মহুয়া মৈত্র। ছবি: ফেসবুক।
৮ ডিসেম্বর ২০২৩: লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
৪ জুন ২০২৪: ভোটে জিতে ফের সেই লোকসভাতেই যাচ্ছেন মহুয়া।
ছ’মাস আগে শীতের বিকেলে নতুন সংসদ ভবনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ফুঁসে উঠে মহুয়া বলেছিলেন, ‘‘আমার বয়স এখন ৪৯ বছর। আরও অন্তত ২৫ বছর আমি সংসদের ভিতরে-বাইরে রাজনীতি করব।’’ তার পর সুকান্তের কবিতা উদ্ধৃত করে মহুয়া বলেছিলেন, ‘‘আদিম হিংস্র মানবিকতার আমি যদি কেউ হই, স্বজন হারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই।’’ ছ’মাসের মধ্যে হিসাব মিলিয়ে দিলেন মহুয়া। ডজনখানেক বুথফেরত সমীক্ষাকে মিথ্যে প্রমাণিত করে ফের দিল্লিবাড়িতে যাচ্ছেন তৃণমূলের এই নেত্রী।
গণনা শুরুর পর মাঝে কিছুটা সময় মহুয়া সামান্য ভোটে পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু যত সময় এগিয়েছে, ততই বিজেপি প্রার্থী তথা কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির বধূ অমৃতা রায়কে টপকে যেতে থাকেন তৃণমূল প্রার্থী। দুপুরের মধ্যেই ব্যবধান হয়ে যায় ৫৩ হাজারের বেশি। তার পর তা ক্রমশ বাড়তে থাকে। জয়ের পর মহুয়া সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘মিথ্যাবাদী’ বলে আক্রমণ শানিয়েছেন। পাশাপাশিই বলেছেন, ‘‘বাংলা এবং সারা দেশের মানুষকে আমি স্যালুট জানাই। তাঁরা বিজেপির বিরুদ্ধে, ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।’’
মহুয়াকে যখন বহিষ্কার করা হয়েছিল, তখন বিজেপি ছিল একাই ৩০৩। কিন্তু বিকেল পর্যন্ত ফলাফলের যা ট্রেন্ড তাতে স্পষ্ট, ওই প্রতাপ পদ্মশিবিরের থাকছে না। বিজেপি একক ভাবেও জাদুসংখ্যা ছুঁতে পারবে কি না বিকেল সওয়া ৫টা পর্যন্ত তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
কৃষ্ণনগরে ভোট পর্বে দু’বার এসেছেন স্বয়ং মোদী। চাপ বৃদ্ধি করতে বার বার গিয়েছেন রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির নেতারাও। দলে মহুয়ার ‘বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত অনেক নেতা এমনকি কয়েক জন বিধায়কও ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, কৃষ্ণনগরে তৃণমূল প্রার্থীর জেতা মুশকিল। কৃষ্ণনগরে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন এসএম সাদি। অনেকের ধারণা ছিল, সাদি সংখ্যালঘু ভোট কেটে মহুয়ার যাত্রাভঙ্গ করতে পারেন। মাঝখান থেকে লাভবান হবে বিজেপি। তবে মহুয়া প্রথম থেকে বলে এসেছিলেন, তিনি জিতবেনই। বুথফেরত সমীক্ষা প্রকাশের পরেও ঘনিষ্ঠ মহলে মহুয়া আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়েছিলেন, যদি বাংলায় তৃণমূল একটি আসন জেতে, তা হলে সেটা হবে কৃষ্ণনগর।
মহুয়ার জয় জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি-বিরোধী পরিসরের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত রাজনৈতিক মহলের অনেকের। মহুয়া যখন ‘প্রশ্ন-ঘুষ’কাণ্ডে বিতর্কে জড়ান, গোড়ায় তৃণমূল তার পাশে দাঁড়ায়নি। বরং ‘মহুয়ার লড়াইকে তাঁর একার, তাঁকেই লড়ে নিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সীতারাম ইয়েচুরি, অধীর চৌধুরীর মতো সিপিএম, কংগ্রেস নেতারা মহুয়ার পাশে দাঁড়ানোর পর ধীরে ধীরে মৈত্রের পক্ষে মন্তব্য করা শুরু করে তৃণমূল। মহুয়াও সেই সময়ে বলে দিয়েছিলেন, তাঁর লড়াই তিনিই লড়ে নেবেন।
মহুয়া লড়লেন। মহুয়া জিতলেন। মহুয়া ফের চললেন সংসদে। এ বার সামনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-পাওয়া ‘দুর্বল’ মোদী শিবির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy