বাগনানে তৃণমূলের সভায় অরুণাভ সেন। —নিজস্ব চিত্র।
তিনি পর পর দু’বারই পরীক্ষায় সফল। তা সত্ত্বেও কি কোথাও আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরল অরুণাভ সেনের!
গত লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটের ফল দেখলে বাগনানের তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের গ্রামীণ জেলা সভাপতি অরুণাভ সেনের এ বার নিশ্চিন্তে থাকার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে কই! কর্মী-বৈঠক, প্রচারের রূপরেখা তৈরি প্রভৃতি কাজে নিজেকে তুমুল ব্যস্ত রেখেছেন তিনি। কাল, রবিবার বাগনানে উলুবেড়িয়া লোকসভায় দলীয় প্রার্থী সাজদা আহমেদের রোড শো রয়েছে। তাতেও ব্যস্ততা বেড়েছে।
দলের একটি সূত্রের খবর, গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনেক পুরনো দলীয় সদস্যকে টিকিট দেওয়া হয়নি। দলের সাংঠনিক কাঠামোতেও অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে। কয়েকজনকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ক্ষোভ যাতে লোকসভা নির্বাচনে কোনও প্রভাব ফেলতে না পারে, সেই কারণেই সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছেন বিধায়ক। কিছুটা চিন্তাতেও আছেন।
যদিও বিধায়ক নিজে কোনও ক্ষোভের কথা মানেননি। তিনি বলেন, ‘‘২০২১ সালের নির্বাচনে আমি লোকসভায় অন্য বিধানসভার থেকে সর্বোচ্চ ভোট পেলেও ২০১৯-এ আমার জয়ের ব্যবধান কমে গিয়েছিল। আমি তখন বুথ পর্যায়ে সমীক্ষা করে দেখি, স্থানীয় কিছু নেতা বা পঞ্চায়েত সদস্যের কাজকর্মের জন্য আমাদের ভোট কমেছে। সেই সব নেতাদের বিরুদ্ধে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তার সুফল ফলেছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে। আসলে রাজনীতিতে আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। তাই পরিশ্রমে ফাঁক রাখছি না।’’
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বাগনান বিধানসভায় তৃণমূলের ‘লিড’ ছিল ৪৮ হাজার। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল জিতেছিল ৩১ হাজার ভোটে। দু’টি ফলই ছিল উলুবেড়িয়া লোকসভার অধীনে থাকা সাতটি বিধানসভায় সর্বোচ্চ। বাগনানে শাসকদলের রাজনীতিতে অরুণাভর প্রভাব এবং দাপট— দুই-ই আছে। এখানে দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসেনি। অরুণাভ সুবক্তা। তরুণদের নিয়ে তাঁর একটি নিজস্ব টিম আছে। রাজনৈতিক কাজকর্মে তাঁর অন্যতম প্রধান সঙ্গী স্ত্রী মৌসুমী। তিনি বাগনান ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। তাঁর নেতৃত্বে রয়েছে মহিলা কর্মীদের একটি সুশৃঙ্খল দল। দলে অরুণাভর দাপট ও শৃঙ্খলাই এখানে ২০১৯ ও ২০২১-এ তৃণমূলকে ভাল ফল করতে সহায়তা করেছে বলে দলের নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ মনে করেন। শুধু তা-ই নয়, এই বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন ১৩টি পঞ্চায়েতেও গত বছর নির্বাচনে সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল।
এই কেন্দ্রে আছে ২৮ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট। তার সিংহভাগ তৃণমূলে আসবে বলে দলের দাবি। তা সত্ত্বেও ভোটের প্রস্তুতিতে খামতি রাখছেন না অরুণাভ। বাগনান জেলার মধ্যে বর্ধিষ্ণু শহর। এখানে দ্রুত নগরায়ণ ঘটছে। নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে কিছু সমস্যা থাকলেও এই বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধিকাংশতেই কঠিন বর্জ্যগ ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে। অধিকাংশ পরিবারে পৌঁছে গিয়েছে নলবাহিত পানীয় জল। প্রতিটি গ্রামে হয়েছে ঢালাই রাস্তা। এই উন্নয়নকে সামনে রেখে প্রচারে নেমেছে তৃণমূল।
প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির সাংগঠনিক অবস্থা শাসকদলের সঙ্গে তুলনীয় না হলেও লোকসভার প্রার্থী অরুণ উদয় পাল চৌধুরী তাঁর নাম ঘোষণা ইস্তক মাঠে নেমে পড়েছেন বীর বিক্রমে। চা-চক্র থেকে শুরু করে কর্মী-বৈঠক, পদযাত্রা করে বেড়াচ্ছেন সর্বত্র। বাগনানেও তিনি এসেছেন একাধিকবার। বাগনানের একটি তফসিলি প্রধান এলাকায় পদযাত্রায় ভিড়ও ছিল ভালই। অরুণের দাবি, ‘‘মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি।’’ যদিও দলেরই কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, মানুষের সাড়া যদি ব্যাপক না থাকে, তা হলে এই সংগঠন নিয়ে ভাল কিছু করা মুশকিল। অন্যদিকে, বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী আজাহার মল্লিকও হই হই করে মাঠে নেমে পড়েছেন। যদিও বাম-কংগ্রেসের সংগঠন বলতে তেমন কিছু নেই। বিজেপি ও বাম-কংগ্রেস জোট প্রচারে হাতিয়ার করেছে শাসকদলের ‘দুর্নীতি’কে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy