—প্রতীকী ছবি।
দু’দলের উপরের তলার নেতাদের গলাগলি যত দিন থাকবে, বিজেডিকে সরিয়ে তাঁরা ওড়িশার ক্ষমতায় আসতে পারবেন না— আক্ষেপ বিজেপির এসসি মোর্চার এক নেতার। “আমাদের রাজ্য নেতাদের কেবল তিড়িং তিড়িং করে নাচাই সার। বলতে পারেন, সেই কাজটাই দিল্লির নেতারা তাঁদের দিয়েছেন,” বলেন সেই গেরুয়া নেতা।
পুরীর বিজেপি বিধায়ক জয়ন্ত ষড়ঙ্গীর দাবি, পাঁচ বার জিতে আসা বিজেডি সরকারকে একটি ধাক্কাতেই ফেলে দেওয়া সম্ভব। তার জন্য শুধু একটা কাজ করতে হবে। কিন্তু সেটা যে করা হবে না, বিলক্ষণ জানেন তিনি। কী সেই কাজ? জয়ন্ত বলেন, “ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ওড়িশায় এসে আবেদন করতে হবে— নবীনবাবুকে আর ভোট দেবেন না। তাঁর দল ও প্রশাসন ঘোর দুর্নীতি করে চলেছে। এ বার বিজেপি সরকারকে সুযোগ দিন ওড়িশায়।”
মোদী সে কথা বলবেন না?
জবাবে জয়ন্তের পাল্টা প্রশ্ন, “মোদীজি এ বারেও কী করলেন দেখেননি?”
কী করলেন?
জয়ন্ত বলেন, “ওড়িশায় দুটো জনসভা করলেন। দু’জায়গাতেই বললেন, নবীনবাবু অচ্ছা আদমি। অচ্ছা সিএম। ওড়িশা কে লিয়ে বহোত কুছ কর রহা হ্যায়!” জয়ন্তের প্রশ্ন, “এর পরে আমরা কোন মুখে বলি, শঙ্খে নয় ভোটটা পদ্মে দিন?”
এ বার জোট বেঁধে ভোটে লড়ার বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছিল বিজেডি ও বিজেপি। পরে তা বাস্তবায়িত হয়নি। বিজেডির পক্ষে আলোচনার দায়িত্বে থাকা নেতা কার্তিক পান্ডিয়ান দাবি করেছেন, ভোটের বিষয়টি গৌণ। ২০৩৬-এ ওড়িশার শতবর্ষ নজরে রেখে তাঁরা কেন্দ্রের শাসক দলের সঙ্গে জোট করতে চেয়েছিলেন। এই জোট রাজ্যের উন্নয়নের গতিকে বাড়াত বলে মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক মনে করেন। তবে বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ মনে করেন, ইডি-সিবিআই-কে আটকাতেই জোট করতে চেয়েছিলেন নবীনবাবু। তিনি অবশ্যই জানেন, দলের নেতা ও প্রশাসনিক কর্তারা এত সরকারি প্রকল্পে কী বিপুল পরিমাণ দুর্নীতি করেছেন।
বিজেপির সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সমীর মহান্তির সাফ কথা, বিজেডি সরকারের দুর্নীতির শেষ নেই। স্বাস্থ্য, আবাসন ও জল প্রকল্পে বহু কোটির দুর্নীতি করেছে নবীন সরকার।
অন্য রাজ্যের মতো ইডি-সিবিআই তা হলে হানা দিচ্ছে না কেন? বিজেডি-বিজেপি মধুর সম্পর্কের কারণে?
বিজেডির সঙ্গে কেন্দ্রে বা রাজ্যে কোথাও বোঝাপড়া নেই বলে দাবি সমীর মহান্তির। তাঁর কথায়, “এ সব ভুল প্রচার। আজ আসছে না, কাল আসবে ইডি-সিবিআই। শুধু তো আর্থিক দুর্নীতি নয়, পশ্চিমবঙ্গের মতো ওড়িশাতেও আবাসন, সড়ক, ঘরে ঘরে পানীয় জল-এর মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম পাল্টে রাজ্যের প্রকল্প বলে চালিয়েছে বিজেডি সরকার। মন্দির-গির্জা-মসজিদ সংস্কারেও ঢালাও টাকা লুট হয়েছে। এ সব মোদীজি ছেড়ে দেবেন?”
তা হলে মোদী ওড়িশায় এসে নবীনবাবুর প্রশংসা করে যাচ্ছেন কেন?
নিচু হল কলকাতার বিশিষ্ট সাময়িকী-ব্যবসায়ী পাতিরাম মহান্তির উত্তরপুরুষ, বর্ষীয়ান বিজেপি নেতার কণ্ঠস্বর। বললেন, “দেখুন, জাতীয় দল হিসাবে আমাদের কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রাজ্যসভায় বিজেডির সহযোগিতা আমাদের দরকার। কিন্তু আপনাকে বলে দিচ্ছি, এ বার মোদীজি ৪০০ আসন নিয়ে যেমন ফিরবেন, রাজ্যসভায়ও সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবে বিজেপি। নবীনবাবুর প্রয়োজন ফুরোবে। ইডি-সিবিআই-এনআইএ, সব্বাই ঢুকে পড়বে বিজেডির পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির তদন্তে।”
‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বিজেডি-র সঙ্গে জোট করতে চেয়ে বিজেপি নেতৃত্ব আলোচনা করলেন কী ভাবে?
সমীরবাবুর জবাব, “বিজেপির ওড়িশা শাখার আপত্তিতেই তো জোটটা হল না। বন্ধু বাড়াতে জোট করতে চেয়েছিলেন আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁদের নির্দেশে আমরা যেমন আলোচনা চালাচ্ছিলাম, একই সঙ্গে নেতৃত্বকে বুঝিয়ে গিয়েছি, বিজেপিকে দুর্বল করাটাই নবীনবাবুর কৌশল। শেষ পর্যন্ত তাঁদের বোঝাতে পেরেছি, একলা লড়েই লাভ বিজেপির।”
২০১৯-এর বিধানসভা নির্বাচনে ওড়িশার ১৪৭টি আসনের মধ্যে ১১২টি পেয়েছিল নবীনবাবুর দল। বিজেপির ঝুলিতে ছিল ২৩টি, কংগ্রেসের ৯টি।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অদূরে নিজের বাড়ির তিন তলার ঘরে তাকিয়া জড়িয়ে আধশোয়া দীর্ঘদেহী বর্ষীয়ান রামচন্দ্রদাস দইতাপতি। খড়কে কাঠির অমোঘ নিশানায় একটি সুপুরির কুঁচি শ্বাদন্তের ডান দিক থেকে বার করে থুক্ করে ফেলে দিয়ে বলে উঠলেন— “কংগ্রেস ৫৪ থেকে ৫৬টা আসন পেয়ে যেত বিজেপি ও বিজেডি-র জোটটা হলে। কারণ, ওই দুই পার্টির নকল লড়াইয়ে কংগ্রেস এখন তিন নম্বরে ঠেকে অস্তিত্বের সঙ্কটে। জোটটা হলে প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠত কংগ্রেস। এই বার বুঝলেন, কেন তারা জোটের নামে আনুষ্ঠানিক বিবাহটা করল না? এয়ো না সেজে ‘লিভ টুগেদার’-এ যে ফায়দা বেশি বিজেপির।”
ঘিয়ে ভাজা প্রকাণ্ড একটি খাজা হাতে ধরিয়ে দিয়ে পাণ্ডা-শিরোমণি বলে চলেন, “ওড়িশার ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সঙ্গে বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি খাপ খায় না। যতই বলুক, রামমন্দির নিয়ে ওড়িশাবাসীর মাথাব্যথা নেই। তাঁদের জগন্নাথ স্বামী রয়েছেন। ওড়িশার রাম অন্তরের প্রভু, রাজনীতির রাম নন।”
ওড়িশা প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি সনৎ দাস মেনে নিলেন, “ওদের জোট হলে অবশ্যই লাভবান হত কংগ্রেস। আরও কিছু আসন আসত। কিন্তু বিজেপির দ্বিচারিতা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। দেখা গেল, দুর্নীতিগ্রস্তের সঙ্গে জোট করতে তাদের আপত্তি নেই।” সনৎবাবুর দাবি, এ বার কংগ্রেস তাই ভাল সাড়া পাচ্ছে। তাঁর কথায়, “সরকার গড়তে পারব এমন অবাস্তব দাবি জানাচ্ছি না, তবে আসন অনেক বাড়বে বলেই মনে করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy