Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

মেরুকরণ দৃশ্যত নেই, অর্থনীতির ছায়া পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, জাঠ নেতা চৌধরি চরণ সিংহকে ভারতরত্ন দিয়ে জাঠ বলয়ের মন কিছুটা হলেও জয় করেছেন নরেন্দ্র মোদী। যার জেরে আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধরিও নান্যপায় হয়ে সমর্থন করেন বিজেপিকেই।

yogi Adityanath

যোগী আদিত্যনাথ। —ফাইল চিত্র।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৬:৩৯
Share: Save:

গত দু’টি লোকসভা নির্বাচনেই (২০১৪ এবং ২০১৯) পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ভোটভাষ্যের কেন্দ্রে ছিল সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ। স্থানীয় রাজনৈতিক মহল বলছে, আজ পশ্চিমাঞ্চলের ৮টি আসনের ভোটে সাম্প্রদায়িক বা ভারত-পাকিস্তানের কোনও জিগির তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অনুপস্থিত। কিন্তু এ বারে চোরাস্রোতের খেলাটা বেশি, উচ্চকিত সংলাপের তুলনায়।

২০১৩ সালে মুজফ্ফ‌রনগরের সাম্প্রদায়িক অশান্তির দীর্ঘ ছায়া পড়েছিল ’১৪ সালের লোকসভা ভোটে। বিভিন্ন জাতের হিন্দু ভোটকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে সফল হন অমিত শাহ। পাঁচ বছর পর পুলওয়ামা কাণ্ডের জের উত্তরপ্রদেশেও প্রবল মেরুকরণ ঘটায়। এ বারে তা দৃশ্যত অনুপস্থিত। ভাষ্যে প্রধান জায়গা করে নিয়েছে, কৃষকদের সমস্যা, চিনি কলে পড়ে থাকা এক বছরের বকেয়া মূল্য, মূল্যবৃদ্ধির ফলে ক্রমশ ব্যয়বহুল হয়ে পড়া কৃষি কর্ম, কৃষি মজুরের সঙ্গে কৃষকদের দূরত্ব, বেকারত্ব, বিদ্যুৎ এবং পরিকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, শিক্ষার অব্যবস্থার মতো বিষয়গুলি যা দেশের মূলস্রোতের সমস্যাও বটে। রামমন্দির নির্মাণের আবেগের তুলনায় এ বারে এই বিষয়গুলিই যেন বার বার উঠে আসছে গ্রামের মানুষদের কথাবার্তায়।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, জাঠ নেতা চৌধরি চরণ সিংহকে ভারতরত্ন দিয়ে জাঠ বলয়ের মন কিছুটা হলেও জয় করেছেন নরেন্দ্র মোদী। যার জেরে আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধরিও নান্যপায় হয়ে সমর্থন করেন বিজেপিকেই। যদিও একাংশের বক্তব্য, জয়ন্তের উপরেও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে দিয়ে চাপ তৈরির রাজনীতি ছিল। তবে তা বাইরে না এনে, তাঁকে বিজেপির ‘বাহন’ হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেওয়া হয়েছে।

আবার বাগপত থেকে সহারণপুরে— বিভিন্ন গ্রামের মুখিয়া, প্রধান, সুবেদারদের বক্তব্য, আরএলডি বেশির ভাগ সময়েই কেন্দ্র-বিরোধী রাজনীতি করেছে, যার ফলে উন্নয়ন হয়নি এলাকায়। এ বারে বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ায় কেন্দ্রে মন্ত্রিত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জয়ন্ত চৌধরির। কারণ, সাধারণ ভাবে এটাই মানুষের ধারণা যে মোদী আবার সরকার গড়বেন। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে থাকলে এখানকার আখ বলয়ে যদি দশ বা বিশটা বড় চিনি কল খোলা যায়, যে কলগুলি বকেয়া টাকা আটকে রেখেছে, তাদের উপর চাপ তৈরি করা যায়, সেটুকুই লাভ।

সাধারণ ভাবে রাজ্য রাজনীতিতে বিএসপি নেতা মায়াবতী গুরুত্বহীন হয়ে গেলেও পশ্চিম উত্তরাঞ্চলের কিছু আসনে হিসাব বদলানোর ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা থাকছে বলেই মনে করা হচ্ছে। মুজফ্ফ‌রনগরের বহুচর্চিত আসনটিতে লড়ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সঞ্জীব বালিয়ান, এসপি-র হরেন্দ্র মালিকের বিরুদ্ধে। এখানে বিএসপি কিছুটা অপ্রত্যাশিতভাবে দাঁড় করিয়েছে দারা সিংহ প্রজাপতিকে। হিন্দু ক্ষত্রিয় বর্ণের এই প্রজাপতি সম্প্রদায়ের বিজেপির স্থানীয় ভোট ব্যাঙ্কে একটি বড় প্রভাব রয়েছে। অনেকেই ভেবেছিলেন, মায়াবতী এখানে মুসলমান প্রার্থী দিয়ে বিজেপিকে সুবিধা করে দেবেন। তাঁর দলিত ভোট সহজেই চলে যাবে বিজেপির দিকে। কিন্তু তা হয়নি। বালিয়ানের কথায়, “মায়াবতী আসলে এখানে এসপি-কেই সুবিধা করে দিচ্ছেন। যে ভাবে তিনি ঘুঁটি সাজাচ্ছেন, তাতে এটাই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

তবে সর্বত্র একই রকম নয় ‘মায়ার খেলা’! সহারণপুরে বিএসপি মুসলমান প্রার্থী দিয়ে (মজিদ আলি) সুবিধা করে দিয়েছে বিজেপিকেই। এই আসনে কংগ্রেস এবং এসপি জোট, দাঁড় করিয়েছে কুখ্যাত কংগ্রেস নেতা ইমরান মাসুদকে, যিনি মোদী সম্পর্কে কটু বাক্য বলে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন একদা। । মজিদের কাকা ন’বারের সাংসদ রশিদ মাসুদের উপর হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। মজিদের লক্ষ্য সেই ভোট ভিতও। বিজেপি এই কেন্দ্রে দাঁড় করিয়েছে রাঘব লখনপাল বর্মাকে, যিনি ২০১৯-এ এখান থেকেই দাঁড়িয়ে হেরে
গিয়েছিলেন। এ বারেও তাঁর পরাজয়ের সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু মুসলমান ভোট সংগঠিত বা একত্রিত হওয়ার সুযোগ কম সহারণপুরে। কারণ, বিএসপি মুসলমান প্রার্থী দাঁড় করিয়ে ‘ইন্ডিয়া’র ভোট কাটবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy