(বাঁ দিক থেকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ঊষারানি মণ্ডল, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
শেষ পর্যন্ত সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে বরফ গলল। মঙ্গলবার থেকে পুরোদমে তৃণমূলের হয়ে প্রচারে নামছেন মিনাখাঁর তৃণমূল বিধায়ক ঊষারানি মণ্ডল ও তাঁর স্বামী মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল । তৃণমূলের অন্দরে বিরোধী গোষ্ঠীর হাতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচনী সভা আয়োজনের দায়িত্ব তুলে দেওয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই সভায় যাননি দু’জন। সেই প্রেক্ষিতেই দু’জনের বিরুদ্ধে ‘বিজেপি ঘনিষ্ঠতা’র অভিযোগ ওঠে।
শনিবার হাড়োয়ায় বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামের সমর্থনে আয়োজিত জনসভা থেকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূলের এমএলএ থাকবেন, কিন্তু মিটিংয়ে আসবেন না, তা চলবে না! যত ক্ষণ না ক্ষমা চেয়ে পায়ে ধরবে, তত ক্ষণ ঊষারানি মণ্ডলকে আমরা মানি না! মানি না! মানি না! ওর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আপনাদের মতো লোক চাই না! আপনি স্বামীকে নিয়ে দলটাকে বেচে দেবেন? এটা মানব না!’’
মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের পর দু’জনেই ভোটের প্রচারপর্ব থেকে সরে গিয়েছিলেন। কিন্তু রবিবার রাতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের দফতর থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সোমবার তাঁদের ডেকে পাঠানো হয় অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের দফতরে। ঊষারানি ও মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠক করেন অভিষেক। তৃণমূল সূত্রের খবর, উভয়কেই অবিলম্বে ভোটের প্রচারে নামতে নির্দেশ দেন তিনি। জানিয়ে দেন, কোনও সমস্যা হলে বিষয়টি নিজে দেখবেন। কিন্তু আপাতত সব ‘দ্বন্দ্ব’ ভুলে মিনাখাঁ বিধানসভা থেকে বসিরহাটের প্রার্থী হাজি নুরুলকে বড় ব্যবধানে এগিয়ে দিতে হবে তাঁদের। সন্ধ্যায় মিনাখাঁ ফিরে নিজেদের অনুগামীদের সঙ্গে কথা বলেন ঊষারানী-মৃত্যুঞ্জয়। সিদ্ধান্ত হয়, মঙ্গলবার থেকেই তাঁরা বিধানসভা এলাকা জুড়ে প্রচার চালাবেন।
মঙ্গলবার সকালে আনন্দবাজার অনলাইনকে মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘‘দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আমাদের সব সমস্যার কথা শুনেছেন। আশ্বাসও দিয়েছেন। তাঁর আশ্বাসেই আমরা হাজি নুরুলকে জেতাতে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে ভোটের ময়দানে লড়াই করব। তাঁর নির্দেশ মেনে আমরা মিনাখাঁ থেকে সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে প্রার্থীকে এগিয়ে দিতে চাই।’’
ঘটনাচক্রে, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ দাবি করেছিলেন, বসিরহাটের ঘটনার পরে ওই দম্পতি তাঁদের সঙ্গে ‘যোগাযোগ’ রেখে চলছেন। প্রচারের সভা থেকে তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতার ক্ষোভ বর্ষণের পরে তাঁরা আরও নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, মণ্ডল দম্পতি বসিরহাট লোকসভার ভোটে পদ্মের হয়েই খাটাখাটনি করবেন। কিন্তু অভিষেকের বৈঠকের পর ঘটনাপ্রবাহ আপাতত সে দিকে যাচ্ছে না। অন্তত আপাতদৃষ্টিতে।
প্রসঙ্গত, বসিরহাটের সন্দেশখালিতে শাহজাহান শেখ ও তাঁর বাহিনীর কার্যকলাপ প্রকাশ্যে আসার পর চাপে পড়েছিল শাসকদল। কিন্তু পাল্টা ভিডিয়ো ‘স্টিং’ প্রকাশ্যে আসায় শাসক শিবির আবার পায়ের তলায় জমি পেয়েছে। বস্তুত, বিজেপি নেতাদের একাংশও মনে করছেন, সন্দেশখালির ঘটনাকে যে পর্যায়ে তাঁরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন, তা অনেকটাই ঘুরে গিয়েছে ওই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরে। এই অবস্থায় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বড় অংশ চাইছেন, দলের বিধায়ক ও জেলা পরিষদের দলনেতা ‘সক্রিয়’ থাকুন। বিষয়টিতে অভিষেক ‘হস্তক্ষেপ’ করায় তাঁরা খানিকটা আশ্বস্ত হয়েছেন। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বিধানসভায় একটি বৈঠকে যোগ দিতে আসবেন বিধায়ক উষারানি। বিকালে নিজের বিধানসভা এলাকায় ফিরে স্বামী মৃত্যুঞ্জয়কে সঙ্গে নিয়ে প্রচারের কাজ শুরু করবেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, ঊষারানি ও তাঁর স্বামী মৃত্যুঞ্জয় ‘আদি তৃণমূল’ বলেই পরিচিত। ১৯৯৮ সালে মমতা নতুন দল গঠনের সময়েই তাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছিলেন। ২০১১ সাল থেকে মিনাখাঁ কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিট পেয়ে বিধায়ক হয়েছেন উষারানি। তাঁর স্বামী মৃত্যুঞ্জয় এখন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের দলনেতা। কিন্তু গত বছর তিনেক ধরে মিনাখাঁর তৃণমূল নেতা খালেক মোল্লার গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁদের বিবাদ। খালেক এখন হাড়োয়া-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি। পাশাপাশিই তিনি হাড়োয়া-২ ব্লকের যুব সভাপতি। মিনাখাঁ এলাকায় কোন গোষ্ঠীর ‘প্রতাপ’ বেশি, তা নিয়ে প্রায়শই দ্বন্দ্বের কথা শোনা যায় শাসকদলে। ব্লক সভাপতি নিয়োগ নিয়ে সেই দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছিল। খালেক গোষ্ঠীর সভাপতি হওয়ার দৌড়ে ছিলেন ফরিদ জামাদার। আর স্থানীয় বিধায়ক ঊষারানির শিবির থেকে দলের কাছে সিরাজুল ইসলামের নাম জমা পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত ফরিদের নামেই ‘সিলমোহর’ দেন দলের জেলা নেতৃত্ব। সেই থেকে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ আরও বাড়ে। বিধায়কের শিবিরের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর জনসভার আয়োজন থেকে খালেক গোষ্ঠী তাদের পুরোপুরি ছেঁটে ফেলেছিল। অন্য কোনও দায়িত্বও দেওয়া হয়নি। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতার সভায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন উষারানি ও তাঁর স্বামী মৃত্যুঞ্জয়। সেই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। তবে আপাতত অভিষেকের হস্তক্ষেপে গোষ্ঠীকোন্দল সরিয়ে আবার মিনাখাঁর ভোট ময়দানে ‘সক্রিয়’ হচ্ছেন মন্ডল দম্পতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy