কুণাল ঘোষ এবং জিতেন্দ্র তিওয়ারি। —ফাইল চিত্র।
ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে দিয়ে তৃণমূলকে হেনস্থার অভিযোগ করছেন তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যে অভিযোগ করেছিলেন, শনিবার ভূপতিনগরে এনআইএ হানার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা আরও স্পষ্ট করে বললেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। মমতা বলেছিলেন, ‘‘বিজেপির নেতা জিতেন তিওয়ারি এনআইএর এসপির সঙ্গে বৈঠক করেছে। আমরা তার কমপ্লেন পাঠিয়েছি।’’ মমতা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘বিজেপি নেতা বলে দেবেন, ওর বাড়িতে আয়কর দফতর তল্লাশি করো, ওর বাড়িতে ইডি পাঠাও?’’ কুণাল দাবি করলেন, জিতেন্দ্র যে এনআইএর এসপি ধনরাম সিংহের বাড়িতে গিয়েছিলেন, সেই ভিডিয়ো তাঁদের কাছে আছে। মানতে না চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে দেবেন। পাল্টা বিজেপি নেতার দাবি, তৃণমূল যদি প্রমাণ করতে পারে যে এমন কোনও বৈঠক তিনি করেছেন, তা হলে রাজনীতির ময়দান থেকেই সরে যাবেন। আর এই পুরো ঘটনায় জিতেনের পাশেই রয়েছে বিজেপি। তাদের দাবি, চাপে পড়ে এনআইএ হানাকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে দাগিয়ে দিতে চেষ্টা করছে তৃণমূল। তাই এনআইএর বিরুদ্ধে ভূপতিনগরে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করছে তৃণমূল।
২০২২ সালের ভূপতিনগরের বিস্ফোরণকাণ্ডে শনিবার দুই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। তাঁদের পাঁচ দিনের হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তৃণমূলের অভিযোগ, ওই হানা বিজেপির সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক হয়েছে। ভোটের আগে কোন কোন তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করতে হবে, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করছে বিজেপি। তেমনই একটি ঘটনা ঘটে গত ২৬ মার্চ। কুণালের দাবি, ওই দিন বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি এনআইএর এসপি ধনরাম সিংহের বাড়িতে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন। সেখানে একটা সাদা রঙের প্যাকেট ধনরামের হাতে তুলে দেন জিতেন। সেই প্যাকেটে টাকা ছিল বলে সন্দেহ তৃণমূলের। এ নিয়ে পুলিশি তদন্তের দাবি করেছে তৃণমূল। পাশাপাশি, এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনেরও দ্বারস্থ হচ্ছে তারা। দলীয় সূত্রে খবর, যাচ্ছে সুপ্রিম কোর্টেও।
যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন জিতেন্দ্র। তিনি পাল্টা মানহানির মামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘আমাদের দেশের যা আইন, সেটা অনুযায়ী, আমার বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ করেছে, তা ওরা (তৃণমূল) প্রমাণ করুন। প্রমাণ করতে না পারলে ক্ষমা চাইবেন। সেটা না-করলে সাত দিনের মধ্যে আমি মানহানির মামলা করব।’’
এর আগে ৬ এপ্রিল বালুরঘাটের সভা থেকে মমতা বলেন, ‘‘আমি বাংলায় (ক্ষমতায়) আছি বলে বিজেপির খুব রাগ। যেনতেনপ্রকারেণ তৃণমূলকে হারানো ওদের উদ্দেশ্য।’’ ভূপতিনগরকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, একটা চকোলেট বোমা ফেটেছিল ২০২২ সালে। তাই নিয়ে এনআইএ রাতের বেলা গিয়েছে। মা-বোনেরা কি বসে থাকবেন?’’ এর পর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মমতা বলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে ভোটে জিতে দেখাও, নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করবে না।’’ সেখানে জিতেন এনআইএর এসপির সঙ্গে বৈঠক করেন বলে অভিযোগ করেন মমতা। তার পর রবিবার এ নিয়ে আরও স্পষ্ট করে অভিযোগ করল তৃণমূল। বিজেপির দাবি, ‘‘যে হেতু এনআইএ হানা দিচ্ছে, তখন একে রাজনৈতিক ‘অ্যাকশন’ বলে প্রমাণের চেষ্টা হচ্ছে। নিজেদের পিঠ বাঁচাচ্ছে তৃণমূল।’’ রাজ্য বিজেপির মুখ্য মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভূপতিনগরে বিস্ফোরণ হয়েছিল ২০২২ সালে। আদালতের নির্দেশে তার তদন্ত চলছে। এখন তৃণমূল কোথায় সাদা প্যাকেট, হলুদ কাগজ— এমন নানা তত্ত্ব আনবে। যা ইচ্ছে করুক। এতে বিস্ফোরণের ঘটনাটা তো মিথ্যা হয়ে যায় না।’’ আর জিতেন বলছেন, ‘‘আমি জর্জ বুশের সঙ্গে মিটিং করেছি, এটাই যে বলেনি ভাল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাকে একটা দুর্ঘটনার মামলায় (কম্বলকাণ্ড) ২২ দিন জেল খাটিয়েছিলেন। আর আমরা কোনও ষড়যন্ত্র করি না। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে এত হালকা কথা বলা উচিত নয়।’’ সব মিলিয়ে, ভূপতিনগরকাণ্ড নিয়ে লোকসভা ভোটমুখী বাংলার রাজনৈতিক মহল উত্তাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy