Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

চরণে ভারতরত্ন দিয়ে মন জিতেছেন মোদী 

পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বাগপত জেলার গ্রামের নাম সারুরপুর কালান। গ্রামের নাম বারোলি। নাম বারোট। বিস্তীর্ণ আখ খেতের প্রসাদে গড়ে ওঠা এখানকার সুপ্রাচীন জনপদে আজও চৌধরি চরণ সিংহ ফিরে আসেন স্বপ্নে, কথকতায় এবং ভোটেও।

PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
বাগপত শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:০৭
Share: Save:

এই গ্রামের রাতের স্বপ্নেও আসেন চৌধরি চরণ সিংহ। মাঝে কেয়ারি করা হুঁকো রেখে চার খাটিয়া জুড়ে সন্ধ্যের চতুষ্কোণ আড্ডায় নিত্য ওঠে ‘চৌ সাব’-এর গল্প। কৃষককে কী ভাবে তিনি জমির মালিকানা দিয়েছিলেন, তাঁর নীতি ও ইমানদারি নিয়ে কতই না অতিকথা। এই গ্রামে চৈত্রের দুপুর আমোদিত হয়ে থাকে আখ থেকে গুড় বানানোর অলৌকিক গন্ধে। ছোট ছোট মাটির বাড়ি থেকে ভেসে আসা সেই গন্ধ আর গলগল করে কালো ধোঁয়া।

পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বাগপত জেলার গ্রামের নাম সারুরপুর কালান। গ্রামের নাম বারোলি। নাম বারোট। বিস্তীর্ণ আখ খেতের প্রসাদে গড়ে ওঠা এখানকার সুপ্রাচীন জনপদে আজও চৌধরি চরণ সিংহ ফিরে আসেন স্বপ্নে, কথকতায় এবং ভোটেও।

‘‘তিরিশ বছর আগেই যে সম্মান দেওয়া উচিত ছিল চৌ সাবকে, এত দিনে মোদীজি তা দিলেন। শুধু জয়ন্ত চৌধরি কেন, সব গ্রামবাসীই ঋণী হয়ে রইল তাঁর কাছে। এটাই তো চৌ সাবের কর্মভূমি। জানেন, সে দিন আমরা কেউ ঘুমোতে পারিনি আনন্দে। সবাই রাস্তায় নেমে মিঠাই দিয়েছি পরস্পরকে’’, এক খাটিয়া-আড্ডায় বসে বলছেন ওমপ্রকাশ সুবেদার। এক সময় সুবেদার ছিলেন, এখন অবসর জীবনে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে বসে জনসংযোগ করেন এই দীর্ঘকায় শক্ত কাঠামোর মানুষটি। পদটি গেলেও পদবির মতো পেশাটা এখনও লেজুড় হিসেবে থেকে গিয়েছে যাঁর।

না শুনলে বিশ্বাস হয় না চৌধরি চরণ সিংহকে নিয়ে বাগপতের জাঠ বলয়ের এই আবেগকে। সুবেদার বলছেন, ‘‘অন্য রাজ্যের কৃষকেরা এসে এখানকার মাটিকে প্রণাম করে যায়। চৌ সাবের কর্মভূমি বলেই না! গর্বে আমাদের বুক ভরে যায়। কাজের সময়ে যখন বদলি হয়েছিলাম, মহারাষ্ট্রের সবাই আমাকে চিনত চৌধরি চরণ সিংহের জেলার লোক হিসাবে।’’ নরেন্দ্র মোদী সুকৌশলে এই আবেগকে জিতে নিয়েছেন। এসপি-র কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছেন জাঠদের দল তথা চরণের নাতি জয়ন্ত চৌধরির আরএলডি-কে। এ কথা বুঝতে ভোটপণ্ডিত হওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না যে অখিলেশ সিংহ যাদব এই গ্রামগুলিতে সামান্য প্রতিযোগিতাও দিতে পারবেন না আর। কংগ্রেসের কথা উঠছেই না। যেখানে বসে আছি, সেই সারুরপুরের রাস্তা দিয়ে ‘ভারত জোড়ো’র সময় হেঁটে গিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। আড্ডার মধ্যে থেকে কৃষক ইন্দর চৌধরি বলছেন, ‘‘রাহুল মানুষ ভাল, কিন্তু ওকে কেউ ভোট দেবে না পশ্চিমাঞ্চলে। কংগ্রেস চরণ সিংহকে কী দিয়েছে? তা ছাড়া, মোদীজিই তো সরকারে আসবেন। আমরা কেন্দ্রের বিরোধী দল হয়ে অনেক দিন থেকেছি, লাভ হয়নি। বরং অজিত সিংহ কেন্দ্রের মন্ত্রী হিসেবে ৪৫টি চিনির কল বসিয়েছিলেন। যার ফল কমবেশি আমরা এখনও পাই।’’

কিন্তু আবেগে কি শুধু চিঁড়ে ভেজে? আখ নিংড়ে যে চিনি তৈরি হয়, যা হাতবদলে প্যাকেটজাত চলে যায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বড় পুঁজিপতি সংস্থার হাতে, তার দাম মিলছে কোথায় কৃষকদের? বারোট থেকে বারোলি যাওয়ার পথে জাতীয় সড়কের ডান হাতে চিনির একটি কল পড়ে। তার সামনে আখের ডাঁই পেটে নিয়ে ম্যাটাডোর ভ্যান, ট্রলির দীর্ঘ হাপিত্যেশ লাইন। উৎপাদনের তুলনায়, চিনি কল অনেক কম, গুদামজাত করার পরিকাঠামো নেই, যা আছে তার বেসরকারি মালিকানা বেশি। সরকারি মিলগুলি তিরিশ বছরের পুরনো, দম কমে আসছে। এমএসপি বেড়ে দশ বছরে ৩২০ টাকা প্রতি কুইন্টাল থেকে ৩৭০ টাকা হয়েছে। সাড়ে চারশোর কমে দরে পোষাচ্ছে না কৃষকদের। কারণ উৎপাদনের খরচ দশ বছরে লাফিয়ে বেড়েছে।

তবু চরণ সিংহের আবেগকেই বাজি রেখে আরএলডি-কে সমর্থন করা কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে ভোট জয়ের পথে এগোচ্ছে বিজেপি, পশ্চিমাঞ্চলে। দীর্ঘ দিন উত্তরপ্রদেশে যোজনা কমিশনে কাজ করেছেন সুধীর পানওয়ার, কৃষিবিদ্যার অধ্যাপকও বটে। এখন সমাজবাদী পার্টির অন্যতম ‘চিন্তক পরামর্শদাতা’। বলছেন, ‘‘জাঠদের সব সময়ে দ্বৈত সত্তা। এক সত্তা তাঁদের পেশার সঙ্গে যুক্ত অর্থাৎ কৃষকসত্তা। অন্যটি হল জাতিসত্তা, যা চৌধরি চরণ সিংহের ঐতিহ্যগত। যা বহন করে এসেছেন অজিত সিংহ, জয়ন্ত চৌধরি। মোদী এই জাতির পরিচয়কে ভারতরত্ন দিয়ে দারুণ কাজে লাগিয়েছেন।’’

বড়ই সত্যি কথা। গ্রামগুলির মধ্যে থামতে থামতে এগোলে এই দুই সত্তা স্পষ্ট হয়ে যায়, এবং এটাও বোঝা যায়, বিজেপির নীতিকে ভালবেসে এ বার জাঠ মন কিন্তু তাদের দিকে নেই। গত দশ বছরে তাদের কৃষিজীবনে কোনও সদর্থক ভূমিকা নেই কেন্দ্রীয় সরকারের। কিন্তু হরিয়ানা বা পঞ্জাবের কৃষকদের মতো এই পশ্চিমাঞ্চল, ট্র্যাক্টর নিয়ে আপাতত রাস্তায় বসে পড়ছে না। তারা ভরসা রাখতে চাইছে মোদীর আগামী মন্ত্রিসভায় জাঠ প্রতিনিধিত্বের। আর জাঠ মন্ত্রী থাকলে চিনিকলগুলি উপুড়হস্ত হতে বাধ্য হবে, তাদের বকেয়া মেটাতে।

এই স্বপ্নকে সামনে রেখেই এ বারে ভোট দিতে যাবেন বাগপত, বিজনৌরের জাঠ কৃষকেরা।

(চলবে)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy