারা প্রয়োগ এবং এনআইএ-র হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে হলফনামা দায়ের হয়। ২০২৩ সালের ২১ মার্চ নতুন ধারা প্রয়োগের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। সেই ঘটনাতেই দুই নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।
ভূপতিনগরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অভিযান প্রসঙ্গে শনিবারই মমতা বলেছেন, ‘‘মধ্যরাতে কেন লোকের বাড়িতে ঢুকে গ্রেফতার করেছে? অচেনা লোকজনকে মাঝরাতে দেখলে এলাকার মা-বোনেরা যা করার, তাই করেছেন।’’ বিজেপির উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মমতা আরও বলেন, ‘‘ভোটের আগে আমাদের বুথ এজেন্টদের গ্রেফতার করে নেওয়া হচ্ছে। ভোটের প্রচারের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে। আমিও চ্যালেঞ্জ করছি, যাঁদের গ্রেফতার করেছে, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের, মা-বোনেদের আমি এজেন্ট করব। আমাদের আটকাতে পারবে না।’’
প্রসঙ্গত, গত সোমবার দিল্লির নির্বাচন কমিশনে কেন্দ্রীয় সংস্থার অপব্যবহারের অভিযোগে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিল। ওই প্রতিনিধিদলে ছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, সাগরিকা ঘোষ, দোলা সেন এবং সাকেত গোখেল। তাঁরা মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) রাজীব কুমার এবং অন্য কমিশনারদের সঙ্গে দেখা করেন। চিঠিও দেন। সেখানে তাঁরা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল এবং ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের গ্রেফতারের কথাও তুলে ধরেন। এ ছাড়া আরও সাতটি ঘটনার তালিকাও তুলে ধরেছিলেন। যেখানে বলা হয় তৃণমূল সংসদ, বিধায়ক বা কর্মীদের বিরুদ্ধে ইডি, সিবিআই, এনআইএ এবং আয়কর বিভাগ নানা পদক্ষেপ করেছে। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র ও মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিন্হার বিরুদ্ধে যে ভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থা সক্রিয় হয়েছে, তাতে প্রতিহিংসার রাজনীতিই চোখে পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের। নতুন করে আবারও এই সব বিষয়গুলি তৃণমূলের প্রতিনিধিদল তুলে ধরতে পারে কমিশনের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy