Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

জনতা উত্তাল কমলের প্রচারে, অপেক্ষা বিজয়ের

২০১৮-য় কমল রাজনৈতিক দল গড়েছিলেন— ‘মক্কাল নিধি মইয়াম’। শুরুটা করেছিলেন ডিএমকে, এডিএমকে, বিজেপি, কংগ্রেসের চিরাচরিত রাজনীতির বিরোধিতায় নতুন রাজনীতির সন্ধান দিতে।

কমল হাসন।

কমল হাসন। —ফাইল চিত্র ।

প্রেমাংশু চৌধুরী
চেন্নাই শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৫৩
Share: Save:

বাঁ হাতে মাইক্রোফোন ধরা। ডান হাত নাড়ছেন ভিড়ের দিকে। দাড়ি রাখছেন অনেক দিন। মাঝে মাঝে মুচকি হাসি। এই হাসিটা দেখা যেত ‘এক দুজে কে লিয়ে’ নায়কের মোটা গোঁফের ফাঁক দিয়ে। বা ‘সাগর’-এর ব্যর্থ প্রেমিকের মুখে। তার অনেক পরে ‘চাচি চারশো বিশ’-এর প্রস্থেটিক মেকআপের আড়াল থেকেও।

তিনি ভোটে প্রার্থী নন। প্রচার করছেন ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের ডিএমকে, কংগ্রেস, সিপিএম প্রার্থীদের হয়ে। তাঁকে দেখলেই উত্তাল জনতা। ভরাট গলায় তিনি গুজরাত মডেলের সঙ্গে দ্রাবিড় মডেলের তুলনা করছেন। বিজেপি-আরএসএসকে বিঁধছেন। জিএসটি-র সমালোচনা করছেন। প্রচারের ভ্যানের মাথা থেকে তাঁর বক্তৃতায় হাততালির থেকে ভক্তদের সিটি বেশি শোনা যাচ্ছে। চলেছেন কমল হাসন।

চেন্নাইয়ের আলওয়ারপেটে কমল হাসনের রাজনৈতিক দল ‘মক্কাল নিধি মইয়াম’-এর সদর দফতর। দলের রাজ্য সম্পাদক মুরলী আপ্পাস আবার ‘রোজা’, ‘থলপতি’—র মতো ছবিতে মণিরত্নমের সহকারী পরিচালক। নিজেও ছবি পরিচালনা করেছেন। রজনীকান্ত, কমল হাসনরা এখন ছবি পিছু কত কোটি টাকা করে নেন? প্রশ্ন শুনে হাসতে হাসতে মুরলী বলেন, “দু’জনেই অসাধারণ শিল্পী। আমি নায়ক হিসেবে রজনীর অন্ধভক্ত। মানুষ হিসেবে কমলের ভক্ত। সিনেমা তৈরির এমন কোনও কাজ নেই যেটা কমল জানে না। বুদ্ধিজীবী হিসেবে টিভি চ্যানেলের বিতর্কে ডাক পড়ত। আমিও কমল হাসনের মতো ডানপন্থা, বামপন্থার বদলে কেন্দ্রবাদে বিশ্বাসী। এক দিন কমল ফোন করল। ওঁর দলে যোগ দিতে বলল। চলে এলাম।”

শিবাজি গণেশন থেকে এম জি রামচন্দ্রন, জয়ললিতা থেকে ক্যাপ্টেন বিজয়কান্ত—তামিল রাজনীতিতে রূপোলি পর্দার নায়ক-নায়িকা, পরিচালক, চিত্রনাট্যকারদের ছড়ি ঘোরানোর দীর্ঘ ইতিহাস। আন্নাদুরাই থেকে করুণানিধিও সিনেমার জগৎ থেকেই রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন। কোনও রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর তালিকায় পাঁচ জন সিনেমার দুনিয়ার—এমন নজির ভূভারতে নেই। কিন্তু অধুনা সেই আকাশে তারাদের দেখা নেই। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে করুণানিধি, জয়ললিতা, বিজয়কান্ত কেউ নেই। তাঁদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন কমল হাসন। যাঁর নাম শুনে হিন্দি বলয়ের মানুষ মুসলিম ভাবলেও আসলে তিনি আয়েঙ্গার ব্রাহ্মণ-সন্তান। এ বারের তামিলনাড়ুর ভোটের ময়দানে তিনিই একমাত্র রূপোলি পর্দার মেগাস্টার।

২০১৮-য় কমল রাজনৈতিক দল গড়েছিলেন— ‘মক্কাল নিধি মইয়াম’। শুরুটা করেছিলেন ডিএমকে, এডিএমকে, বিজেপি, কংগ্রেসের চিরাচরিত রাজনীতির বিরোধিতায় নতুন রাজনীতির সন্ধান দিতে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিশেষ সাফল্য মেলেনি। তিন বছর আগে বিধানসভায় নিজে কোয়ম্বত্তূর থেকে লড়েও জিততে পারেনি। এ বার তিনি এম কে স্ট্যালিন, রাহুল গান্ধীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তাঁর দল প্রার্থী দেয়নি। সমঝোতা হয়েছে, তিনি এই নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া’র হয়ে তামিলনাড়ুর ৩৯টি লোকসভা কেন্দ্রে প্রচার করবেন। আগামী বছর তাঁকে ‘ইন্ডিয়া’ রাজ্যসভায় পাঠাবে। তার আগে কমলের নব্বইয়ের দশকের ব্লকব্লাস্টার ‘ইন্ডিয়ান’ ছবির দু’দুখানা সিক্যুয়েল মুক্তি পাবে। সত্তর বছর বয়সে পর্দায় নতুন করে দেশের শত্রুদের নিকেশ করে সংসদে পা রাখবেন কমল। সিনেমার ছক মেনেই তাঁর সংসদে প্রবেশের চিত্রনাট্য সাজানো।

রজনীকান্ত অনেক বার নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করলেও শেষ পর্যন্ত রাজনীতিতে নামেননি। কমল হাসনের পরে তামিল রাজনীতির আকাশ ফের তারকা-শূন্য হয়ে পড়বে?

আজ্ঞে না। চেন্নাইয়ের ডিএমকে, এডিএমকে, বিজেপি, কংগ্রেস—সব রাজনৈতিক সদর দফতরে ঢুঁ মেরে বোঝা যায়, সবাই দম বন্ধ করে ‘থলপতি’ বিজয়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। তামিল ছবির জগতের সুপারস্টার বিজয় ভক্তদের কাছে দেবতার মতো। তাই তাঁর নামের আগে ‘থলপতি’ বা সেনানায়কের তকমা। লোকসভা ভোটের ঠিক দু’মাস আগে বিজয় নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা করেছেন— ‘তামিঝাগা ভেতরি কাজ়াগাম’। রাজনৈতিক দল তৈরির আগে তাঁর ফ্যান ক্লাবের সদস্যরাই পঞ্চায়েত নির্বাচনে বহু আসনে জিতে এসেছেন। বিজয় ভক্তদের চিঠি লিখে জানিয়েছেন, হাতে থাকা একটি ছবির কাজ শেষ করে পুরোপুরি রাজনীতিতে নামবেন তিনি। তাঁর পাখির চোখ ২০২৬-এর তামিলনাড়ুর বিধানসভা ভোট। অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রীর আসন।

তারকা না হলেও সিনেমার জগত থেকে আসা এস সীমান-ও ভোটে সাড়া ফেলেছেন। তাঁর দল ‘নাম তামিলার কাটচি’ উগ্র জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। তিনি একই সঙ্গে ডিএমকে, এডিএমকে, বিজেপি, কংগ্রেস সবাইকে নিশানা করছেন। ডিএমকে-এডিএমকে নেতারা মনে করছেন, বিজয় রাজনীতিতে নামার পরে সীমান তাঁর সঙ্গে হাত মেলাতে পারেন।

বিজয়ের রাজনীতিতে উত্তরণ কি তামিলনাড়ুতে বিজেপির প্রবেশের চেষ্টায় বাধা দেবে? বিজয় বার্তা দিয়েছেন, তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে। ধর্মের নামে বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে। চেন্নাইয়ের ফিল্ম স্টুডিয়োয় বিজয়ের সঙ্গে কাজ করে আসা মুরলী আপ্পাস তর্ক। তাঁর বক্তব্য, “বিজেপি কাকে কখন পিছন থেকে মদত দিচ্ছে, বোঝা মুশকিল। আসলে বিজেপির মুখ একটা হলেও মুখোশ অনেক। বিজয় ভবিষ্যতের এম জি রামচন্দ্রন হয়ে উঠতে পারবেন কি না, সময় বলবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy