অখিলেশ সিংহ যাদবের সঙ্গে বৈঠকের পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন। ছবি: পিটিআই।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরে রাহুল গান্ধীকে মোবাইলে বার্তা পাঠিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই বার্তার কোনও জবাব তাঁর কাছে আসেনি।
ভোটের ফলাফলের দিন এই ঘটনা কংগ্রেসের প্রতি তৃণমূলের ‘অ্যালার্জি’ আরও কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অসন্তোষ তৈরি হয়েছে ফলাফল ঘোষণার পরে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতির বিবৃতি নিয়েও। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে ‘ইন্ডিয়া’য় থেকেই, ঘরোয়া ভাবে তারই ভিতরে স্বতন্ত্র গোষ্ঠী তৈরি করতে সক্রিয় তৃণমূল কংগ্রেস। সেই লক্ষ্যেই বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে মুম্বই, বিরোধী শরিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এসপি নেতা অখিলেশ সিংহ যাদব, আপ নেতৃবৃন্দ এবং শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে বৈঠকে অভিষেকের বক্তব্য, কংগ্রেস এবং সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি মিলে কর্মসূচি তৈরি করবেন আর বাকিরা অন্ধের মতো সই করে দেবেন— সেই দিন চলে গিয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ হবে সমানে সমানে। সূত্রের খবর, কংগ্রেস যে ভাবে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ পরিচালনা করছে, তা নিয়ে অসন্তোষের বার্তা কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক মহল বলছে, এ নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে কংগ্রেস নেতৃত্ব।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীকে কেন্দ্র করে তৃণমূল আগেই প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছিল নিজেদের ‘অ্যালার্জি’র কথা। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের বৈঠকের পরে যে বিবৃতিটি দেন, তাতেও খুশি হয়নি তৃণমূল। দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, ‘ইন্ডিয়া’র সবার হয়ে খড়্গে যে বিবৃতিটি পড়লেন, তা শুনে মনে হচ্ছে, পাঁচ বছর বিরোধী জোট সোফায় বসে থাকবে, কখন সরকার গড়ার সুযোগ আসবে তার জন্য। খড়্গে বলেছিলেন, ‘যথোপযুক্ত সময়ে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ’ করা হবে।
দিল্লিতে অভিষেক থাকাকালীনই পৃথক বিবৃতি দেয় তৃণমূল। সেখানে বলা হয়, ‘মোদীর বিজেপি দশ বছর ভারত শাসন করেছে। তিনি এবং তাঁর সরকারকে দেশবাসী প্রত্যাখ্যান করেছেন। এটাই আমাদের সূচনাবিন্দু। এখান থেকে আমরা এগোবো।’ ইঙ্গিত স্পষ্ট, সুযোগ আসার জন্য বসে না থেকে সুযোগের জন্য ঝাঁপাতে চাইছেন অভিষেক। তিনি বৈঠকেও দাবি করেছিলেন, ইতিমধ্যেই তিন জন বিজেপি সাংসদ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। গতকাল অখিলেশ, উদ্ধব এবং সঞ্জয় রাউতদের সঙ্গে আলোচনায় যত দ্রুত সম্ভব মোদী সরকারকে হটানোর পরিকল্পনা তৈরির জন্য উঠেপড়ে লাগতে বলেছেন অভিষেক। তৃণমূল সূত্রের দাবি, এসপি, আপ এবং উদ্ধবপন্থী শিবসেনাও নাকি অভিষেকের সঙ্গে ‘সহমত’।
সূত্রের বক্তব্য, তৃণমূলের কংগ্রেসের প্রতি রুষ্ট হওয়ার কারণ একাধিক। ভোটের ফলাফল প্রকাশের পরে মমতা নিজেই বলেছিলেন কংগ্রেসকে তিনি দু’টি আসন দিতে চেয়েছিলেন। তাতে কংগ্রেস নেতৃত্ব রাজি হলে লোকসভায় বাংলা থেকে দু’টি আসন থাকত কংগ্রেসের। মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমার কথাটা মিলল কি না!’’ দ্বিতীয়ত, ভোট চলাকালীন তৃণমূলের পক্ষ থেকে দিল্লিতে কংগ্রেস নেতৃত্বকে সতর্ক করে বলা হয়েছিল, অধীর চৌধুরী হারছেন বড় ব্যবধানে। তৃণমূলের দাবি, এই সতর্কীকরণের উদ্দেশ্য, ‘ইন্ডিয়া’য় পরে এই নিয়ে যেন ভুল বোঝাবুঝি না হয়। কিন্তু গা করেনি কংগ্রেস। তৃতীয়ত, মাত্র চারটি লোকসভা আসন নিয়ে আসা সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির ‘ইন্ডিয়া’য় সব ব্যাপারে ‘ছড়ি ঘোরানো’ যে বরদাস্ত করা হবে না, তা কংগ্রেসকে জানিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তাতে তৃণমূল এবং অখিলেশের সিলমোহর যে একই রকম জরুরি, বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে সে কথাও। কংগ্রেস বৈঠকের দিন স্থির করবে, আলোচ্যসূচি তৈরি করবে, যৌথ বিবৃতির খসড়াও করে আনবে আর ২৯টি আসন নিয়ে তাতে অভিষেক সই করে দেবেন, এটা চলবে না বলেই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে তৃণমূল। রাজনৈতিক শিবিরে অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে, একটি বলও মাঠে পড়ল না, কিন্তু এখনই জোটের মধ্যে যে পৃথক গোষ্ঠী তৈরির খেলা শুরু হয়ে গেল, এতে বিরোধী ঐক্যই তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। না কি অভিষেক তথা তৃণমূল নেতৃত্ব চাইছেন চন্দ্রশেখর সরকারের মতো অকংগ্রেসি বিরোধীদের নিয়ে এবং নীতীশ কুমার, চন্দ্রবাবু নায়ডুদের কাছে টেনে নির্দলদের সঙ্গে নিয়ে সরকার তৈরির চেষ্টা করতে, যেখানে বাইরে থেকে সমর্থন দিতে বাধ্য থাকবে কংগ্রেস?
তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, এমন কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই, ‘ইন্ডিয়া’কে ডুবিয়ে দেওয়াও উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু কঠিন লড়াই করে আসন নিয়ে আসার পরে কোনও ‘রাজনৈতিক অবহেলা’ বরদাস্ত করা হবে না। পাশাপাশি এই মুহূর্তে কংগ্রেসের কাছে যে সংখ্যক সাংসদ রয়েছেন, তাতে তাকে বাদ দিয়ে কোনও সরকার গড়ার কথা ভাবাটা আঞ্চলিক দলের অলীক কল্পনা (রাজনৈতিক মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, মমতা নিজে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, কংগ্রেস ৪০টি আসনও পাবে না। বাস্তবে যে তা হয়নি, তা-ও তৃণমূলকে মনে রাখতে হবে) ছাড়া কিছু নয়। তা ছাড়া, অখিলেশের সঙ্গে রাহুলের বোঝাপড়াও চমৎকার।আসন্ন উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের আগে সেই সমন্বয় ব্যাহত হোক, এমনটা চাইবেন না অখিলেশও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy