শিবমন্দিরে পুজো দিচ্ছেন যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সায়নী ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
ন’বছর আগের ঘটনা। তখন সায়নী ঘোষ শুধুই অভিনেত্রী। সমাজমাধ্যমে তাঁর পোস্ট করা একটি ছবি এবং ছবির ক্যাপশন নিয়ে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়, তাতে লেগেছিল রাজনীতির রং। তার পর অভিনেত্রী থেকে নেত্রী হয়েছেন সায়নী। কিন্তু তৃণমূলের যুবনেত্রীকে এখনও ‘কন্ডোম বিতর্ক’ ধাওয়া করে। সেই বিতর্ককে এ বার পিছনে ফেলে শিবলিঙ্গে পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করলেন যাদবপুর লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী সায়নী। শনিবার মন্দির থেকে বেরিয়ে সায়নী বললেন, ‘‘ঠাকুরের কাছে যাদবপুরের সমস্ত মানুষের মঙ্গলকামনা করলাম।’’ কিন্তু শিবলিঙ্গে পুজো দিয়ে প্রচার কি ‘পরিকল্পনামাফিক’? এর অবশ্য কোনও জবাব দেননি তৃণমূল প্রার্থী। তবে বিজেপি আবারও কটাক্ষ করেছে সায়নীকে।
২০১৫ সালে সায়নীর এক্স হ্যান্ডল (সাবেক টুইটার) থেকে একটি গ্রাফিক শেয়ার হয়। ছবিটি শিবলিঙ্গের। তাতে কন্ডোম পরাচ্ছেন এক মহিলা। গ্রাফিক থেকে বোঝা যাচ্ছে, মহিলাকে এডস সচেতনতার বিজ্ঞাপনের ম্যাসকট ‘বুলাদি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর গ্রাফিকের ভিতরে লেখা, ‘বুলাদির শিবরাত্রি’। পোস্টের ক্যাপশন ছিল, ‘এর থেকে বেশি কার্যকরী হতে পারেন না ঈশ্বর।’ এই নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়। সায়নীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত হানার অভিযোগ করেন অনেকে। ওই পোস্টের প্রায় ৬ বছর পরে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে সায়নীর বিরুদ্ধে কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়। পুলিশের কাছে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘আমি শিবের ভক্ত। ১৯৯৬ সালে শিবের পুজো দেওয়ার জন্য পায়ে হেঁটে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা করেছিলাম। অভিনেত্রী সায়নী ঘোষের এই ছবিটি দেখে আমার ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত হয়েছে। আমার আর্জি, আপনারা এই বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুন সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে।’’ সেই সময় সায়নী জানিয়েছিলেন, তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক্ড’ হয়েছিল। তিনি দেখার পরে ওই পোস্টটি ডিলিট করে দেন। যদিও তাতে বিতর্ক থামেনি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্বে বার বার ওই প্রসঙ্গে বিজেপির পক্ষে আক্রমণ করা হয় আসানসোল দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী সায়নীকে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেও তাই। যাদবপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারে ওই ‘কন্ডোম বিতর্ক’ই টেনে আনছেন বিরোধীরা।
শনিবার রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বটতলা এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন সায়নী। শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে এলাকা পরিদর্শন করেন। তৃণমূলের তারকা প্রার্থীর সঙ্গে ছিলেন সোনারপুর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম, সাংগঠনিক প্রধান নজরুল আলি মণ্ডলেরা। সায়নীর কথায়, ‘‘এই ভোটটা সরাসরি দিদি বনাম মোদীর। মানুষ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উন্নয়নের জন্যই তৃণমূলকে ভোট দেবেন। আমাদের লড়াই বিভেদকামী এবং বঞ্চনাপ্রবণ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। বাংলার মানুষও সেই লড়াই করছেন।’’ সায়নীর সংযোজন, ‘‘এ রাজ্যে মোদীর গ্যারান্টি বলে কিছু নেই। শুধু দিদির গ্যারান্টি আছে।’’
উল্লেখ্য, যাদবপুর কেন্দ্রে এ বার সায়নীর বিপক্ষে বিজেপি প্রার্থী করেছে অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়কে। সিপিএম টিকিট দিয়েছে তরুণ মুখ সৃজন ভট্টাচার্যকে। সায়নীর শিবলিঙ্গে পুজো দেওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেছেন গত বিধানসভা ভোটে সোনারপুর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী নেতা রঞ্জন বৈদ্য। তাঁর কথায়, ‘‘হিন্দু ধর্মে যা পবিত্র— সেই শিবলিঙ্গকে এক সময় উনি অসম্মান করেছেন। এখন ঠেলায় পড়ে শিবের কাছে যাচ্ছেন। সায়নীকে যাঁরা শিবমন্দিরে নিয়ে গিয়েছেন, তাঁরাও অন্যায় করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy